চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা > নির্ধারিত প্রার্থী নিয়ে মাঠে জামায়াত বিএনপি, হ-য-ব-র-ল আওয়ামীলীগে

উত্তর জনপদের শতবছরের প্রাচীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে আগে থেকেই মাঠে বিএনপি ও জামায়াত অবস্থান নিলেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিনে আগের দিন গতকাল বুধবার আওয়ামীলীগ মেয়র প্রার্থী চুড়ান্ত করলেও ঠিক করতে পারেনি কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতি দলীয় সমর্থন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে একজন করে কাউন্সিলর প্রার্থী কাজ করলেও প্রতি ওয়ার্ডে ৪ থেকে ৫ জন করে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামীলীগের সমর্থন প্রত্যাশিরা।
বৃটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভাভায় দেশ স্বাধীনের পরপরই আওয়ামীলীগ নেতা সেরাজুল হক সনি মিয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও গেল তিন দশকেরও বেশী সময় চেয়ারম্যান ও মেয়র পদটি দখলে নেয় বিএনপি, জামায়াত ও জাসদ নেতারা। মাঝে বিএনপি, জামায়াতের নির্বাচন বয়কটের ‘সুবাদে’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি মইনুদ্দীন মন্ডল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। পরে আবারও তা চলে যায় জামায়াত ও বিএনপি’র দখলে। সর্বশেষ মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মাওলানা আব্দুল মতিন।
পৌর নির্বাচনকে ঘিরে শক্ত অবস্থানে থাকা জামায়াত ও বিএনপি তাদের প্রার্থী নির্ধারণ করে অনেক আগেই। এরমধ্যে বিএনপি চমক সৃষ্টি করে বর্তমান মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিনকে বাদ দিয়ে সাবেক জামায়াত নেতা ও সাবেক মেয়র অধ্যাপক আতাউর রহমানকে দলে ভিড়িয়ে প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই আতাউর রহমান সংগঠনের ভেতরে ও সাধারণ মানুষের মাঝে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ বিএনপি’র কেন্দ্র থেকে আতাউর রহমানকেই প্রার্থী করা হয়েছে। এদিকে মেয়র প্রার্থীর বাইরে ১৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন জানিয়ে দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন চুড়ান্ত হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মতি বলেন, ‘ আমরা আগে থেকেই নির্ধারিত প্রার্থীদের মাঠে কাজ করার জন্য বলে দিয়েছিলাম। সম্প্রতি ১৩ টি ওয়ার্ডে চুড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি দু’টি ওয়ার্ডেও চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে’।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে প্রকাশ্যে গণ সংযোগে দেখা না গেলেও অনেকটাই ‘আড়ালে’ সাংগঠনিকভাবেই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলীয় ফোরামে মেয়র প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের নাম চুড়ান্ত করার সময়েই চুড়ান্ত করা হয় ১৫ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ৫ সংরক্ষিত মহিল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর তালিকাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জামায়াত নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় নির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে আমারা কাজ করছি। আমাদের প্রার্থীরাও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘পরিস্থিতি অনুকুল’ আমাদের প্রার্থীরা সব জায়গায় যেতে না পারলেও এরবাইরে নির্ধারিত নেতারা প্রার্থীর পক্ষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন’।
বিএনপি প্রার্থীদের বিভিন্ন কমসুচিতে সরব উপস্থিতি আর জামায়াতে ‘গোপন’ তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরে চললেও আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থন নির্ধারণই হয়নি। মেয়র পদে এক যুবলীগ নেতাসহ আওয়ামীলীগের ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশা করে তৎপরতা চালায়। দলীয় সূত্র জানায়, এরমধ্যে বুধবার দুপুরে সামিউল হক লিটন মেয়র প্রার্থী চুড়ান্ত হয়। মেয়র প্রার্থী চুড়ান্ত হলেও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ‘ক্রিয়াশীল’ রয়েছে ৪ থেকে ৫ জন করে। ওই সূত্র জানায়, ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী চুড়ান্ত করতে তৃণমুলের নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির নিদের্শে প্রথম দফায় ১০ হাজার টাকা মুল্যে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় আবেদন ফরম জমা দিলেও তাদের টাকা ফেরত দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় গত ২৭ নভেম্বর কাউন্সিলর প্রার্থীদের আবারও আবেদন করার কথা বলে ব্যাপক সংখ্যক কাউন্সিল পদে সমর্থন প্রত্যাশি আবেদন করে। দলীয় সূত্র জানায়, প্রতি ওয়ার্ডে ৫ থেকে ৬ জন করে আবেদন করে। দ্বিতীয় দফার এই আবেদনগুলোও ‘অন্ধকারে’ পড়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, ‘খেয়াল খুশি মত সংগঠন চালানো হচ্ছে। সভাপতি আবেদন করতে বলে সেই আবেদন ফিরে দেয়া হলো। পরে আবেদন নিয়ে পরেরদিনই প্রার্থী সমর্থন চুড়ান্ত করার কথা। কিন্ত সাত দিন পার হতে চললো আবেদনগুলো নিয়ে নেতারা মিটিংই করলো না’।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, জেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ওর্য়াডে ওয়ার্ডে ৪ থেকে ৫ জন করে দলীয় নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিলের চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে এবং কাজ করছে। এতে করে ফলাফলে ‘হোচট’ খাওয়ার শংকা করছেন স্থানীয় নেতারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৪-১২-১৫