হতাশায় দিন পার করছে শিবগঞ্জের সরকারি সুবিধা বঞ্ছিত ৩১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত ৩১টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়করণ না হওয়ায় চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এক বুক আশায় বছরের পর বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওযা ১২৪ জন শিক্ষক যার সিংহভাগই নারী সরকারি সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় মানববেতর জীবন যাপন করছে। তবুও তার হাল ছাড়েননি শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি পিএসসি পরীক্ষায় এ সব বিদ্যালয় থেকে প্রায় চার শ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর আগে নিয়ম কানুন অনুসরণ করেই এসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়গুলো যথারিতি চালানো হয় শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, এলাকায় শিক্ষার প্রসার চায়না এমন একটি মহল স্কুলগুলির ষড়যন্ত্র করছেন এবং এলাকায় অপপ্রচার করে স্কুলগুলি বন্ধের চেষ্টা করছেন। স্কুলগুলি যাতে সরকারি অনুমোদন না পায় সেই চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এই ৩১ টি বিদ্যালয়ের বাইরে আরো ২০ টি বিদ্যালয় শিবগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বিদ্যালয়গুলোওে শতাধিক শিক্ষক ও কয়েক শ শিক্ষার্থী রয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইউনুস আলী ভূঁইয়া জানিয়েছেন, এই ৩১ টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে অধিকাংশই ভাল ভাবে চলছে। স্কুলগুলি পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ও অবকাঠামো রয়েছে। শিক্ষকরা এলাকাবাসীর সহায়তায় ঠিকমত পাঠদান করছেন।
প্রত্যন্ত চর এলাকায় স্কুলের প্রয়োজনীয়তা থেকেই স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং চলমান আছে বলে তিনি জানান।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে এসব স্কুলের প্রতিটিতে ১২৫ থেকে ১৭৫ জন করে গড়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্তাঞ্চলে স্থাপিত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি সরেজমিনে ঘুরে শিক্ষক শিক্ষিকা ও এলাকাবাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলো ১৯৮৪-৮৯ সাল থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে চালু হয়। তবে এগুলি দীর্ঘদিন জাতীয়করণ না হওয়ায় শিক্ষকরা এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে স্কুল ছাড়েন। অনেকেই আবার আশায় বুক বেধে অনেকগুলি স্কুল চালুও রাখেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকাবাসী আবারো আশায় বুক বাঁধেন।  ফলে ২০০৯ সালের শুরুতে পুনুরায় স্কুলগুলির কার্যক্রম শুরু হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে,  শিবগঞ্জ উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। এই হিসেবে এই উপজেলায় ন্যুনতম তিন শতাধিক প্রাথমিক স্কুল দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিবগঞ্জে মোট ২৩৬টি জাতীয়করণকৃত স্কুল রয়েছে। প্রতি ২ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি প্রাথমিক স্কুল হতে পারে। চরাঞ্চলে মাত্র ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্কুল করার নীতিমালা রয়েছে। সূত্র মতে, সর্বশেষ যেসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেগুলির অধিকাংশই উপজেলার পদ্মা বিধৌত চরাঞ্চলে অবস্থিত। সরকারের বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন নীতিমালার আওতায় স্কুল নেই এমন গ্রামে স্কুল করার উদ্যোগ নেয়া হযেছে। সরকারিভাবে এসব স্কুলে বই দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিউব ওয়েল ও ল্যাট্রিন করে দেওয়া হয়।
এদিকে শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, মোট ৫১ টি স্কুলের মধ্যে ৩১ টি স্কুলের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব স্কুল ২০১২ সালের ২৭ মের আগে প্রতিষ্ঠিত যেগুলি সরকারের নীতিমালা মেনেই চলছে। এই ৩১টি স্কুলের মধ্যে ২টির রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে। ৮টি স্কুল চালুর বিষয়ে সরকারীভাবে অনুমোদন করা হয়েছে। আর ২১টি স্কুল চালুর বিষয়ে সরকারী অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এসব স্কুলের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এসব স্কুল অনুমোদন ও জাতীয়করণে সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীও চাহিদাপত্র দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ২৩-১১-১৫

,