আমাদের তরুণরা দিগ্ভ্রান্ত হলো কেন -----------------------গোলাম কবির
আরবিতে একটা কথা
আছে, ‘আল ইনসানো মুরাক্কাবুন মিনাল খাতায়ি অন্নিসিয়ান’। যার অর্থ
দাঁড়ায়—মানুষ ত্রুটি-বিচ্যুতি ও বিস্মরণের সমন্বয়ে সৃষ্টি। সেই মানুষ আবার
মানব হয়ে ওঠে। রামায়ণে মানব অস্ত্রের কথা বলা আছে। যুক্তিশাস্ত্রে মানুষকে
Rational animal বলা হয়েছে। কারণ মানুষ পরিশীলিত চেতনার সঙ্গে পশুত্বকেও
ধারণ করে। এ জন্য একই মানুষ নৈতিক মূল্যবোধ লালন করে মানবিক হয়ে ওঠে, আবার
বিকৃত আবেগের তাড়নায় দানব হতে বিলম্ব করে না। সেই দানবকে মানব হয়ে উঠতে
সুদীর্ঘকাল সাধনা করতে হয়েছে মানুষকে। এতদসত্ত্বেও লোভ-লালসা,
স্বার্থপরতা—এককথায় রিপুর তাড়নায় মানুষ মানবীয় গুণ হারিয়ে ফেলছে। এখান থেকে
কি মুক্তির পথ নেই? আছে। আছে বলেই এতকালের মানবসভ্যতা টিকে আছে। যদিও
মাঝেমধ্যে দানবশক্তি সভ্যতার নিদর্শনগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে এবং নরহত্যায়
প্রণোদনা জোগাতে বিবেকের দংশন অনুভব করে না। আমরা এসব অঘটনকে স্মরণে রেখে
আমাদের তরুণরা কেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠল, তার মূল বিষয়গুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা
করব। কেউ কেউ বিষয়টিকে জিহাদি আখ্যায়িত করছেন। আসলে আরবি শব্দ জিহাদের
আভিধানিক অর্থ প্রচেষ্টা। সে প্রচেষ্টা দানবিক শক্তি থেকে মানবীয় হয়ে ওঠার
নিরন্তর সাধনা। আর অন্য একটি অর্থ অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এসব ব্যাপক
বিষয় আমাদের আলোচ্য নয়। আমরা দেখব আমাদের কিছু তরুণের আজকের দিনের
বিভ্রান্তির পরিপ্রেক্ষিতটুকু।
শিশু-কিশোর-তরুণদের মানসিক লালন ও পরিচর্যার ক্ষেত্র মোটামুটি তিনটি,
পরিবার, শিক্ষাঙ্গন ও পারিপার্শ্বিক কথাগুলো নতুন নয়। তবুও আমাদের চৈতন্যের
জাগৃতির জন্য বিষয়গুলো একটু খতিয়ে দেখব।
উনিশ শতকের গোড়ার দিক থেকে বাঙালির ন্যায়নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে জানার সূতিকাগার যৌথ পরিবার একটু একটু করে ভাঙতে থাকে। নগরসভ্যতা ও অর্থনৈতিক কারণে বর্তমানে যৌথ পরিবার নেই বললেই চলে। সীমিতসংখ্যক সদস্য নিয়ে এখনকার পরিবারগুলো একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। স্নেহ-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ন্যায়-অন্যায়বোধ ইত্যাদি আচরণের শিক্ষা শিশু-কিশোর ও তরুণরা এখন পরিবার থেকে তেমন পাচ্ছে না। মা-বাবা উভয়ই জীবিকা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির পেছনে সময় দেন। ঘরের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার সময় পান না। মনে রাখা দরকার, ভাড়াটে লালনকারী দিয়ে সন্তানকে শ্রেয়বোধ শেখানো যায় না। অভিভাবকদের ধারণা, বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠালে তাদের চোখের জল আর মনের ক্ষোভ দূর হবে। হয় না। বরং নানা প্রভাবে সন্তানরা বিভ্রান্ত হয়। পরিবারের আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্য সন্তানদের কুপ্রভাবের দিকে ধাবিত করে। কিছু বাবা ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে শোধ না দিয়ে দরিয়া চুরি করছেন। এত সব প্রত্যক্ষ করে তরুণরা শুভাশুভ বাছবে কী করে? বরং প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
