চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন > তিন দলেই সমানে সমান
বিএনপি-জামায়াতে ‘ঘাঁটি’ হিসাবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজ দল ও জামায়াতের সঙ্গে আন্ত:কোন্দলে পুড়ছে বিএনপি। আর আধিপত্যের দিক থেকে শীর্ষে থাকা জামায়াত গোপনেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দুই দল থেকে ভোটের অঙ্কে ‘কিছুটা পিছিয়ে’ থাকা আওয়ামী লীগ উন্নয়ন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে জেতার প্রত্যয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচনে স্বতন্ত্রের আড়ালে জামায়াত, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সমান সমান লড়াইয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে নির্বাচনী হাওয়া ও প্রচার প্রচারণা থেকে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
স্বাধীনের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত হয়ে চেয়্যারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের নেতা সিরাজুল হক সনি মিয়া। পরের নির্বাচনে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন জাসদ নেতা এহসান আলী খান চেয়্যারমান নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মরহুম অধ্যাপক জিকেএম শামসুল হুদা। এরপর ১৯৯৯ সালের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিজস্ব প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশই নেয়নি। সমর্থন জানিয়েছিল মঞ্জুর হোসেন ও আব্দুল মান্নান সেন্টুকে। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চেয়্যারম্যান পদটি দখলে চলে যায় বিএনপি, জামায়াত ও জাসদ নেতাদের। এই সময়ে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ব্যানারে জাসদ নেতা আব্দুল মান্নান সেন্টু দুই দফা নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে চেয়ারম্যান পদটি দখলে নেয় জামায়াত। নির্বাচিত হন জামায়াত নেতা অধ্যাপক লতিফুর রহমান। ১৯৯৯ সালের পৌর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত দলীয় প্রার্থীর সমর্থন দিয়ে অংশ না নেওয়ার সুযোগে দীর্ঘ ২৪ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার দখল ফিরে পায়। চেয়ারম্যান হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দিন ম-ল। ২০০৪ সালে আবার দখলে চলে আসে জামায়াত। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন জামায়াত নেতা অধ্যাপক আতাউর রহমান। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে ব্যাপক উত্থান নিয়ে আর্বিভূত হয় বিএনপি। বিএনপি প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতিন নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৭৫ সালের পর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ একবারও নির্বাচিত হতে পারেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি পৌরসভার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ দুইবার চেয়ারম্যান পদটি পায়। একবার বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত বর্জনের সুবাদে। স্বাধীনের পর অন্যান্য নির্বাচনে জামায়াত তিনবার, বিএনপি একবার ও সর্বদলীয় ব্যানারে জাসদের নেতা নির্বাচিত হয়।
বিএনপিতে আন্ত:কোন্দল:
বিএনপি-জামায়াতে ‘ঘাঁটি’ হিসাবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজ দল ও জামায়াতের সঙ্গে আন্ত:কোন্দলে পুড়ছে বিএনপি। একদিকে জামায়াতে প্রভাব; অন্যদিকে নিজ দলেই ‘বিদ্রোহী’ নিয়ে মহামসিবতে পড়েছে দলটি। রাজনীতির ‘কৌশল’ হিসাবে জামায়াতের সাবেক এক নেতাকে বিএনপির প্রার্থী বানানোয় ক্ষোভ ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে বিদ্রোহে রুপ নিয়েছে। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত মাওলানা আব্দুল মতিন বিদ্রোহীর কাতারে সামিল হয়েছেন। আর কোনো মতেই সরে দাঁড়াবেন না এমন প্রত্যয়ও জানিয়েছেন তিনি। তবে আব্দুল মতিন নির্বাচিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপির মূল¯্রােত (হারুন-পাপিয়া) থেকে ছিটকে পড়েন। অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারার সমালোচনাও রয়েছে বিএনপিতে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গতবার জয়ী হওয়ার পর পৌর নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির মনোবল আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এবারের নির্বাচনী হাওয়া শুরুর দিকে বিএনপি পৌর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপুকে প্রার্থী ধরে কাজ শুরু করে। কিন্তু নিজস্ব কিছু ভোটার ও জামায়াত থেকে কিছু সুবিধা নিতে পারবেন এমন প্রত্যাশায় দলে ভিড়িয়েছেন আগের জামায়াতের হয়ে নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক আতাউর রহমানকে। জামায়াতের সাবেক এই নেতাকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে জামায়াতের সাবেক নেতাকে দলে ভিড়িয়ে মনোনয়ন দেওয়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত মাওলানা আব্দুল মতিন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তবে দলের মূল¯্রােতে বাইরে গিয়ে কতটুকু ভাল করবেন দেখা যাবে আসন্ন এই নির্বাচনে।
