মহানন্দার বুকে ফসলের চাষ > তীরজুড়ে সবুজের সমারোহ

শুকিয়ে ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে মহানন্দা নদী। সেতুর উপর দাঁড়িয়ে মহানন্দাকে এখন আর নদী মনে হয়না। মনে হয় সরু নালা। নদীর দুই তীরে চর জেগেছে। কিন্তু জেগে উঠা চর স্বপ্ন দেখাচ্ছে কিছু ভূমিহীন কৃষককে। তারা চাষাবাদ উপযোগি করে বুনেছেন বীজ। কেউ ধান আবার কেউ গম, সরিষা, করলা, পটলসহ বিভিন্ন শাকের আবাদ করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে মহানন্দা নদী। নদীর দু-তীরে এখন সবুজের সমারোহ। একসময় প্রমত্তা থাকলেও বর্তমানে তা শুকিয়ে গেছে। পলি জমে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বরের পর মহানন্দার পানি কমতে থাকে। পানি কমতে কমতে দু-তীরের শুকিয়ে যাওয়া ভূমি এখন চাষযোগ্য কৃষি জমি। জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরের জমিতে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক। সোনার ফসল ফলানোর জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কৃষকরা স্বপ্ন  দেখছেন- ফসল ঘরে তুলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- মহানন্দায় যেসব জমি জেগে উঠেছে এগুলো অধিকাংশ সদর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এসব জমি মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রেহাইচর, টিকরামপুর, চরমোহনপুর, দক্ষিণ চরাগ্রাম, রাজারামপুর, বারঘোরিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, গোবরাতলা এলাকায়। এ সব জমিতে চাষ হচ্ছে বোরো ধান, গম, সরিষা, করলা, পটলসহ বিভিন্ন মৌসুমি শাক-সবজি। এছাড়া তৈরি করা হয়েছে বোরোর বীজতলা। ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় শুরু হয়েছে বোরোর চারা রোপণও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রেহাইচর এলাকার সরিষা চাষী আবু বাক্কার লিটন জানান, তিনি প্রায় ছয় বিঘা জমিতে সরিষা ফসল চাষ করেছেন। এছাড়াও পৌর এলাকার চরাগ্রাম এলাকার বোরো চাষী জানান, আমি নদীর ধারে পানি শুকিয়ে গেলে বেশ কয়েকবছর ধরে বেরো চাষ করছি। নদী থেকে সেচ দিতে পারায় এখানে বোরো আবাদ খুব সহজ। পৌর এলাকার বেশ কিছু জায়গায় কৃষকরা বোরো, গম, সরিষাসহ বিভিন্ন সবজি চাষের জন্য লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে দেখা গেছে। নদীর ধারের মাটি নরম থাকার কারণে চাষের খরচ কম। এছাড়া সেচের জন্য ব্যবহার করা হয় শ্যালো মেশিন। অন্যদিকে বারোঘরিয়া ইউনিয়নের বোরো চাষী গৌতম কুমার দাস জানান, আমরা বন্যা শেষ হবার পরপরই এখানে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করি। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে বোরো আবাদসহ অন্যান্য সময় সরিষা, শাক-সবজি চাষ করে থাকি। তিনি আরো জানান, চাষের খরচ এবং শ্রমিক কম লাগার কারণে চরের জমিতে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। এরফলে চাষীরা ফসল বিক্রি করে বেশি লাভবান হন। শ্রীরামপুর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার জমিতে বর্তমানে গম, মসুর ও বাদাম রয়েছে। আমি প্রায় ৩৫ বিঘা জমি চাষ করেছি। এছাড়া বোরো ধান চাষ করব প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে। বীজতলা তৈরি রয়েছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে জমিতে চাষ দেব। আশা করছি, আগামী দেড় সপ্তাহের মধ্যে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারব।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আজিজুর রহমান বলেন, নদীর চরের জমি খুবই উর্বর তাই ফসল উৎপাদনও বেশি হয়। এ কারণে কৃষকের মাঝে নদীর চরে ফসল ফলানোর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহানন্দা নদীর ধারে নিচু জায়গায় ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বেরো চাষ, ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৬১০ হেক্টর জমিতে মাস কলাই, ১১৫ হেক্টর জমিতে করলা ও পটলসহ প্রায় ১১০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও নদীর তীরঘেঁষা জমিতে চাষাবাদের জন্য কৃষককে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ মেহেদি হাসান/ ১১-০২-১৬