দু’ শ বছরের প্রাচীন তর্তীপুর মহাশশ্মান পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়

দু’ শ বছরেরও অধিক প্রাচীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের তর্তীপুরের সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের বৃহত্তম মহাশশ্মান সংস্কারের অভাবে অবহেলায়, অযত্নে পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই। অথচ মহাশশ্মানটি শুধু শিবগঞ্জের নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ গোটা উত্তারঞ্চলে ঐতিহ্য বহন করে আসাছে।
সরজমিনের এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তর্তীপুর মহাশশ্মানটির সঠিক কোন ইতিহাস জানা না গেলেও তাদের ধারণা মতে দুইশত বছরেরও অধিক পুরাতন এ মহাশশ্মানটি। এ  মহাশশ্মানের পার্শেই অবস্থিত জহ্নি  আশ্রমে প্রতিবছরে  মাঘ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার হিন্দুধর্মালম্বী গঙ্গাস্মান করতে এসে মহাশশ্নানে আশ্রয় নেয়। শুধু তাই নয় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দুদের শহদেহ এখানে দাহ করা বা সমাধী দেয়া হয়। প্রায় ১৮ বিঘার এ শশ্মান বর্তমানে অরক্ষিত। নেই কোনা প্রাচীর, নেই কোন  রাস্তা । সেই সাথে নেই কোন প্রহরী  নেই কোনাপুরোহিত নেই কোন কেয়ার টেকার, নেই পর্য্প্তা বিদ্যুত ব্যবস্থা। একটি অফিস আছে তাও আবার বগুদিন যাবত সংস্কার না করায় সমস্যায় জর্জরিত।
শশ্মান দেখতে আসা শিবগঞ্জ কোট বাজারে শ্রী রতন কুমার, মোবÍকপুরের শ্রী উত্তম কুমার, গণপতি রারিক, ধাইনগরের শ্রী সুবোধ চন্দ্র দাসসহ প্রায় ৪০/৫০ জন হিন্দুধমালম্বী জানান আমরা দূরদূরান্ত থেকে শবদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে এসে তত্বাবধায়ক না থাকার ফলে সৎকারের উপকরণাদি ঠিকমত না পাওয়ায় চরম সমস্যায়  পড়ি। শহদেহ নদীর তীরে নিয়ে যাবার জন্য কোন রাস্তা নেই। শহদেহ পুড়ানোর জন্য কোন চুল্লী নেই। বিদ্যুত না থাকায় রাতের বেলা আমরা শহ দেহের সৎকার করতো পারিনা। ফলে সারারাত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। মহাশশ্মনটি অত্যান্ত নিচু হওযার কারনে বর্ষা ও বন্যার সময় আমরা শহদেহ  দাহ করতে বা সমাধী  দিতে না পারায় অনেক সময় কোন মুসলমানের জমিতে সমাধী দিতে হয়।
তর্তীপুর মহাশশ্মানে সভাপতি শ্রী সাধন মনিগ্রাম, সাধারণ সম্পাদক শ্রী কমল ত্রিবেদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী বাবুল কুমার ঘোষ,  শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পদক শ্রী প্রদীপ বড়বড়িয়া, শ্রী প্রশান্ত কুমার,  শ্রী কুনাল মুখার্জী, দলিত সমিতির সাধারন সম্পাদক শ্রী দিলিপ কুমার দাস, শ্রী ভোজন কর্মকারের  সাথে আলাপ করলে উপরোক্ত সমস্যাগুলির কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের মহশশ্মানটি অত্যান্ত নিচু হওয়ার কারনে বর্ষা ও বন্যার সময় আমরা শহদেহ মহাশশ্মানের অফিসের পিছনে ও  আশেপাশে দায়ন  করতে বাধ্য হয়েছি। তারা আরো জানান শশ্মান ভরাট, রাস্তা নির্মাণ, বিদ্যুতায়তন, ৫/৬ চুল্লী তৈরী ও সিঁড়ি নির্মানসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন অধিদপ্তরে আবেদন করা আছে। তবে আমরা দীর্ঘদিন যাবত ভূমি দস্যুদের দ্বার মহাশশ্মানে জমি দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭টি মামলা পরিচালনা  করতে গিয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় ব্যয় করতে না পারায় ও প্রশাসনের সু দুষ্টি না পড়ায় সমস্যাগুলির সমাধান হচ্ছে না । ফলে আমরাকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়ম ইমানী আলি জানান তর্তীপুর মহাশশ্মানের সমস্যাগুলির কথা শুনেছি এবং অতি শীঘ্রই সমাধানের  ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো জানান ইতিমধ্যে তর্তীপুরের মহাশশ্মানের জন্য একজন পুরোহিত, একজন কেয়ারটেকার ও একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগের ঘোষনা দিয়েছে তা শীগ্রই বাস্তবায়ন হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফাজ উদ্দিন জানান, মহাশশ্মানের সমস্যাবলীর কথা শুনেছি এবং তা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম সফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ১৬-১১-১৫

,