একসময় অভিভাবকরা সন্তানকে গুরুমশায়ের কাছে অর্পণ করে বলতেন, তাঁর সন্তানকে যথাযথ মানুষ করার জন্য তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তা সে যত কঠিন পন্থাই হোক না কেন। তখন শিক্ষার্থীরা সঠিক জ্ঞানের সঙ্গে মনুষ্যত্বের শিক্ষাও লাভ করত। কেননা তখন শিক্ষকরা ছিলেন অনুসরণীয় আদর্শের প্রতীক। আজকের দিনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধানত জ্ঞান কেনাবেচা হয়। অনেক শিক্ষক বিদ্যাদানের চেয়ে মতবাদী ভাবনায় শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করেন। মানুষে মানুষে মিলনের পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা মতবাদে দীক্ষিত হয়। ফলে তাদের মতবাদ ছাড়া অন্যদের তারা শত্রু ভাবতে শেখে। শিক্ষার মহান আদর্শ ধারণ না করে সংঘাতের প্রতি ধাবিত হয়।
আগেকার দিনের পাঠ্যসূচিতে ন্যায়নীতি ও আদর্শের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। শিশু-কিশোররা এসব বিষয় পাঠ করে নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রত গ্রহণ করত। এখন সেসব বিষয় নেই বললেই চলে। ইংরেজিয়ানা শেখানো আর নিজেদের অভিজাত হিসেবে উপস্থাপনের লক্ষ্যে উঠতি পয়সাওয়ালারা হরেক নামে গজিয়ে ওঠা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করছেন। এখানে শিক্ষার্থীরা বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্রহীন হয়ে পড়ছে। ফলে তাদের মধ্যে একটা উন্নাসিকতা পরিলক্ষিত হয়।
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় যাঁরা নিয়োজিত, তাঁদের মধ্যে ত্যাগের মহিমা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এখন মাধ্যমিকে বিষয়ওয়ারি শিক্ষক নেওয়া হয়। দুঃখের বিষয়, নিজ বিষয়ে অনেকে ব্যুত্পত্তিসম্পন্ন নয়। অনৈতিকভাবে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেকে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর জন্য প্ররোচিত করেন। এমন শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা কোন আদর্শ শিখবে? পরবর্তী সময়ে এদের অনেকেই দিগ্ভ্রষ্ট হয়।
উচ্চশিক্ষার পীঠস্থানগুলোতে অনুসরণীয় শিক্ষক পাওয়া কঠিন। দলের কাছে মুচলেকা দিয়ে অনেকেই শিক্ষকতায় আসেন। আবার অনেকে নানা ধান্দায় অর্থ উপার্জনের পথে ধাবিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে উঠেছে মূলত শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা ও সনদ বিক্রির জন্য। শোনা যায়, কোথাও কোথাও নাকি মানবতাবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের তালিম দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক পথে চলার দিশারি পাচ্ছে না। শিক্ষাঙ্গন থেকে মানবসভ্যতার ভাঙাগড়ার ইতিহাসচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রায় নির্বাসিত। শিশুরা বই-খাতার বোঝা বহন করতে করতে পর্যুদস্ত। বাইরে কোচিংয়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করা হয়। ফলে তারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে কল্যাণকামী জীবনদর্শন থেকে তারা বঞ্চিত হয়। আর বড়রা অনেকে উদার মানবিক সংস্কৃতিচর্চার পরিবর্তে অনৈতিক পথে বিত্তবৈভবের পেছনে ছোটে। প্রভাববলয়ে থেকে অনেকে অপকর্মে লিপ্ত।
একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা উদার মানবিকতার বিষয়ে পাঠ নিতে পারত। সে স্থান দখল করেছে জিঘাংসাবৃত্তি। কর্মজীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নির্বাচনের ব্যবস্থা হতো। এখন তা উধাও। এসবের শূন্যতার কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছে তরুণরা।
