১৫ কোটি টাকার দরপত্র দাখিল করতে গিয়ে ঠিকাদার লাঞ্ছিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে থাকা দরপত্র বক্সে ১৫ কোটি টাকার দরপত্র দাখিল করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আরামবাগের ঠিকাদার মনির হোসেন বকুল। লাঞ্ছিত ওই ঠিকাদারের প্রয়োজনীনয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়ায় তিনি পরিপুর্ণ দরপত্র দাখিল করতে পারেননি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবনের উর্ধমূখি সম্প্রসারণ কাজের দরপত্র দাখিলের শেষ দিন মঙ্গলবার পুলিশের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। বকুলের অভিযোগ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ঠিকাদার সমিতির আহবাহয়ক এজাবুল হক বুলির নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের চতুর্থ থেকে অষ্টম তলা নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৫ কোটি টাকার বেশি। এজন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে গণপূর্ত বিভাগ কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ে দরপত্র বাক্স রাখা হয়। ওই সূত্র জানায়, দরপত্র দাখিলের শেষ দিন মঙ্গলবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দরপত্র দাখিল করতে গিয়ে ঘটে অনাকাংখিত ঘটনা।
লাঞ্ছনার শিকার ঠিকাদার বকুল অভিযোগ করে বলেন, ‘ যৌথ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এহসানুল নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র দাখিলের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ কার্যালয়ে গিয়ে বহিরাগতদের দেখে সেখান থেকে চলে আসি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দ্বিতীয়তলায় রাখা বাক্সেও কাছাকাছি যেতেই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও জেলা ঠিকাদার সমিতির আহ্বায়ক এজজাবুল হক বুলিসহ তারা লোকজন দরপত্র দাখিলে বাধা দেন’। তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে বুলির সঙ্গে থাকা ইফতেখার আহমেদ রঞ্জু নামের এক যুবক আমাকে ধাক্কা দেয় এবং এজাবুল হক বুলিও দরপত্র দাখিলে বাধা দেন এবং হুমকী প্রদান করেন। এ সময় ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে আমার কাছে থাকা দরপত্রের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের আংশিক ছিনিয়ে নেন’।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বারান্দায় ধাক্কাধাক্কির ফলে অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টির সময় সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু কোন ভুমিকা রাখেননি’। তিনি জানান, একপর্যায়ে কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়ার পরেও তার কাছে থাকা আংশিক থাকা দরপত্র দরপত্র বাক্সে দাখিল করেন।
তিনি জানান, বিষয়টি দরপত্র খোলার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।  
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) আবুল কালাম সাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা উল্লেখ করলেও বিষয়টি তেমন বড় ঘটনা নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ একজন ঠিকাদার দরপত্র দাখিল করতে আসলে অপর কয়েকজন বাধা দেয়। আমরা ওই ঠিকাদারকে দরপত্র দাখিল করতে সহযোগিতা করেছি এবং তিনি দরপত্র দাখিল করেছেন’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে আমার দপ্তরের বাইরে। তারপরও ঠিকাদার বকুল লিখিত অভিযোগ দিলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন’।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা এজাবুল হক বুলির সঙ্গে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলেও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘বকুলকে বাধা দেয়ার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। পরে এসপি অফিসে গিয়ে আমিই তাকে দরপত্র দাখিলে সহযোগিতা করেছি’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, ওই ঠিকাদার পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে দরপত্র দাখিল করেছ। এ ঘটনায় দরপত্র দাখিলে বাধা দেয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৫-১০-১৬