পূর্ব-পশ্চিমের মানুষের সেতুবন্ধন নওগাঁ’র জবই বিল ব্রীজ তবে হারিয়েছে বিলের জীব-বৈচিত্র্য
জবই বিল। নওগাঁর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। জেলার প্রত্যন্ত সাপাহার উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় এই দৃষ্টিনন্দন বিলের অবস্থান। দূর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে আজ থেকে ২০ বছর আগেও জবই বিলের কথা লোক চক্ষুর অন্তরালেই ছিল। ১৯৯৪ সালে পতœীতলায় আত্রাই নদীর উপর শহীদ সিদ্দিক প্রতাপ সেতু চালু হওয়ার পর পূর্বের মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি পায় পশ্চিম এলাকায় তথা সাপাহার ও পোরশা উপজেলায়। সে থেকেই মূলতঃ জবই বিলের ঐতিহ্য মানুষ অনুধাবন করতে শুরু করে। অনেকেই সাময়িক প্রশান্তি লাভের জন্য একা কিংবা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুঁটে আসেন বিল পাড়ে।
আজ থেকে ৩০ বছর আগেও বীলে সারা বছর পানি থাকত। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে সারা দেশের মতো জবই বিলেও এর প্রভাব পড়েছে। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুম ছাড়া বিলের পানিতে সারা বছর পানি থাকে না। সঙ্গত কারণেই মানুষ বিলের বুক চিরে শুরু করেছে বোরো ধান চাষ। আর এই ধান চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা ব্যবহার করছেন নানা-রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিলের মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর। হারিয়ে গেছে বিল ও বিল পাড়ের শত শত ঐতিহ্য।
জবই গ্রামের ষাটোর্ধ নুরুল ইসলাম জানান, গত ৩০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুম ছাড়া বিলে পানি থাকে না। বিলে যখন পানি থাকত তখন প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে মানুষ এখানে ছুটে আসত মাছ ধরার জন্য। প্রতি রোববার বিলের দুই পাড়ে চলতো মাছ ধরার উৎসব। বর্তমানে বিলে শুধু বর্ষা মৌসুমে পানি থাকে।
তিনি আরো জানান, পূর্বে পাশ্ববর্তী জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জের ইলিয়াস নামক এক ব্যক্তি বিল লীজ নিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিলটি মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় চলে যায়। গত ৩ বছর ধরে মৎস্য অফিসের উদ্যোগে বিলে মাছ ছাড়া হচ্ছে। জেলে বা বিল পাড়ের মানুষের মাছ ধরার জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে একটি নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে। তা হলো শ্রাবণ মাসের ১৫ তারিখের আগে কেউ বিলে মাছ ধরতে পারবে না। আর এ সময়ের মধ্যে বিলে মাছের চাষ করার জন্য যে প্রকিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বিলের চৌকিতে মাছের ডিম ছাড়া হয়। যতক্ষণ বৃষ্টির পানি এসে ডিম ছাড়া চৌকিটি ভাসিয়ে না নিবে ততক্ষণ মানুষ বিলে মাছ ধরতে পারবে। বর্ষার পানি এসে বিলের চৌকি ভাসিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে বিলে মাছ ধরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এ সময় পোনা মাছ সারা বিলে ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠবে।
নূরুল ইসলামের মতে, যে হারে বিলে মাছের ডিম ছাড়া হয় সে হারে মাছ পাওয়া যায় না। বিলের মাছ রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যায়। সরকার থেকে একজন প্রহরী নিয়োগ করা হলেও তার কার্যক্রম চোখে পড়ে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আগে বিলে রুই, কাতলা, মৃগেল, শোল, বোয়াল, মাগুর, কই, কুশার মাছ, ভ্যাদার মাছ ও শ্যারন পুটি ইত্যাদি দেশী মাছ পাওয়া যেতো। যা ছিল বিলের প্রধান আকর্ষণ। শ্যারন পুটি, ভ্যাদার মাছ ও কুশার মাছ ৩০ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। এখন বিলে সিলভার কাপ, শোল, রুই, কাতলা ও জাপানি ছাড়া অন্য কোন মাছ চোখে পড়ে না।
কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিল ও বিল পাড়ের ঐতিহ্য যে হারিয়ে গেছে সেটি যেমন সত্য তেমনি এটি ও সত্য যে, জবই ব্রীজ পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করে দিয়েছে। পূর্বে নৌকায় করে বিলের পশ্চিম পাড়ের মানুষকে যাতায়াত করতে হতো বলে তাদের অনেক সময় লেগে যেত। জরুরী ভিত্তিতে তাঁরা কোন কাজ সম্পাদন করতে পারতেন না। দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পেতেন না উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য। কিন্তু জবই ব্রীজ চালু হওয়ার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবণ ও জীবিকার।
তবে এলাকাবাসী আক্ষেপ করে বলেন, পানি না থাকায় তাঁরা বিলে বোরো চাষ করলেও অনেক সময় সুষ্ঠভাবে ঘরে ফসল তুলতে পারছেন না। আগাম বৃষ্টিপাত হলে বিলের বুকে লাগানো ফসল তলিয়ে যায় পানির নীচে। এতে কৃষকদের হাজার হাজার টাকা লোকসান হয়। বিলের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে পূর্নভবা নদী। বিলের অতিরিক্ত পানি নদীতে পড়ার কোন ব্যবস্থা নেই। বিলের দক্ষিণ-পশ্চিম দিয়ে আরো কয়েকটি ছোট ছোট স্থানে উঁচু করে বাঁধ দিয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী মাছ চাষ করায় বিলের উদ্বৃত্ত পানি নদীতে গিয়ে পড়তে পারছে না। এ কারণে বর্ষায় দ্রুত বিল ডুবে গিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে পানি জমে ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই বর্ষা মৌসুমে বিলের উদ্বৃত্ত পানি যদি পূর্নভবা নদীতে পতিত করার ব্যবস্থা করা যায় তবে এখানকার চাষীদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