বিশ্বজোড়া ক্ষমতাধরদের অনৈতিক আগ্রাসন কিছু তরুণকে যুদ্ধোন্মাদ করে তুলছে। এতে ইন্ধন জোগাচ্ছে ধর্মের মুখোশে ক্ষমতালোভী শক্তি। না বুঝে তরুণরা সে ফাঁদে পা দিচ্ছে। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে ‘শান্তির ললিত বাণী ব্যর্থ পরিহাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় তরুণরা আত্মঘাতী হয়ে উঠছে, পরকালে চিরশান্তি লাভের আশায় ইহজীবনকে অসার মনে করে।
আমরা আশাহত হতে চাই না। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন তরুণদের জাগরণ আসবে অচিরেই। এ কাজে অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে পরিবার, ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষক, কল্যাণকামী রাজনীতিককে। আর রাষ্ট্র এতে অকুণ্ঠ সহায়তা দেবে।
লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সন্তান।
সৈজন্যে- কালের কণ্ঠ- ২২-০৮-২০১৬
উনিশ শতকের গোড়ার দিক থেকে বাঙালির ন্যায়নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে জানার সূতিকাগার যৌথ পরিবার একটু একটু করে ভাঙতে থাকে। নগরসভ্যতা ও অর্থনৈতিক কারণে বর্তমানে যৌথ পরিবার নেই বললেই চলে। সীমিতসংখ্যক সদস্য নিয়ে এখনকার পরিবারগুলো একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। স্নেহ-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ন্যায়-অন্যায়বোধ ইত্যাদি আচরণের শিক্ষা শিশু-কিশোর ও তরুণরা এখন পরিবার থেকে তেমন পাচ্ছে না। মা-বাবা উভয়ই জীবিকা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির পেছনে সময় দেন। ঘরের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার সময় পান না। মনে রাখা দরকার, ভাড়াটে লালনকারী দিয়ে সন্তানকে শ্রেয়বোধ শেখানো যায় না। অভিভাবকদের ধারণা, বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠালে তাদের চোখের জল আর মনের ক্ষোভ দূর হবে। হয় না। বরং নানা প্রভাবে সন্তানরা বিভ্রান্ত হয়। পরিবারের আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্য সন্তানদের কুপ্রভাবের দিকে ধাবিত করে। কিছু বাবা ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে শোধ না দিয়ে দরিয়া চুরি করছেন। এত সব প্রত্যক্ষ করে তরুণরা শুভাশুভ বাছবে কী করে? বরং প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
একসময় অভিভাবকরা সন্তানকে গুরুমশায়ের কাছে অর্পণ করে বলতেন, তাঁর সন্তানকে যথাযথ মানুষ করার জন্য তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তা সে যত কঠিন পন্থাই হোক না কেন। তখন শিক্ষার্থীরা সঠিক জ্ঞানের সঙ্গে মনুষ্যত্বের শিক্ষাও লাভ করত। কেননা তখন শিক্ষকরা ছিলেন অনুসরণীয় আদর্শের প্রতীক। আজকের দিনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধানত জ্ঞান কেনাবেচা হয়। অনেক শিক্ষক বিদ্যাদানের চেয়ে মতবাদী ভাবনায় শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করেন। মানুষে মানুষে মিলনের পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা মতবাদে দীক্ষিত হয়। ফলে তাদের মতবাদ ছাড়া অন্যদের তারা শত্রু ভাবতে শেখে। শিক্ষার মহান আদর্শ ধারণ না করে সংঘাতের প্রতি ধাবিত হয়।
