১৭৩ টাকা ফি দিতেই খরচ ২০০ !

একজন শিক্ষানবিশ পরিবহন চালকের লাইসেন্স নবায়ন ফি সরকারিভাবে নির্ধারিত রয়েছে ১শ ৭৩ টাকা। আর এই ১শ ৭৩ টাকা এখন সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালককে  যাতায়ত খরচই গুনতে হচ্ছে দু’শ টাকারও বেশী। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) যাবতীয় ফি গেল প্রায় দেড় মাস ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্ধারিত ব্যাংকে দিতে না পারায় এই আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তির মুখে পড়েছেন পরিবহন মালিক ও চালকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৪৮ কি.মি. দূরে রাজশাহীতে গিয়ে নির্ধারিত ব্যাংকে ফি জমা দিতে হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। ফি জমা দেয়া নিয়ে মালিক-চালকদের দুর্ভোগ চরমে উঠলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যাংকে ফি জমা নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছেনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নির্ধারিত ব্যাংকের চুক্তি অনুযায়ী বাস, ট্রাক, মটরসাইকেলসহ অন্যান্য যান্ত্রিক পরিবহনের রেজিস্ট্রেশন ফি, লাইসেন্স ফি, নবায়ন ফিসহ অন্যান্য ফি এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের সাউথ ইস্ট ব্যাংকে নেয়া হতো। পরে তা নেয়া হতো প্রাইম ব্যাংকে। প্রাইম ব্যাংকের পর সিটি ব্যাংকে ফি নেয়া চলাকালে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী দেশজুড়ে মটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশনের হিড়িক পড়ায় সিটি ব্যাংকে প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মটর সাইকেল মালিকদের কয়েক দফা ‘অনাকাঙখিত’ ঘটনাও ঘটে। সিটি ব্যাংক ফি নেয়া বন্ধ করে দেয়ায় সর্বশেষ ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবহনের যাবতীয় ফি গ্রহণ করা হচ্ছিল। কিন্তু এখানেও ‘জমাদানকারীদের দুর্ব্যবহার’র অজুহাত দেখিয়ে গেল ১৪ জানুয়ারি থেকে ফি নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে পরিবহন মালিকদের পরিবহনের যাবতীয় ফি জমা দিতে হচ্ছে রাজশাহী কিংবা দেশের অন্যান্য জেলার বিআরটিএ’র ফি আদায়কারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নির্ধারিত ব্যাংকে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মটরসাইকেলসহ অন্যান্য প্রায় ১৫ হাজার পরিবহন মালিক ও চালকের ভোগান্তি বেড়েছে চরম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এমকেএস লুৎফর রহমান ফিরোজ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যাংকে ফি নেয়া বন্ধ করে দেয়ায় আমরা দুর্ভোগের মুখে পড়েছি। এখন আমাদের রাজশাহীতে গিয়ে ফি দিতে হচ্ছে। কখন কখন রাজশাহীতে গিয়ে ফি জমা দিনে না পারলে আমাদের আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফিরে আসতে হচ্ছে। এতে আমাদের যাতায়াত খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘ নিধারিত ব্যাংকে তাদের নিয়মিত গ্রাহকের সঙ্গে পরিবহন মালিকদের মধ্যে ফি জমাদানকারী যোগ হওয়া ব্যাংকে ‘চাপ’ বৃদ্ধি হওয়াটা স্বাভাবিক। এই ‘চাপ’ কমাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিআরটিএ কার্যালয়ের সঙ্গে নির্ধারিত ব্যাংকের বুথ চালু করে ফি গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে জনদুর্ভোগের কথা এ মাসের আইন শৃংখলা রক্ষা কমিটি’র সভাতে উঠানো হয়েছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ট্রাক ও মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ ব্যাংকের কারণে আমরা লাইসেন্স নবাবয়নসহ অন্যান্য ফি দিতে পারছিনা। অথচ সড়ক পথে বিআরটিএ’র কাছে জরিমান গুনতে হচ্ছে বহু টাকা’।
ভুক্তভোগী মটর সাইকেলসহ অন্যান্য পরিবহন মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ এখন রাজশাহী যেতে বাস ভাড়া ও সময় দু’টোই অপচয় হচ্ছে। আবার যথাযথ কাগজপত্র দেখা না পারার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বহু টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। ইদানিং ভ্রাম্যমাণ আদালতের বাইরে মোড়ে মোড়ে পুলিশও গাড়ি ধরছে। তাদের কাছ থেকে গাড়ি ছাড়াতেও গুনতে হচ্ছে তিশ থেকে ৫ শ টাকা পর্যন্ত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বড়ইন্দার মোড়ে অবস্থিত ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মাহমুদুন নবী বলেন, পরিবহন ফি’র মধ্যে বিশেষ করে মটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি জমা নিতেই দীর্ঘ চাপ সৃষ্টি হতো। ব্যাংকের বাইরে প্রতিদিন লম্বা লাইন সৃষ্টি হতো। এনিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকতো। এর বাইরে একশ্রেণীর দালাল জমাদানকারীদের কাছ থেকে আলাদা টাকা নেয়া শুরু করলে ব্যাংকের সুনাম ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই ফি নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে’।
এদিকে জেলা প্রশাসনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া ফি নেয়া ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে অনুরোধ করা হলেও তারা সে অনুরোধ রাখছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) স্বদেশ কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ এ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন মালিকদের নানা অনুযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও বিআরটিএ’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে’।


চাঁপাইনবাগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৩-০২-১৬