ইউপি নির্বাচন > সদরের ১৩ ইউনিয়নের ১১টিতেই বিদ্রোহী নিয়ে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে। ১৩ ইউনিয়নের ১১টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচেছন। ‘নিবৃত’ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
চতুর্থ দফার নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে মেয়াদোর্ত্তিন না হওয়ায় আলাতুলি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১৩টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করা থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনোনয়ন পেতে শুরু করেন নানামুখি তৎপরতা। এরই মাঝে ১৩ জনের হাতে তুলে দেয়া হয় নৌকা প্রতিক। এরমধ্যে অন্তত ৫ জন রয়েছেন যারা বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ‘নৌকার মাঝি’ হয়েছেন। মনোনয়ন চুড়ান্তের পরপরই অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশিরা ‘বিদ্রোহী’ হিসেবেই মাঠে নেমে পড়েনে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যা. নজরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন ১৩ ইউনিয়নের ১১টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার বিষয়টি।
দলীয় সূত্র জানায়, সুন্দরপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় হারিবুর রহমান মাষ্টারকে। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ বিশ্বাস বাবু। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হযরত আলীও।
নারায়ণপুর ইউনিয়নে নৌকা তুলে দেয়া হয় সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. আলমগীর কবীরকে। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দীন হোদা। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদাক সেলিম রেজাও।
 রানীহাটি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েয়ে মোহাসিন আলীকে। তার বিরুদ্ধে ভোট করছেন ঘোড়া প্রতিক নিয়ে বতর্মান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দুরুল হোদা। বারঘরিয়া ইউনিয়নে সাবেক বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এখানে দু’জন বিদ্রোহী প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করছেন। একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ কুমার পাল ও অন্যজন আসলাম উদ্দীন। শাহজাহানপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক লাভ করেন আব্দুস সালাম। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ।
চরাঞ্চলেরর বহুল আলোচিত ইউনিয়ন ইসলামপুর ইউনিয়নে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীনকে নৌকা প্রতিক দেয়া হয়। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহম্মেদের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান টিপু। দেবীনগর ইউনিয়নে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদ ফজলুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে বিদ্রোহ করে বসেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস।
দু’জনই একসময় বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের ‘মনোনীত’ এবং ‘বিদ্রোহ’। এমন ঘটনা ঘটেছে গোবরাতলা ইউনিয়নে। গোরাতলায় বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী নেতা আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়া নৌকা প্রতিক পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হন একসময় বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সৈয়দ শাহজামাল। চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ওমর আলী। এখানে বিদ্রোহী প্রাথী হিসেবে ভোট করছেন শহীদ রানা টিপু। চরঅনুপনগর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাদেকুল ইসলাম বাচ্চু। তার বিরুদ্ধে ভোট করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এস আব্দুল বাদি বাদশা। ঝিলিম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম লুৎফুল হাসান টুটল। এখানে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা শিরিন আক্তার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ইউনিয়নে ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের তৎপরতায় মনোনীত প্রার্থীরা নাকালের মধ্যে পড়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ৭টিরই বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন বেশ শক্তিশালী। তারা ‘সেয়ানে সেয়ানে’ অবস্থান করছেন। ওই সূত্র জানায়, মনোনয়ন চুড়ান্তের পর বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন তেকে সরে আসার জন্য নানান তৎপরতা চালানো হয়। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
এদিকে মনোনয়ন নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দীন হোদা বলেন, ‘প্রার্থী নির্ধারণের লক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের পরামর্শক্রমে বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওই সময় ভারতে যাওয়ায় ওই সভা হয়নি। পরে আরো একবার বর্ধিত সভা ডেকে নেতারা উপস্থিত না হওয়ার কারণে সভা হয়নি। আমাকে প্রার্থী হিসেবে চেয়ে নারায়ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৪০ থেকে ৪৫ জন স্বাক্ষরিত একটি রেজুলেশন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি। আমাকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রের কাছে তালিকা পাঠায়।
তিনি বলেন, ‘৭০ এর নির্বাচনে এই নৌকার জন্য আমরা ভোট করেছিলাম। আজ সেই নৌকা যার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ওই ৭০ এর নির্বাচনে তার পিতা মুসলিম লীগের হয়ে কাজ করেছে। এটা আমার জন্য অনেক বেদনাদায়ক’।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল মাহমুদ খান খান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল তথা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে যাদেরকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করে আমাদের কাছে রেজুলেশন পাঠানো হয়েছিল আমরা তাদেরকেই মনোনয়ন দেয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছি। শুধুমাত্র ইসলামপুর ইউনিয়নে সেটা করা সম্ভব হয়নি। কারণ ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তারা পলাতক রয়েছেন। তাদের মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায়নি’।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পর বিদ্রোহী প্রার্থীদের আমাদের জরুরী সভা করতে হয়েছে। ওই সভা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে’। তিনি বলেন, ‘ বিদ্রোহীরা নির্বাচন থেকে সরে না আসলে তাদের চুড়ান্ত বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করা হবে’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৬-০৪-১৬