ই্উপি নির্বাচন > শিবগঞ্জে বিদ্রোহীতে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ > শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর তিন দলই

আগামী ৭মে অনুষ্ঠিতব্য শিবগঞ্জের ১৪টি ইউনিয়নে পরিষদের নির্বাচনে শেষ মুর্হুতের প্রচার প্রচারণা এখন তুঙ্গে। শিবগঞ্জ উপজেলায় ‘সেয়ানে-সেয়ানে’ অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত তাদের ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ প্রতিষ্ঠায় নানামুখি তৎপরতা চালাচ্ছে। নির্বাচনে জামায়াত সংগঠিতভাবে কাজ করলেও চরম বেকায়দায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্বের কারণে। আভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্ব রয়েছে বিএনপিতেও। সাম্প্রতিক প্রকট আকার ধারণ করা আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্বের কারণে নির্বাচনী মাঠে আসা বিদ্রোহী প্রার্থীরাই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদেও বেকায়দায় ফেলেছে। তিন/চারটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভাল অবস্থানে থাকার পাশাপাশি তিনটিতে বিদ্রোহী প্রার্থীও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। দু’/একটি জামায়াত ভাল অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি বাকিগুলোতে বিএনপির অবস্থান ভাল। ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রাপ্ত তথ্যে অনুয়াযী যে চিত্র পাওয়া গেছে তা হচ্ছে-
ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নে ৯টি কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৩শ ৮১ ও  মহিলা ভোটার ৬হাজার ১শ ৪২জনসহ মোট ১২ হাজার ৫শ ২২ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ফলাফল নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। এ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের অবস্থান ভাল থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিএনপি ও আওয়ামীলীগ প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।                          
মনাকষা ইউনিয়নে ১২টি ভোট কেন্দ্রে  ১৬ হাজার ৮শ ৩ জন মহিলা ও ১৭ হাজার ৭শ ৯জন পুরুষ ভোটর ভোটাধিকার প্রযোগ করবেন। আওয়ামীলীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত এ ইউনিয়নে বরাবরই অল্প ভোটের ব্যবধানে দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের দখলে থাকলেও গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ঘরোয়া বিরোধের কারণে আওয়ামীলীগের মির্জা শাহাদাত হোসেন খুররম বিএনপির কামার উদ্দীনের কাছে পরাজিত হন। এবারও এখানে আওয়ামী লীগের লড়াই হবে ‘সেয়ানে-সেয়ানে’। তবে, জামায়াতের ‘নিরবতা’ বিএনপি’র জন্য সহায়ক হচ্ছে।
দূর্লভপুর ইউনিয়নে ১৫ টি ভোট কেন্দ্রে ১৮ হাজার ৮শ ৭০ জন পুরুষ ও ১৭ হাজার ৭শ ৬৯ জন মহিলা ভোটারসহ মোট ৩৬ হাজার ৬শ ৩৬জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ  ইউনিয়নে স্বাধীনতা উত্তরকালে বরাবর আওয়ামীলীগের দখলে থাকলেও এবার চিত্র পাল্টাতে পারে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কারণ আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে মাঠে লড়াই করতে হচ্ছে বিএনপির ২ জন জামায়াতের ১ জন ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ২ জনের বিরুদ্ধে। তবে, আওয়ামী লীগ অধ্যূষিত এলাকা হিসেবে আওয়ামী লীগ আশাবাদি হলেও জামায়াত ভেতর ভেতর অনেক এগিয়েছে।
পাকা ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩শ ১জন পুরুষ ও ৭ হাজার মহিলাসহ মোট ১৪ হাজার ৩শ ২১জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আওয়ামীলীগের ঘাটি বলে পরিচিত বর্তমানে রূপকথায় পরিণত হয়েছে।  এ ইউনিয়নে ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন আওয়ামীলীগ সমর্থক ও ১ জন বিএনপি সমর্থক হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান মালেক ভাল অবস্থানে রয়েছেন।
উজিরপুর ইউনিয়নে ৯ কেন্দ্রে ৪ হাজার ১ ৪৬জন পুরুষ ও  ৪ হাজার ২০জন মিলে ৮ হাজার ১ ৬৬ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতার বাড়ি উজিরপুর ইউনিয়নে হওয়াসহ এই ইউনিয়নে জামায়াতকে বিএনপি ছাড় দেয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
