পানির জন্য হাহাকার পদ্মাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিন নদী

ভারতের গঙ্গা বাংলাদেশে পদ্মা হয়ে ঢুকেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়েই। ভারতের নীমতিতা আর বাংলাদেশের পাকা ইউনিয়নের আইউব বিশ্বাসের টোলা পয়েন্ট দিয়ে ঢুকা পদ্মা একসময় প্রভাহিত হত উভয় দেশের সীমান্ত ঘেষেই। তখনকার পদ্মার বিশালতা এখন শুধুই কল্পনা। অব্যাহত পানি প্রত্যাহার আর জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে পদ্মার বুক জুড়ে এখন শুধু ধুধু বালু আর চর। পদ্মার পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান তিনটি নদীই ধুকছে পানির জন্য। এক সময়ের প্রমত্তা পাগলা যেন পরিণত হয়েছে খালে এবং পানির জন্য পুর্ণভবা ও মহানন্দায় যেন চলছে হাহাকার।
পদ্মা তীরবর্তী মানুষ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশে পদ্মার প্রবেশমুখ আইউব বিশ্বাসের টোলা থেকে মাত্র ১৮ কিলো মিটার দূরে ভারত সরকারের নির্মাণ করা ফারাক্কার বাধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় এবং একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে পদ্মাজুড়ে। অথচ এক সময় প্রমত্তা পদ্মায় বড় বড় ঢেউ উঠতো। ভরা পদ্মার জলের মায়াবি ডাক তীরবর্তী মানুষের ঘুম ভাঙ্গাতো। পদ্মার বুক ঘিরে মাঝি জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করতো এখন আর নেই, সেই ‘ পদ্মা নদীর মাঝি’রা। মাঝি জেলেরা পদ্মার বুকে হালের বলদ আর কলের লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে। মহানন্দা আর পাগলা নদীর দু’ তীরে হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে চলছে ইরি-বোরো আবাদ তাও আবার অগভীর নলকূপ বসিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পদ্মার মোট পানির ৯৫ ভাগ উৎসই হচ্ছে উজানের পানি। উজান অর্থাৎ ভারত থেকে পরিমিত পানি না আসলে পদ্মা ভরবেনা। নায্য পানি না পাওয়ার কারণেই শুস্ক মৌসুম শুরু হলেই নদীগুলো একেবারেই শুকিয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালের ৭ সেপ্টেমর তারিখে পদ্মায় সর্বচ্চো পানি ছিল ২৪.১৪ মিটার। পরে এ পরিমাণ পানি আর পাওয়া যায়নি। বর্ষা মৌসুমের বাইরে শুস্ক মৌসুমে পদ্মার চিত্র একেবারেই করুন। ওই সূত্র জানায়, সাধারণত পদ্মায় এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পানি প্রবাহ নিচের দিকে নেমে আসে। পদ্মার রাজশাহী বোয়ালিয়া পয়েন্টে ২০০৬ সালের শুস্ক মৌসুমে পানি প্রবাহের সমতলের লেভেল ছিল ৭ দশমিক ৭২ মিটার। একই সময়ে ২০১২ সালে ৯ দশমিক ৬৪ মিটার পানি প্রবাহ থাকলেও অন্যান্য বছরগুলোতে পানির লেভেল ছিল ৮ মিটারের আশেপাশে। বিগত এক দশকে শুস্ক মৌসুমে দেড় মিটারের মত পানি উঠানা নামা করেছে। অথচ একসময় শুস্ক মৌসুমে ১৩ মিটার পর্যন্ত পানি প্রবাহ হত। ওই সূত্র বলছেন, পানি প্রবাহ কমার ধারা অব্যহত থাকলে পরিস্থিতি করুন হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম বলেন, ‘ ভারত থেকে নায্য পানি না পাওয়াসহ বৃষ্টির পরিমাণ কমে পদ্মা নব্যতা হারিয়েছে। পদ্মার বুকে পানির যায়গায় বড় বড় চর সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পদ্মার শাখা নদীসহ অন্যান্য নদীগুলোতেও’। তিনি বলেন, ‘পানি ধরে রাখতে নদীগুলো ড্রেজিং করা দরকার। সরকার চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি পয়েন্টে ৬ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং-এর একটি প্রকল্প গ্রহণ করছে। যা শুস্ক মৌসুমে অনেকটা পানি ধরে রাখতে সহায়ক হবে’। তবে তিনি পুরো পদ্মাজুড়ে পানি ধরে রাখতে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২২-০৩-১৬