পত্নীতলায় জোতদার গুলি থেকে মাকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেল আদিবাসী ছাত্র > ক্ষতিগ্রস্থরা খোলা আকাশের নিচে

নওগাঁর পত্নীতলায় আকবরপুর গ্রামে সোমবার স্থানীয় জোতদার আব্দুল মতিন কর্তৃক ভূমিহীনদের উপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহত আদিবাসী ছাত্র মিথুন খালকো’র (১২) পরিবারে বর্তমানে শোকের মাতম বিরাজ করছে। জোতদারের গুলি থেকে মাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মিথুন। সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আদিবাসী ৮টিসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি ও টিনের ছাউনি ভেঙ্গে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বর্তমানে খোলা আকাশের নীচে দিনাতিপাত করছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোরশা উপজেলার জনৈক শাহুর (ধনী ব্যক্তি) পুকুরসহ সাড়ে ৩বিঘা ওয়াকফ সম্পত্তি পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের আকবরপুর মৌজায় রয়েছে। যা দীর্ঘদীন ধরে নিজের সম্পত্তি দাবী করে একই গ্রামের আব্দুল মতিন ভোগদখল করে আসছিল। বিষয়টি স্থানীয় ভূমিহীনরা জানতে পেরে স্থানীয় ভূমি অফিস হতে কাগজপত্র সংগ্রহ করে এবং কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার পুকুর পাড়ে ঘর তৈরী করলে আব্দুল মতিন পর পর ২বার দল বল নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে। সর্বশেষে ৫ মাস আগে ৮টি আদিবাসী পরিবারসহ ১৮টি ভূমিহীন পরিবার পুকুর পাড়ে আবার ঘর নির্মাণ করে বসবাস করতে শুরু করে। ২২জুন সোমবার সকাল ৮টায় আব্দুল মতিন ৩৫-৪০জন সশস্ত্র ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে ভূমিহীনদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করতে শুরু করে। এ সময় ভূমিহীনরা বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মারপিট শুরু করে। এক পর্যায়ে আব্দুল মতিন তাঁর লাইসেন্সকৃত বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মিথুন খালকো মারা যায় এবং ২জন নারীসহ আরো ৫জন আহত হয়।
এ ঘটনায় ২২/৬/১৫ তারিখে পত্নীতলা থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক ২টি মামলা হয়েছে। হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন নিহত মিথুন খালকোর পিতা সোনু খালকো  মামলা নং-১৭ ও অস্ত্র আইনে মামলা করেছেন এসআই ছমেদ আলী, মামলা নং-১৮। উভয় মামলার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ আব্দুল মতিনসহ ১৬ জনকে  আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। হত্যায় ব্যবহৃত বন্দুকটিও জব্দ করা হয়েছে বলে থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পত্নীতলা উপজেলা সদর নজিপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্থদের পুনঃবাসনের দাবী জানিয়েছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিহত মিথুন তাঁর মাকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গেলে গুলি এসে তার শরীরে বিদ্ধ হয়। নিহত মিথুনের পরিবারে পিতা-মাতা ছাড়াও ২ভাই ও  ১বোন রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে ২৩জুন মঙ্গলবার বিকেলে মিথুনের লাশ কবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আরো জানান, মতিন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং একটি প্রভাবশালী রাজনীতিক দলের সাথে জড়িত। ভূক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার সময় পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানানো হলেও তারা তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
বুধবার দুপুর ২টায় নিহত মিথূনের পিতা সোনু খালকোর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভূমিহীন পরিবারগুলো বৃষ্টির মধ্যে অন্যের চালার নীচে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ আর্থিক সহায়তা করেননি। এই অবস্থায় তাদের ঘরে খাবার না থাকায় খাদ্য, বাড়ি ঘর নির্মাণে সহায়তা ও আইনী সহায়তা দরকার বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি নরেন পাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মঙ্গলবারের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমিহীন পরিবারগুলোকে পুনঃবাসনের জন্য  প্রশাসনকে ৭দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ আতাউর রহমান, প্রতিবেদক, পত্নীতলা/ ২৪-০৬-১৫