একটি ফোন কলের পর অসুস্থ, অতঃপর মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মারা গেছেন। সোমবার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের এক সভায় যোগদিতে গিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। জেলা প্রশাসকের এই অকাল মৃত্যুতে জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গভীর শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশানার কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকদের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় দিয়ে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। সেখানে সভা শুরুর আগমূর্হুতে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে গেলে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে  কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশানর আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ তিনি বিভাগীয় মাসিক সভায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি সুস্থ্যও ছিলেন। সভা শুরুর আগে তাঁর মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। ওই মোবাইলে কথা বলার পর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের মুত্যুর কোলে ঢোলে পড়ার ভিডিও দৃশ্য গণ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ওই ভিডিটিতে দেখা যায়, তিনি দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে টেবিলে ফাইল পত্র রাখেন। তারপর ওই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে তিনি সভা কক্ষ থেকে বের হন। মোবাইল ফোনে কথা বলা শেষে সভা কক্ষে ঢুকে তার নির্ধারিত চেয়ারের দিকে যাওয়ার পথে শরীরি দু’ ঝাকুনি দিয়ে নিচের দিকে পড়ে যান। ও ভিডিটিতে দেখা যায়, মোবাইল ফোনে কথা বলে সভা কক্ষে ঢুকতেই তাকে বিসন্ন দেখাচ্ছিল। চশমা খুলে দু’চার কদম হাটতে মৃত্যুলে ঢোলে পড়েন। সঙ্গে দ্রুত উদ্ধারে এগিয়ে আসেন সহকর্মীরা।   
অন্যদিকে, রাজশাহী থেকে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের মরদেহ দুপুর দু’টা ৩৫ মিনিটে তাঁর কর্মস্থল চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশসকের বাংলোয় নিয়ে আসা হলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয়। দীর্ঘ সময়ের তাঁর সহকর্মীসহ নানান শ্রেণী পেশার মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেখানে গোসল ও কাফন পড়ানো শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফকিরপাড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে।
আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বিকেলে ৩টায় ফকিরপাড়া ঈদগাহ ময়দানে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষণা অনুযায়ী দুপুরের পর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্নস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ সমবেত হন ঈদগাহ ময়দানে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিকেলে সোয়া চারটায় অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। এতে অংশ নেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল হান্নান, পুলিশ সুপার মোজাহিদুল ইসলাম, বিজিবি’র ৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবুল এহসান, জেলা পরিষদের প্রশাসক মইনুদ্দীন মন্ডল, সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সাইদুর রহমান, নাচোল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নামাজে জানাজা শুরুর আগে প্রয়াত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বপালনকালীন কাজের বর্ণনা দিতে আলোচনা করেন বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, ‘ চাঁপাইনবাবগঞ্জে দায়িত্বপালনকালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে যেভাবে ভাবতেন, পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেভাবে ভাবেননি। তিনি পরিচ্ছন্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা গড়তে চেয়েছিলেন’।
পুলিশ সুপার মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মহাদয় চাঁপাইনবাবগঞ্জকে গ্রিন ডিস্ট্রিক্ট করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। কাজও শুরু করেছিলেন। আমরা তাঁর সেই ইচ্ছে পুরণ করবো’।
বিভাগী কমিশনার আব্দুল হান্নান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের দায়িত্বপালনকালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘিরে যে উন্নয়ন চিন্তাগুলো করেছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে আপনারা এগিয়ে আসুন। একাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামের সন্তান জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম ২ মেয়ে, ১ ছেলে, স্ত্রী, মাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
নামাজে জানাজা শেষে সড়ক পথে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের শুকতাইলে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৭-১০-১৬