নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরুর স্বীকৃতি স্বরূপ জয়িতা পুরষ্কার পেলেন জরিনা

‘আমি নিজে লেখা পড়া জানিনা আবার আমাদের গ্রামের লোকজন জানানেনা যে কাউকে এসিড মারলে বেশি করে পানি ঢালতে হয়। জানালে হয়তো আমি ভালো থাকতাম। ২০০১ সালে আমার স্বামী আমার শরিরে এসিড মেরে পালিয়ে যায়’। শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবসে জয়িতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবে নিজের স্বামীর নির্যাতনের কথা বলেন  এসিডদগ্ধ জরিনা খাতুন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে জরিনা বলেন, ‘আমার স্বামীর দেয়া এসিডে আমার বড় বড় চুল মাথায় আর নেই, সেই সাথে আমি হারিয়েছি একটা চোখ ও কান। আমার অসহায় অবস্থায় চিকিৎসার জন্য পাশে এসে দাঁড়ায় ব্র্যাক। জরিনা আরো বলেন, নয়াগোলা স্থানীয় একটি মা ডেন্টালে কাজ নিয়ে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে জীবন শুরু করেন বাবার বাড়ি থেকে।
সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরিনা খাতুনসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় জেলার ৬ জন জয়িতাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
জেলা মহিলা বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহিদা আখতারের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন,  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু জাফর। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন শামীম, জাতীয় মহিলা সংস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার চেয়ারম্যান এ্যাড. ইয়াসমীন সুলতানা, শিক্ষাবিদ মর্জিনা হক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোখলেশুর রহমান আকন্দ, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সফিকুল আলম।
অনুষ্ঠানে নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করা নারী সদর উপজেলার নয়াগোলা গ্রামের একরামুল হকের মেয়ে জরিনা বেগম, সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা নারী শিবগঞ্জ উপজেলার আলীডাঙ্গা জগন্নাথপুর গ্রামের সেরাজুল ইসলামের স্ত্রী শিউলী বেগম, সফল জননী নারী নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডি সোনামাসনা গ্রামের সেতাউর রহমানের স্ত্রী জান্নাতুন বেগম, শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ভোলাহাট উপজেলার বড়গাছি দূর্গাপুর গ্রামের নয়ন আলীর স্ত্রী  মাহমুদা খাতুন ও অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ভোলাহাট উপজেলার বজরাটেক গ্রামের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী রেশমাতুল আরশ। এছাড়া একই অনুষ্ঠানে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা নারী সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিষপুর গ্রামের সাত্তারের স্ত্রী মনেফা বেগমকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।

এদিকে ভোলাহাটে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ কার্যক্রমের আওতায় জয়িতাদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন কক্ষে ৩ জন জয়িতাদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রভাষক আনোয়ারুল ্ইসলাম আনোয়ার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসিন আলী শাহ্, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) কবির হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান-আব্দুল কাদের ও মশফিকুল ইসলাম তারা, আ’লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরদার, নেকজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা পাখি, ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম।  উপজেলার বিভিন্ন বিষয়ে জয়িতাদের মধ্যে মাহমুদা বেগম, নিলুফা বেগমসহ ৩ জন জয়িতাদের মধ্যে ক্রেষ্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৯-১২-১৬

,