নাচোলে আটক জেএমবি’র সূত্রধরে গোদাগাড়ির ‘জঙ্গি আস্তানায়’ পুলিশের হানা

জঙ্গি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বুধবার দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার গুঠইল গ্রামে জেহাদি বইসহ আটক চার জেএমবি’র তথ্যের ভিত্তিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ শুরু করার পর তা হস্তান্তর করা হয় রাজশাহী পুলিশের কাছে। শুক্রবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফি-এ এই তথ্য জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম। বুধবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত দু’দিনে পুলিশের এই বিশেষ অভিযানে মোট ৭ জন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার হয়েছে সাড়ে ৫২ কেজি পাওয়ার জেল, সাড়ে ৪ কেজি গান পাউডার ও ২২ টি জেহাদি বই। আটক ৭ জেএমবি সদস্যকে শুক্রবার বিকেলে আদালতে সোপার্দ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম অভিযানের দু’দিনের মাথায় শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। ব্রিফিং-এ তিনি জানান,  গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার গুঠইল গ্রামের তাইফুর রহমানের ছেলে হারুন অর রশিদ (২৫) কে জেহাদি বইসহ প্রথমে আটক করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে একই গ্রামের মোস্তাফার ছেলে কামাল উদ্দীন ওরফে সরকার (৩২) কে এবং বেড়াচকি গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের ছেলে নাসিম রেজা ওরফে সাহিন (২০) ও  শ্রীরামপুর গ্রামের কেতাবুল ইসলামের ছেলে ফিরোজ (২২) কে আটক করা হয়। আটক এই চারজনের তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের জঙ্গী আস্তানা ঘিরে ফেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ এবং পরে রাজশাহী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশের ওই টিম ফিরে আসে।

ব্রিফিং-এ পুলিশ সুপার জানান, নাচোল আটক চার জেএমবির তথ্য অনুসারে অভিযান হয় শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে।
আম বাগানের ভেতর নতুন বাড়িতে অভিযান
শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনগর কাইঠ্যাপাড়া। কানসাট-চৌডালা আঞ্চলিক সড়কের ধারেই আমবাগানের ভেতরে টিন দিয়ে তৈরী এসলাম আলীর ছেলে জুয়েলের বাড়ি। বৃহস্পতিবার ভোরে মাত্র তিনমাস আগে অপেক্ষাকৃত নির্জন এই বাড়িতেই অভিযান চালায় পুলিশ। এই অভিযানে আটক হয় এসলামের ছেলে বাবু (২২)। বাবু পেশায় ভ্যান চালক।
স্থানীয়রা জানায়, খুবভোরে পুলিশের একটি দল বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে এবং ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। নতুন এই বাড়িটির আঙ্গিনা, ঘরের ভেতর ও বাইরে মাটি খুঁড়ে তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশ জানায়, তল্লাশিকালে মাটির নিচে পুতে রাখা একটি প্লাস্টিকের ড্রাম উদ্ধার করা হয়। ওই ড্রামের ভেতর পাওয়া যায়, সাড়ে ৪কেজি গান পাউডার ও ৪২০টি টিউবে সাড়ে ৫২ কেজি এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল। পাওয়ার জেলের প্যাকেটের গায়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্লোাসিভ প্রাইভেট লিমিটেড লেখা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, আম বাগানের ভেতরে গেল শীতের শেষ দিকে বাড়িটি টিন দিয়ে নির্মাণ করা হয়। নতুন এই বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতিবেশিদের চলাচল প্রায় ছিলনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, ‘ এসলামের ছেলেরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ধর্মীয় কর্মকান্ড চালাতো। একদিন আগেই তারা ঈদের নামাজ পড়তো। এনিয়ে আগে তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধও হয়েছে। এসলামের ছেলে জুয়েল স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বললেও তার স্ত্রী কারো সঙ্গেই মিশতো না। খুবই পর্দাশীল। তাকে এলাকার কেউ চিনে না’। স্থানীয়রা বলেন, ‘ আম বাগানের ভেতর সন্ধ্যা নামলেই নির্জন এলাকায় পরিণত হয়। সেই কারণে রাতে সেখানে কি ঘটতো তা স্থানীয় লোকজন বুঝতে পারতোনা’।
এই অভিযানে আটক করা হয় জেএমবি সদস্য রাঘবপুর গ্রামের নেশ মোহাম্মদের ছেলে আজিজুল হককে।
আটক বাবু নিহত জঙ্গি আবু’র শ্যালক
শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী শিবনগর এলাকায় পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াটের অভিাযান অপারেশন ঈগল হান্টে নিহত জঙ্গি রফিকুল ইসলাম আবু’র শ্যালক হচ্ছে পুলিশের হাতে আটক ভ্যান চালক বাবু। কানসাট আব্বাসবাজার এলাকার জেএমবি সদস্য রুহুল আমীনের মেয়ে নিহত আবু’র স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের ফুফাতো ভাই। তারা আগে থেকে ধর্মীয় রীতিনীতি সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পালন করতো। রুহুল আমিনের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর নিহত আবুও ‘পাল্টে যায়’ জড়িয়ে পড়ে জঙ্গি তৎপরতায়।
পলাতক আছে গ্রেনেড সরবরাহকারী খাইরুল!
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিং-এ জানান, নাচোলে আটক চার জেএমবি’র দেয়া তথ্য ধরে পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে হানা দেয়া শুরু করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হানা দেয়া জেএমবিকে গ্রেনেড সরবরাহকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের ফাটাপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ গুটু’র ছেলে খাইরুলের বাড়িতে। পুলিশের অভিযানে আটক হয়ে খাইরুলের ভাই আব্দুল হাকিম (২০)। তবে, অভিযানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় খাইরুল। পুলিশ সুপার বলেন, ‘খাইরুল জেএমবি’র অন্যতম গ্রেনেড সরবরাহকারী’।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে আটক ৭ জেএমবি সদস্যকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে সোপার্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১২-০৫-১৭