শ্যামপুর ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৩শ ৪৯জন ও  ১৩ হাজার ৩শ ২০জনসহ ২৭ হাজার ৬শ ৬৯জন ভোটর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। জামায়াত অধূষ্যিত এ ইউনিয়নে ৩জন প্রার্থীর মধ্যে জামায়াতের কোন প্রার্থী নেই। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও আওয়ামীলীগ প্রার্থী আসাদুজ্জামান ভোদনের সঙ্গে ব্এিনপি প্রার্থী খাইরুলের হাড্ডাহাড্ডি  লড়াই হতে যাচ্ছে।
শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ১৩ টি ভোট কেন্দ্রে পুরুষ ১৮ হাজার ৩শ ২৮ জন ও মহিলা ১৭ হাজার ৪শ ৪৪জন মোট ৩৫ হাজার ৭শ ৭২জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ ইউনিয়নে বিএনপি’র প্রার্থী নেই। এখানে জামায়াতের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজামূল হক রানার সঙ্গে।
ধাইনগর ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রে পুরুষ ১৩ হাজার ২ম ৮৮জন ও মহিলা ১৩ হাজার ৫শ ৯০ জনসহ মোট  ২৬ হাজার ৮শ ৭৮জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ ইউনিয়নে ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও জামায়াত নেতার মধ্যে মূল লড়াই হবে। এখানে জাতীয় পার্টির তেমন প্রভাব না থাকলেও বিএনপি’র প্রার্থী ভাল অবস্থানে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চককীর্তি ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রে পুরুষ ১২ হাজার ৯শ ৬৭জন ও মহিলা ১২ হাজার ৮শ ১০জনসহ মোট ২৫ হাজার ৭শ ৭৭জন ভোটার রয়েছেন। এখানে আওয়ামীলীগের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী নতুন মুখ আনোয়ার হাসানের সাথে বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমানের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
মোবারকপুর ইউনিয়নে পুরুষ ১০ হাজার ৬শ ১৮জন  ও মহিলা ১০ হাজার ১শ ৩২জন মোট ২০ হাজার ৭শ ৫০ জন  ভোটার  ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও  এ ইউনিয়নটিতে বিএনপির প্রভাব উল্লেখ করার মত। এখানে বিএনপি প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মিঞার সাথে আওয়ামীলীগ প্রার্থী  কামাল উদ্দিনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে মনে ধরা হচ্ছে।
ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নে ৯টি কেন্দ্রে পুরষ ৭ হাজার ৭শ ৭৮জন ও মহিলা ৭ হাজার ৬শ ৫৫জন মোট ১৫ হাজার ৪শ ৩১জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এখানেও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে বিএনপি প্রার্থী ভাল অবস্থানে রয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বিনোদপুর ইউনিয়নে ৯ ভোট কেন্দ্রে মহিলা ১৩ হাজার ৪শ ৪১জন ও পুরুষ ১৪হাজার ৯৯জন মোট ২৭ হাজার ৫শ ৪০জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ ইউনিয়নটি আওয়ামীলীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত থাকলেও বিএনপি কৌশলে কয়েকবার জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এবারও তারা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। এখানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে অধ্যক্ষ রুহুল আমীন আওয়ামীলীগের বিশাল কর্মী বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করলেও এখানে আওয়ামীলীগের  বিদ্রোহী প্রার্থী এনামুল হকের কারণে তিনি বেকায়দায় পড়েছেন। শেষ অবধি তাদের দুজনের দ্বন্দের কারনে বিএনপি প্রার্থী মোহবুল আবারো পদটি দখলে নিতে পারেন।
দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নে প্রার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী অর্থাৎ ৯জন। তার মধ্যে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ৪জন বিএনপির ২জন জামায়াতের ১জন ও জাসদের ১জন। নানা সমিকরণে কে জয়ী হবেন তার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে ৭ মে’র দিকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ০৪-০৫-১৬

,