প্রযুক্তির প্রভাবে কদর কমেছে ঈদ কার্ডের, তাই বিক্রিতেও পড়েছে ভাটা

ঈদ উৎসবে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঈদ কার্ডের প্রচলন বহুকাল থেকে থাকলেও এখন দিন দিন শুভেচ্ছা জাননোর এই মাধ্যমটির কদর কমছে অনেকের কাছে। এমনটিই বলছে এই ঈদকার্ড বিক্রেতারা। কারণ হিসাবে তারা বলছেন আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ার জীবন যাপনে অভ্যস্ত তরুন প্রযন্ম কাগজের ঈদ কার্ডের চায়তে ইমেইল, ফেসবুক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বেশ কিছু স্টেশনারী দোকান ঘুরে দেখা গেছে সেখানে ঈদকার্ড সাজানো থাকলেও বিক্রি তেমন একটা হচ্ছে না। অথচ গেল ৩-৪ বছর আগেও রোজার শুরু থেকেই ঈদকার্ড বিক্রি ছিলো স্টেশনারী ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে লাভজনক। কিন্তু এবছর অনেকেই গতবছরের চেয়ে অর্ধেক টাকার এবার ঈদকার্ড উঠিয়েছেন দোকানে, তারপরও বিক্রির এমন মন্দা ভাবে, লাভ তো নয় উল্টো তাদের লোকসান গুনতে হতে পারে বলে জানান তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র আলী উজ্জামান নূর জানান, এখন আমরা ফেসবুকে সবসময় থাকি, তাই প্রিয় মানুষটিকে ঘটা করে কাগজের ঈদ কার্ড দেয়া হয়না, অনেক সময় নিজেই একটা ঈদকার্ড ডিজাইন করে ওকে ম্যাসেজে দিয়ে দিলাম, আমার কখনো নিজেই প্রিন্ট করে দিলাম, কিংবা অনেক সময় ভিডিওতে  ঈদ শুভেচ্ছা জানায়, এতে করে আর দোকানে গিয়ে ঈদকার্ড কেনা হয়না। তবে তিনিও মনে করেন আগে ঈদ কার্ডের মধ্যে অনেক বেশি আবেগ থাকত। তিনি বলেন ঈদের সময় প্রিয় কাউকে শুভেচ্ছা জানানোতে ঈদ কার্ড কেনার জন্য একটা প্রস্তুতি থাকত, পরে সেই মানুষটিকে সেটি পৌচ্ছে দেয়ার পর তার অনুভুতি জানার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। বন্ধু বান্ধব সবার মাঝেই একরকম প্রতিযোগিতা থাকত কে কত আকর্ষনীয় ভাবে সবাইকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে পারে। তবে এখনো এটি হচ্ছে আরো বেশি পরিসরে. কিন্তু তা কাগজের ছাপানো ঈদ কার্ডের মাধ্যমে নয়।
শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের শিক্ষার্থী  ইসরাত জাহান ও সোনিয়া খাতুন জানান, কাগজের ঈদ কার্ড কেনার প্রতি আগ্রহ কমেছে কারণ তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের জীবন যাত্রা আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি সহজ ও গতিশীল হয়েছে। এখন অনেক গুলো মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, যে কোন উৎসবে এখন আমরা প্রায় সবাই ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্টেটাস দেয়, কেউ কেউ আমার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে স্টেুডেন্ট কর্নার, বিভিন্ন ডিজাইনের ঈদ কার্ডের জন্য এই দোকানে অনেকেই ভিড় করেন। তবে এবছর যেন চিত্রটা ভিন্ন। স্টেুডেন্ট কর্ণারের মালিক আবদুল্লাহ হাসান বাবী জানান, তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে ঈদ কার্ড বিক্রি করে আসছেন। বছর পাঁচেক আগেও ঈদ কার্ডের চাহিদা ছিলো তুঙ্গে। প্রায় লাখ খানেক টাকার ঈদ কার্ড বিক্রি হতো। তবে দিন যত যাচ্ছে ঈদ কার্ড বিক্রি ততো কমে গিয়েছে। তিনি বলেন, গত দুই বছর থেকে আগের তুলনায় ৪ ভাগের একভাগ বিক্রি হয় ঈদ কার্ড। ক্রেতা সংখ্যা কমে আসলেও যারা কিনেন তারা যাতে ঘুরে না যান তাই এবারও তিনি প্রায় ৪০ হাজার টাকার ঈদকার্ড উঠিয়েছেন। ভারত থেকেও কিছু ঈদ কার্ড তিনি নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান ২ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঈদ কার্ড আছে তাদের এখানে।
ওই দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি সিজার জানান, ২০ রোজা চলে আসলেও ঈদ কার্ড তেমন বিক্রি হয়নি, তবে ছোটরা ছোট কার্ড গুলো কিছু কিছু কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, ঈদের আগের কয়েকদিন হয়ত কিছু বিক্রি হতে পারে।
ঈদ কার্ড বিনিময় বাঙ্গালী মুসলিম আবহমান সংস্কৃতির একটি অংশ উল্লেখ করে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক জিয়াউল ইসলাম জানান, কবে থেকে প্রথম ঈদ কার্ডেও প্রচলন শুরু হয়েছিল এটা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ইদ এলেই বাঙ্গালী মসুলমানরা নয়নাভিরাম দৃষ্টিনন্দন কার্ডে মনের মাধুরী মিশিয়ে হৃদয়ের অন্তরস্থল উৎসরিত বানী বা কবিতার দু ছন্দ লিখে প্রিয়জনের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করত। ঈদ কার্ডে থাকে অকৃত্রিম ভালোবাসা। হাল আমলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, ডিজিটাল কার্ড, ফেসবুক বা টুইটারে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো আধুনিক তরুন তরুনীদেও মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ঈদ কার্ডের ব্যবহার অনেকটা কমেছে। কিন্তু ইতিহাসের এই শিক্ষক মনে করেন, প্রযুক্তির এ ব্যবহাওে জানানো ঈদের শুভেচ্ছার মাঝে আগের মত আবেগ বা ভালোবাসা নেয়, এটা অনেকটা বানিজ্যিক ধাঁচের শুভেচ্ছা বিনিময় বলে মনে করেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ বিশেষ প্রতিবেদক/ ০১-০৭-১৬