৪২ লাখ টাকার চাঞ্চল্যকর দরপত্র কারসাজি > ‘সবই আছে, বিডি নাই’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৪২ লাখ টাকার দরপত্র দাখিলে কারসাজির মাধ্যমে দরপত্র দাখিল করা ঠিকাদারের ব্যাংক ড্রাফট (বিডি) গায়েব করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দাখিল হওয়া দরপত্রের সর্বনি¤œ দরদাতা ঠিকাদারের দরপত্র থেকে বিডি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড়ও সৃষ্টি হয়েছে। একটি প্রভাবশালী ঠিকাদার চক্রের প্রকল্প কাজ ভাগবাটোয়ার করে নিতেই সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে ‘বিডি উধাও’-এর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পানি সরবরাহের পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘৩৭ শহর পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায়’ দরপত্র আহবান করে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। দু’টি গ্রুপে আহবান করা দরপত্রের মোট ৪০ সেট সিডিউল বিক্রি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও ঢাকা অফিস থেকে এই সিডিউলগুলো বিক্রি করা হয়। সর্বোচ্চ ২৭ সেট সিডিউল বিক্রি হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিস থেকে। সূত্র জানায়, দরপত্র আহবানের পর থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঠিকাদারদের একটি প্রভাবশালী গ্রুপ কাজ হাতিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করে। তৎপরতার অংশ হিসেবে ৪০ সেট দরপত্র বিক্রি হলেও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্র দাখিল হয় মাত্র ৯টি।
ঠিকাদারদের দরপত্র দাখিলে বাধার অভিযোগের মাঝেই দাখিল করা দরপত্র থেকে ‘বিডি উধাও’ এর অভিযোগ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
দরপত্রে অংশ নেয়া ঠিকাদার আব্দুস সাত্তার লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘আহবান করা দরপত্রের দু’টি প্যাকেজের  সিডিউল কিনে গত ২১ সেপ্টেম্বর দরপত্র জমা প্রদান করি। দরপত্রে যথাযথ কাগজপত্রসহ ন্যাশনাল ব্যাংক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার দু’টি পৃথক ব্যাংক ড্রাফট জমা দেই। যার পে-অর্ডার নম্বর ৬০৮৫৩১৯ এবং ৬০৮৫৩২০। টাকার পরিমাণ ৫৫ হাজার টাকা করে’। তিনি অভিযোগ করেন, দরপত্র দাখিলের সময় শিলগালা ও আঠামুড়িয়ে দরপত্র দাখিল করা হয়। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর দরপত্র খোলার সময় দেখা যায় যে, তার দরপত্রের খাম ত্রুটিযুক্ত আঠা, শিলগালার পরিবর্তে পিনআপ করা।
তিনি বলেন, ‘দু’টি প্যাকেজেই আমি সর্বনি¤œ দরতাদা হিসেবে বিবেচিত হই কিন্তু কারসাজি করেই আমার বিডি উধাও করা হয়েছে’। তিনি দাবি করেন, তার দাখিল করা দরপত্র অনুযায়ী কার্যাদেশ প্রদান করা হলে সরকারের রাজস্ব ৩৩ ভাগ সাশ্রয় হবে।
দরপত্র খেলার সময় উপস্থিত থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ দরপত্র খোলার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় দেখা যায় আব্দুস সাত্তারের দরপত্রের সঙ্গে থাকা বিডি নাই। এটি একটি রহস্যজনক ঘটনা। সাত্তার যেহেতু ২১ সেপ্টেম্বর দরপত্র দাখিল করেছে আর দরপত্র খোলা হচ্ছে ২৫ সেপ্টেম্বর এরই মাঝে কোন কারসাজির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে’।
তবে কারসাজি’র অভিযোগ অস্বীকার করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বাহার উদ্দীন মৃধা বলেন, ‘সবার সামনেই দরপত্র খোলা হয়েছে। আব্দুস সাত্তারের দরপত্রের সঙ্গে অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক থাকলেও বিডি ছিলনা। খাম ও কাগজপত্রের ভেতরে অনেক খোজাখুজি করেও বিডি খুজে পাওয়া যায়নি’। তিনি বলেন, ‘ এ ব্যাপারে আব্দুস সাত্তারের একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটি টেন্ডার কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে। তবে আইনগতভাবে কোন লাভ হবে বলে মনে হয়না’।
উল্লেখ্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জমা পড়া ৯টি দরপত্রের মাধ্যে দু’টি ত্রুটিপুর্ণ হওয়ায় (বিডি না থাকায়) বাকি ৭টির মধ্যে উপসংহার অনুযায়ী সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হয়েছে ১ নম্বর গ্রুপে সারাহ ইন্টারন্যাশনাল ২ নম্বর গ্রুপে আবীর এন্টারপ্রাইজ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৬-১০-১৫

,