আগেকার দিনের পাঠ্যসূচিতে ন্যায়নীতি ও আদর্শের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকত। শিশু-কিশোররা এসব বিষয় পাঠ করে নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রত গ্রহণ করত। এখন সেসব বিষয় নেই বললেই চলে। ইংরেজিয়ানা শেখানো আর নিজেদের অভিজাত হিসেবে উপস্থাপনের লক্ষ্যে উঠতি পয়সাওয়ালারা হরেক নামে গজিয়ে ওঠা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করছেন। এখানে শিক্ষার্থীরা বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্রহীন হয়ে পড়ছে। ফলে তাদের মধ্যে একটা উন্নাসিকতা পরিলক্ষিত হয়।
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় যাঁরা নিয়োজিত, তাঁদের মধ্যে ত্যাগের মহিমা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এখন মাধ্যমিকে বিষয়ওয়ারি শিক্ষক নেওয়া হয়। দুঃখের বিষয়, নিজ বিষয়ে অনেকে ব্যুত্পত্তিসম্পন্ন নয়। অনৈতিকভাবে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেকে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর জন্য প্ররোচিত করেন। এমন শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা কোন আদর্শ শিখবে? পরবর্তী সময়ে এদের অনেকেই দিগ্ভ্রষ্ট হয়।
উচ্চশিক্ষার পীঠস্থানগুলোতে অনুসরণীয় শিক্ষক পাওয়া কঠিন। দলের কাছে মুচলেকা দিয়ে অনেকেই শিক্ষকতায় আসেন। আবার অনেকে নানা ধান্দায় অর্থ উপার্জনের পথে ধাবিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে উঠেছে মূলত শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা ও সনদ বিক্রির জন্য। শোনা যায়, কোথাও কোথাও নাকি মানবতাবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের তালিম দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক পথে চলার দিশারি পাচ্ছে না। শিক্ষাঙ্গন থেকে মানবসভ্যতার ভাঙাগড়ার ইতিহাসচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রায় নির্বাসিত। শিশুরা বই-খাতার বোঝা বহন করতে করতে পর্যুদস্ত। বাইরে কোচিংয়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করা হয়। ফলে তারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে কল্যাণকামী জীবনদর্শন থেকে তারা বঞ্চিত হয়। আর বড়রা অনেকে উদার মানবিক সংস্কৃতিচর্চার পরিবর্তে অনৈতিক পথে বিত্তবৈভবের পেছনে ছোটে। প্রভাববলয়ে থেকে অনেকে অপকর্মে লিপ্ত।
একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা উদার মানবিকতার বিষয়ে পাঠ নিতে পারত। সে স্থান দখল করেছে জিঘাংসাবৃত্তি। কর্মজীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নির্বাচনের ব্যবস্থা হতো। এখন তা উধাও। এসবের শূন্যতার কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছে তরুণরা।
বিশ্বজোড়া ক্ষমতাধরদের অনৈতিক আগ্রাসন কিছু তরুণকে যুদ্ধোন্মাদ করে তুলছে। এতে ইন্ধন জোগাচ্ছে ধর্মের মুখোশে ক্ষমতালোভী শক্তি। না বুঝে তরুণরা সে ফাঁদে পা দিচ্ছে। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে ‘শান্তির ললিত বাণী ব্যর্থ পরিহাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় তরুণরা আত্মঘাতী হয়ে উঠছে, পরকালে চিরশান্তি লাভের আশায় ইহজীবনকে অসার মনে করে।
আমরা আশাহত হতে চাই না। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন তরুণদের জাগরণ আসবে অচিরেই। এ কাজে অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে পরিবার, ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষক, কল্যাণকামী রাজনীতিককে। আর রাষ্ট্র এতে অকুণ্ঠ সহায়তা দেবে।
লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সন্তান।
সৈজন্যে- কালের কণ্ঠ- ২২-০৮-২০১৬