ভোটের অঙ্কে পিছিয়ে আওয়ামী লীগ:
২০০৮ সালে আগ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো আসনে জিততে পারেনি আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবঞ্জ পৌরসভায় ভোটের হিসেবটা আলাদা। এখানে ভোটের অঙ্কে ‘কিছুটা পিছিয়ে’ আওয়ামী লীগ। তবে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। পিছিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও এগিয়েছে। কিছুটা উন্নতি ও চলতি মেয়রের উন্নয়নে ব্যর্থতা সুবাদে এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিন্দন্দ্বীতায় আসার সুযোগ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের। এবারের নিবাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিন্দনব্দ¦ীয়তা করছেন সামিউল হক লিটন। লিটন এক সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। নব্বয়ের দশকের শুরুতে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সম্পাদক পর্যায়ের পদে ছিলেন। এরপর রাজনীতির মূল¯্রােত থেকে বেরিয়ে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লিটন মেয়র নির্বাচন করার প্রত্যয়ে আবারো রাজনীতির মাঠে ফিরে এসে দলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, পৌর নির্বাচনে এক যুবলীগ নেতাসহ পাঁচজন মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বযে বোর্ডের চারজনই লিটনকে একক প্রাথী হিসাবে নির্ধারণ করে কেন্দ্রের কাছে উপস্থাপন করে। কেন্দ্র লিটনের হাতেই তুলে দেয় দলীয় প্রতীক নৌকা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া লিটন আওয়ামী লীগে একেবারেই নতুন প্রার্থী। তবে উন্নয়নে পৌরসভার পিছিয়ে পড়া ও ক্ষমতাসীনদের প্রভাব নির্বাচনে তার জন্য সহায়ক হিসাবে কাজ করছে।
স্বতন্ত্র জামায়াত:
গত তিন দশকে তিনবার চেয়্যারমান ও মেয়র পদ দখলে নেওয়া জামায়াত এবার নির্বাচনে এসেছে স্বতন্ত্র লেবাসে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিন্দন্দ্বীতা করছেন জেলা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলাম। ভোটযুদ্ধ শুরু হলেও আধিপত্যে থাকা জামায়াতের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না। তবে বসে নেই তারা। অনেকটা ‘গোপনেই’ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনী কার্যক্রম। তাদের বিশাল কর্মীবাহিনীও কাজ করে যাচ্ছে নীরবে নিরবেই। হোক বিএনপি সমর্থনে কিংবা স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচনে জিতার প্রত্যয় রয়েছে এ দলটির।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য:
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া সামিউল হক লিটন চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, শেখ হাসিনা স্বাভাবিক নিয়মেই মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি জানেন কার মাধ্যমে নৌকা প্রতীক নির্বাচনে পার পাবে। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছি। নৌকা প্রতীককে জেতাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছি। জনগণ আমাকে বিজয়ী করবে। যা আওয়ামী লীগের পরবর্তী এমপি নির্বাচনে সহায়ক হবে।’
জামায়াতের পক্ষ থেকে আগে নির্বাচন করলেও বিএনপির আহ্বানে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি উল্লেখ করে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আতাউর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হলেও গত নির্বাচনে আমাকে বাদ দেওয়া হয়। সেই জন্য স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের চিন্তা করছিলাম। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে এমন আইন পাস হওয়ার পর বিএনপি থেকে আহ্বান জানানো হলে বিএনপিতে যুক্ত হয়েছি। বিএনপির প্রার্থী থাকার পরও আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমাকে তারা স্বতস্ফুর্তভাবে গ্রহণও করেছে। নির্বাচনে জিতে জনগণের আশা-আকঙ্খার বাস্তবায়নে কাজ করবো।’
নিজ দলের চলমান মেয়র থাকার পরও কেন জামায়াতের সাবেক নেতাকে বিএনপিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ‘ভোটার খাবে’ এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া বলেন, জামায়াত বিএনপি হিসাবে নয়, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা মতিনকে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর দলের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। এক মিলাদ মাহফিলে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সুমতি কামনা করেছেন। কাজেই মতিনের বিভিন্ন কাজে দলের নেতাকর্মীদেও মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে। তাকে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিলেও জেতাতে পারতাম না।’
বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘অবৈধ অর্থের বিনিময়ে জামায়াত থেকে বহিস্কৃত নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। রাতের আধারে টাকা বিনিময়ে আমাকে কিছুই না জানিয়ে জামায়াতের সাবেক নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি কোনো মতেই মাঠ থেকে সরছি না। জনগনের কথায় রাজনীতি করছি। মাঠে আছি, মাঠেই থাকবো।’
এদিকে, নির্বাচনী প্রতিক্রিয়া জানার জন্য জামায়াতের প্রার্থী নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৩-১২-১৫
স্বাধীনের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত হয়ে চেয়্যারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের নেতা সিরাজুল হক সনি মিয়া। পরের নির্বাচনে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন জাসদ নেতা এহসান আলী খান চেয়্যারমান নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মরহুম অধ্যাপক জিকেএম শামসুল হুদা। এরপর ১৯৯৯ সালের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিজস্ব প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশই নেয়নি। সমর্থন জানিয়েছিল মঞ্জুর হোসেন ও আব্দুল মান্নান সেন্টুকে। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চেয়্যারম্যান পদটি দখলে চলে যায় বিএনপি, জামায়াত ও জাসদ নেতাদের। এই সময়ে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ব্যানারে জাসদ নেতা আব্দুল মান্নান সেন্টু দুই দফা নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে চেয়ারম্যান পদটি দখলে নেয় জামায়াত। নির্বাচিত হন জামায়াত নেতা অধ্যাপক লতিফুর রহমান। ১৯৯৯ সালের পৌর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত দলীয় প্রার্থীর সমর্থন দিয়ে অংশ না নেওয়ার সুযোগে দীর্ঘ ২৪ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার দখল ফিরে পায়। চেয়ারম্যান হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দিন ম-ল। ২০০৪ সালে আবার দখলে চলে আসে জামায়াত। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন জামায়াত নেতা অধ্যাপক আতাউর রহমান। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে ব্যাপক উত্থান নিয়ে আর্বিভূত হয় বিএনপি। বিএনপি প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতিন নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৭৫ সালের পর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ একবারও নির্বাচিত হতে পারেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি পৌরসভার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ দুইবার চেয়ারম্যান পদটি পায়। একবার বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত বর্জনের সুবাদে। স্বাধীনের পর অন্যান্য নির্বাচনে জামায়াত তিনবার, বিএনপি একবার ও সর্বদলীয় ব্যানারে জাসদের নেতা নির্বাচিত হয়।
বিএনপিতে আন্ত:কোন্দল:
বিএনপি-জামায়াতে ‘ঘাঁটি’ হিসাবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজ দল ও জামায়াতের সঙ্গে আন্ত:কোন্দলে পুড়ছে বিএনপি। একদিকে জামায়াতে প্রভাব; অন্যদিকে নিজ দলেই ‘বিদ্রোহী’ নিয়ে মহামসিবতে পড়েছে দলটি। রাজনীতির ‘কৌশল’ হিসাবে জামায়াতের সাবেক এক নেতাকে বিএনপির প্রার্থী বানানোয় ক্ষোভ ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে বিদ্রোহে রুপ নিয়েছে। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত মাওলানা আব্দুল মতিন বিদ্রোহীর কাতারে সামিল হয়েছেন। আর কোনো মতেই সরে দাঁড়াবেন না এমন প্রত্যয়ও জানিয়েছেন তিনি। তবে আব্দুল মতিন নির্বাচিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপির মূল¯্রােত (হারুন-পাপিয়া) থেকে ছিটকে পড়েন। অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারার সমালোচনাও রয়েছে বিএনপিতে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গতবার জয়ী হওয়ার পর পৌর নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির মনোবল আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এবারের নির্বাচনী হাওয়া শুরুর দিকে বিএনপি পৌর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপুকে প্রার্থী ধরে কাজ শুরু করে। কিন্তু নিজস্ব কিছু ভোটার ও জামায়াত থেকে কিছু সুবিধা নিতে পারবেন এমন প্রত্যাশায় দলে ভিড়িয়েছেন আগের জামায়াতের হয়ে নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক আতাউর রহমানকে। জামায়াতের সাবেক এই নেতাকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে জামায়াতের সাবেক নেতাকে দলে ভিড়িয়ে মনোনয়ন দেওয়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত মাওলানা আব্দুল মতিন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তবে দলের মূল¯্রােতে বাইরে গিয়ে কতটুকু ভাল করবেন দেখা যাবে আসন্ন এই নির্বাচনে।
ভোটের অঙ্কে পিছিয়ে আওয়ামী লীগ:
