আত্মহত্যা নয়, নাচোল থানায় পুলিশ মাহফুজকে হত্যা করেছে- পরিবারের দাবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার টয়লেটে রিমান্ডের আসামী মাহফুজ আলমের ‘মৃত্যু’কে পুলিশের হত্যাকান্ড বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছ। মাহফুজের দু’ভাই অভিযোগ করেছেন পুলিশকে ঘুষের টাকা না দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এদিকে, এঘটনায় মূখ্য বিচারিক আদালত থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকৃত ঘটনার প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার জননী ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসক নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার জগদিসপুর গ্রামের মাহফুজ আলমের করা অস্ত্রপচারে নাহিদা খাতুন নামের এক স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হয় গত ১৯ জুলাই। ঘটনায় ওই ছাত্রী পিতার দায়ের করা হত্যা মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার মাহফুজকে দু’দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বুধবার দুপুরে নাচোল থানার হাজতখানার টয়লেটে রিমান্ডে থাকা মাহফুজের ‘মৃত্যু’ হয়।
‘দুপুর সোয়া ১টার পর হাজতখানার ভেতরের টয়েলেটে মাহফুজ তার ফুলপ্যান্ট খুলে তা দিয়ে দরজার বিমের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে’ পুলিশ এমনটা বললেও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে মাহফুজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের দাবি করা ঘুষের টাকা না দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করেছেন মাহফুজের দু’ ভাই।
মাহফুজের ভাই শাহীন আলম সাংবাদিকদের কাছে এঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে বলেন, ‘ আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারেনা। পুলিশ মেরে ফেলেছে। এখন নাটক করছে’। মাহফুজের আরেক ভাই মো. জুলহাস পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলেন। জুলহাস বলেন, ‘ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাহফুজকে রিমান্ডে নিয়ে আসালে রাতে আমি থানায় তার (মাহফুজের ) সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখানে পুলিশ ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। আমি রাতেই নির্যাতন না করার অনুরোধ করে ২০ হাজার টাকা প্রদান করি’। তিনি বলেন, ‘ পরের দিন বুধবার সকাল দশটার দিকে আমি থানায় গিয়ে মাহফুজের সঙ্গে দেখা করেছি। সে তখন স্বাভাবিক ছিল। কথা বার্তাও ঠিকমত বলেছে। তাকে খাবার জন্য ফলও দিয়ে এসেছি। অথচ দুপুর দুটার দিকে থানা থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয় আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে’। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাই আত্মহত্যা করেনি। ঘুষের টাকা না পেয়ে পুলিশ তাকে হত্যা করেছে’। তবে জুলহাস ঘুষের ২০ হাজার টাকা কাকে দিয়েছেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘সিভিল পোশাকে থানায় থাকা একজন দারোগা টাকাটা নিয়েছেন’।
এ ব্যাপারে নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ আমরা কোন ঘুষ চাইনি। এটি সম্পুর্ণ মিথ্যে অভিযোগ’।
এদিকে, মাহফুজের ‘মৃত্যু’র ঘটনায় বুধবার বিকেলে পুলিশ নাচোল থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করে এবং লাশ ময়না তদন্তের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু মাহফুজ রিমান্ডের আসামী সেহেতু বুধবারই পুলিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জের মূখ্য বিচারিক আদালত (গ অঞ্চল) এর বিচারক তরিকুল ইসলামের আদালতে ‘আসামী মারা গেছে’ মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামী মৃত্যু প্রকৃত কারণ লিখিতভাবে আদালতে জানানোর জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে সিভিল সার্জনকেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে তার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. কাজি শামীম হোসেন বলেন, ‘আদালতের নিদের্শনাটি আমরা পেয়েছি এবং ময়না তদন্ত রির্পোটও আদালতে জমা দিয়েছি’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ এটি একটি আত্মহত্যায়। ঘটনার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, এখন যেহেতু বিচার বিভাগ বিষয়টি তদারকি করছে একটি নির্দেশনা দিয়েছে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে’।
উল্লেখ্য, নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার জগদিসপুরের মাহফুজ আলম নাচোল নিজেকে ‘ডা. মাসুদ রানা’ পরিচয় দিয়ে ক্লিনিকে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৭-০৭-১৭

,