চামড়ার দাম রিক্সা ভাড়া সমান সমান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বালুবাগান মহল্লা’র আসলাম আড়ৎদার এবারের কোরবানী ঈদে ৯ হাজার ৮শ টাকা মূল্যে একটি খাসি কিনে কোরবানী দিয়েছিলেন। কোরবানীর পর খাসিটির চামড়া রিক্সাযোগে বিক্রি করতে পাঠিয়েছিলেন শহরের নীমতলা ফকিরপাড়া এলাকার চামড়া আড়তে। সেখানে মাঝারি সাইজের ওই খাসির চামড়ার দাম দেয়া হয় মাত্র ৩০ টাকা। আসলামের বাড়ি থেকে চামড়া আড়তের যাতায়াত রিক্সা ভাড়াও ৩০ টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ উপজেলাতেই এবার চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরে খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে হয়েছে গড়ে মাত্র ৫০ টাকা মূল্যে। কোন কোন এলাকায় খাসির সর্বোচ্চ দাম পাওয়া গেছে ৮০ টাকা। গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন ্উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকার চিত্র আরো করুন। বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া দামে কোন চামড়া আড়ৎদারই চামড়া কিনেনি। নির্ধারিত দামের অর্ধেকেও কম মূল্য দিয়েছে ক্রেতারা। এবার ক্রেতারা আগ্রহ না দেখায় একেবারে নামমাত্র দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে বিক্রেতারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার পোল্লাডাঙ্গা গ্রামের উত্তরপাড়া জামের মসজিদের সেক্রেটারী একরামুল হক বলেন, ‘গতবছর আমাদের জামায়াতের চামড়া মসজিদে জমা হলেও ৫/৬টা পার্টি (চামড়া ক্রেতা) এসে দাম করেছিল। কিন্তু এবার পার্টি আসেনি বললেই চলে। এক পার্টির কাছে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। দাম পাওয়া গেছে গত বারের চেয়ে অর্ধেক’।
এদিকে, চামড়া মূল্য না পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের মুরাদপুর গ্রামে ৬২টি কোরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে। মুরাদপুর গ্রামের মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের দিন চামড়া কেনার জন্য কোন ক্রেতা মুরাদপুরে না আসায় এলাকার চামড়াগুলো একটি বাড়ির মধ্যে রাখা হয়। বুধবার সকালে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর থেকে চামড়া ব্যবসায়ীরা এসে চামড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেছে উল্লেখ করে একেবারের পানির দামে চামড়া কিনতে চাওয়ায় গ্রামবাসী চামড়া বিক্রি না করে তা পুতে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়’। গ্রাম্য মাতবর মতিউর রহমান চেনু ও গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ দাম না পাওয়ায় পরিবেশ দূষণরোধে দ্রুত চামড়াগুলো পুতে ফেলা হয়েছে।
এবার নাচোলে এলাকা ভেদে খাসির চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং গরুর চামড়া ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে, চামড়া ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, নির্ধারিত দামেই চমড়া কেনা হয়েছে।
অন্যদিকে, এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে গবছরের চেয়ে এবার কম চামড়া এসেছে জেলা সদরের চামড়া আড়তে। বড় চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন অন্য বছর ঈদের দিনই সীমান্ত এলাকার কোরবানীর পশুর চামড়া জেলা সদরে আনা হয়েছিল। কিন্তু এবার তেমন একটা আনা হয়নি। সেগুলো সীমান্ত এলাকাতেই মজুদ করা হচ্ছে।
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি’র ৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবুল এহেসান জানান, চামড়ার পাচার ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বিজিবি সদস্যদের। জেলার সীমান্তজুড়ে ঈদের পর এক মাস এই সতর্কাবস্থা থাকবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৫-০৯-১৬