ভারতীয় বীজে সর্বনাশ > অধিক লাভের আশায় লাগানে ধানে পোকা আক্রমণে দিশেহার সীমান্তের কৃষকরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারতীয় জাতের ধানের বীজ রোপন করে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। অধিক লাভের আশায় ভারতীয় বিভিন্ন জাতের ধান লাগালেও এবার হিতে বিপরীত হয়েছে। প্রায় এক হাজার একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমদানি নিষিদ্ধ এই বীজ লাগিয়ে ক্ষতির শিকার হয়ে এখন দিশেহারা ওই এলাকায় শতাধিক কৃষক।  
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এ বছর সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের জুহুরপুর, বাতাসমোড়, বিশরশিয়া, বেলতলা এবং শিবগঞ্জ উপলোর চরপাঁকা ও দক্ষিণপাকার প্রায় এক হাজার একর জমিতে ভারতীয় বিভিন্নজাতের ধান লাগানো হয়। গোদারাজ ও গোদরা জাতের ওই ধানের বীজ বাংলাদেশে আমদানির অনুমোদন নেই। কিন্তু চোরাই পথে আসে এসব বীজ। সীমান্তের ওপার থেকে চাষীরা কিনে আনেন এসব বীজ। এর আগে কয়েক বছর ভালই ফলন পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার বেশির ভাগ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে।
ওই এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে নারায়নপুর ও পাকা ইউনিয়নের শতাধিক কৃষকের জমিতে ইন্ডিয়ান জাতের গোদারাজ বা গোদারা ধানের বীজ  লাগিয়েছেন চাষীরা। অনেক জমিতে ধানগাছ বেশ বড় হয়ে গেছে। কিন্তু ধানগাছে সিস ক্লাষ্ট, গিট ক্লাষ্ট ও নেক ক্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
নারায়নপুর ও পাঁকা ইউনিয়নের বেশ কিছু কৃষক জানালেন, তারা গত দুই বছর ধরে তারা ওই কোম্পানীর বীজ লাগিয়ে আসছেন। প্রথম বছর ভাল ফলন পেয়েছিনে। কিন্তু এ বছর সব জমির ধান সিস ক্লাষ্ট, গিট ক্লাষ্ট ও নেক ক্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত ধান নষ্ট হয়ে গেছে। নারায়নপুর মন্ডলপাড়ার কৃষক মন্টু জানান, তার প্রায় দশ বিঘা জমিতে এ ভারতীয় ওই ধানের বীজ রোপন করেছিলেন। কিন্তু এ বছর তার জমির সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। দক্ষিণ পাকার কৃষক মনজুর জানান, তিনিও প্রায় ৭ বিঘা জমিতে লাগিয়েছেছিলেন এ বীজ। ধানগাছ বড় হওয়ার আগেই গোড়াসহ মধ্য গিটে পোকা লেগে গেছে। নারায়ণপুর দেবপুরের শামসুল জানান, সাত বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে যে টাকা খরচ হয়েছে সে টাকার সমানও ধান পাওয়া যাবেনা। হান্নান বলেন, গত বছর কয়েকজনের ফলন ভাল দেখে এবার আমি এ ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু ছয়বিঘা জমির পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেল। এ এলাকার চাষীরা ভারতীয় বীজ লাগিয়ে যে লোকসানের শিকার হলো তা কাটিয়ে উঠতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তিনি জানান, কিছু এলাকায় জমির ধান বাঁচাতে বাংলাদেশি ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আজিজুর রহমান জানান, ভারতীয় বীজ ব্যবহার করায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের কিছু করার নেই। কারণ ওই সব বীজ আমদানি যেমন নিয়ম নেই তেমনি লাগানোরও নিয়ম নেই। চাষীরা যেহেতু কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়ায় নিজ উদ্যোগে এ বীজ রোপন করেছেন, সেহেতু কৃষি বিভাগ কোনোরকম সহযোগিতা করতে পারবেনা। তবে আমরা আগামীতে যাতে কোনো চাষী অনুমোদনহীন বীজ না রোপন করে সে ব্যাপারে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ মেহেদি হাসান/ ১৯-০৪-১৬