২০০৮ সালে আগ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো আসনে জিততে পারেনি আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবঞ্জ পৌরসভায় ভোটের হিসেবটা আলাদা। এখানে ভোটের অঙ্কে ‘কিছুটা পিছিয়ে’ আওয়ামী লীগ। তবে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। পিছিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও এগিয়েছে। কিছুটা উন্নতি ও চলতি মেয়রের উন্নয়নে ব্যর্থতা সুবাদে এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিন্দন্দ্বীতায় আসার সুযোগ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের। এবারের নিবাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিন্দনব্দ¦ীয়তা করছেন সামিউল হক লিটন। লিটন এক সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। নব্বয়ের দশকের শুরুতে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সম্পাদক পর্যায়ের পদে ছিলেন। এরপর রাজনীতির মূল¯্রােত থেকে বেরিয়ে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লিটন মেয়র নির্বাচন করার প্রত্যয়ে আবারো রাজনীতির মাঠে ফিরে এসে দলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, পৌর নির্বাচনে এক যুবলীগ নেতাসহ পাঁচজন মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বযে বোর্ডের চারজনই লিটনকে একক প্রাথী হিসাবে নির্ধারণ করে কেন্দ্রের কাছে উপস্থাপন করে। কেন্দ্র লিটনের হাতেই তুলে দেয় দলীয় প্রতীক নৌকা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া লিটন আওয়ামী লীগে একেবারেই নতুন প্রার্থী। তবে উন্নয়নে পৌরসভার পিছিয়ে পড়া ও ক্ষমতাসীনদের প্রভাব নির্বাচনে তার জন্য সহায়ক হিসাবে কাজ করছে।
স্বতন্ত্র জামায়াত:
গত তিন দশকে তিনবার চেয়্যারমান ও মেয়র পদ দখলে নেওয়া জামায়াত এবার নির্বাচনে এসেছে স্বতন্ত্র লেবাসে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিন্দন্দ্বীতা করছেন জেলা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলাম। ভোটযুদ্ধ শুরু হলেও আধিপত্যে থাকা জামায়াতের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না। তবে বসে নেই তারা। অনেকটা ‘গোপনেই’ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনী কার্যক্রম। তাদের বিশাল কর্মীবাহিনীও কাজ করে যাচ্ছে নীরবে নিরবেই। হোক বিএনপি সমর্থনে কিংবা স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচনে জিতার প্রত্যয় রয়েছে এ দলটির।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য:
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া সামিউল হক লিটন চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, শেখ হাসিনা স্বাভাবিক নিয়মেই মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি জানেন কার মাধ্যমে নৌকা প্রতীক নির্বাচনে পার পাবে। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছি। নৌকা প্রতীককে জেতাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছি। জনগণ আমাকে বিজয়ী করবে। যা আওয়ামী লীগের পরবর্তী এমপি নির্বাচনে সহায়ক হবে।’
জামায়াতের পক্ষ থেকে আগে নির্বাচন করলেও বিএনপির আহ্বানে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি উল্লেখ করে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আতাউর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হলেও গত নির্বাচনে আমাকে বাদ দেওয়া হয়। সেই জন্য স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের চিন্তা করছিলাম। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে এমন আইন পাস হওয়ার পর বিএনপি থেকে আহ্বান জানানো হলে বিএনপিতে যুক্ত হয়েছি। বিএনপির প্রার্থী থাকার পরও আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমাকে তারা স্বতস্ফুর্তভাবে গ্রহণও করেছে। নির্বাচনে জিতে জনগণের আশা-আকঙ্খার বাস্তবায়নে কাজ করবো।’
নিজ দলের চলমান মেয়র থাকার পরও কেন জামায়াতের সাবেক নেতাকে বিএনপিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ‘ভোটার খাবে’ এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া বলেন, জামায়াত বিএনপি হিসাবে নয়, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা মতিনকে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর দলের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। এক মিলাদ মাহফিলে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সুমতি কামনা করেছেন। কাজেই মতিনের বিভিন্ন কাজে দলের নেতাকর্মীদেও মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে। তাকে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিলেও জেতাতে পারতাম না।’
বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘অবৈধ অর্থের বিনিময়ে জামায়াত থেকে বহিস্কৃত নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। রাতের আধারে টাকা বিনিময়ে আমাকে কিছুই না জানিয়ে জামায়াতের সাবেক নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি কোনো মতেই মাঠ থেকে সরছি না। জনগনের কথায় রাজনীতি করছি। মাঠে আছি, মাঠেই থাকবো।’
এদিকে, নির্বাচনী প্রতিক্রিয়া জানার জন্য জামায়াতের প্রার্থী নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৩-১২-১৫