নওগাঁ জেলার ঐতিহ্য এই জবই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনি এখানে আসতে পারেন পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। উত্তরের সীমান্ত জেলা শহর নওগাঁ থেকে নজিপুর-সাপাহার-পোড়া মধইল গামী বাসে চড়ে আপনি সহজেই এখানে আসতে পারেন। জেলা শহর হতে দুরত্ব ৬০ কিঃমিঃ। ব্যক্তিগত যান হলে তো কথাই নেই। দূর হতে আসতে চাইলে রাত্রী যাপনের জন্য নওগাঁ জেলা সদরে রয়েছে মোটামুটি মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল। বিল পাড়ের মানুষের প্রিয় খাবার পাঁতিহাস বা রাজ হাঁসের মাংস আপনি এখানে উপভোগ করতে পারেন। যা এলাকার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরায় পাবেন। তবে বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে এই বিল পাড়ে এসে মোটেও ভূল করবেন না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ আতাউর রহমান,পত্নীতলা, নওগাঁ/ ৩০-০৬-১৫
আজ থেকে ৩০ বছর আগেও বীলে সারা বছর পানি থাকত। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে সারা দেশের মতো জবই বিলেও এর প্রভাব পড়েছে। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুম ছাড়া বিলের পানিতে সারা বছর পানি থাকে না। সঙ্গত কারণেই মানুষ বিলের বুক চিরে শুরু করেছে বোরো ধান চাষ। আর এই ধান চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা ব্যবহার করছেন নানা-রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিলের মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর। হারিয়ে গেছে বিল ও বিল পাড়ের শত শত ঐতিহ্য।
জবই গ্রামের ষাটোর্ধ নুরুল ইসলাম জানান, গত ৩০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুম ছাড়া বিলে পানি থাকে না। বিলে যখন পানি থাকত তখন প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে মানুষ এখানে ছুটে আসত মাছ ধরার জন্য। প্রতি রোববার বিলের দুই পাড়ে চলতো মাছ ধরার উৎসব। বর্তমানে বিলে শুধু বর্ষা মৌসুমে পানি থাকে।
তিনি আরো জানান, পূর্বে পাশ্ববর্তী জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জের ইলিয়াস নামক এক ব্যক্তি বিল লীজ নিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিলটি মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় চলে যায়। গত ৩ বছর ধরে মৎস্য অফিসের উদ্যোগে বিলে মাছ ছাড়া হচ্ছে। জেলে বা বিল পাড়ের মানুষের মাছ ধরার জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে একটি নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে। তা হলো শ্রাবণ মাসের ১৫ তারিখের আগে কেউ বিলে মাছ ধরতে পারবে না। আর এ সময়ের মধ্যে বিলে মাছের চাষ করার জন্য যে প্রকিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বিলের চৌকিতে মাছের ডিম ছাড়া হয়। যতক্ষণ বৃষ্টির পানি এসে ডিম ছাড়া চৌকিটি ভাসিয়ে না নিবে ততক্ষণ মানুষ বিলে মাছ ধরতে পারবে। বর্ষার পানি এসে বিলের চৌকি ভাসিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে বিলে মাছ ধরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এ সময় পোনা মাছ সারা বিলে ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠবে।
নূরুল ইসলামের মতে, যে হারে বিলে মাছের ডিম ছাড়া হয় সে হারে মাছ পাওয়া যায় না। বিলের মাছ রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যায়। সরকার থেকে একজন প্রহরী নিয়োগ করা হলেও তার কার্যক্রম চোখে পড়ে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আগে বিলে রুই, কাতলা, মৃগেল, শোল, বোয়াল, মাগুর, কই, কুশার মাছ, ভ্যাদার মাছ ও শ্যারন পুটি ইত্যাদি দেশী মাছ পাওয়া যেতো। যা ছিল বিলের প্রধান আকর্ষণ। শ্যারন পুটি, ভ্যাদার মাছ ও কুশার মাছ ৩০ বছর আগেই হারিয়ে গেছে। এখন বিলে সিলভার কাপ, শোল, রুই, কাতলা ও জাপানি ছাড়া অন্য কোন মাছ চোখে পড়ে না।
কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিল ও বিল পাড়ের ঐতিহ্য যে হারিয়ে গেছে সেটি যেমন সত্য তেমনি এটি ও সত্য যে, জবই ব্রীজ পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করে দিয়েছে। পূর্বে নৌকায় করে বিলের পশ্চিম পাড়ের মানুষকে যাতায়াত করতে হতো বলে তাদের অনেক সময় লেগে যেত। জরুরী ভিত্তিতে তাঁরা কোন কাজ সম্পাদন করতে পারতেন না। দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পেতেন না উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য। কিন্তু জবই ব্রীজ চালু হওয়ার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবণ ও জীবিকার।
তবে এলাকাবাসী আক্ষেপ করে বলেন, পানি না থাকায় তাঁরা বিলে বোরো চাষ করলেও অনেক সময় সুষ্ঠভাবে ঘরে ফসল তুলতে পারছেন না। আগাম বৃষ্টিপাত হলে বিলের বুকে লাগানো ফসল তলিয়ে যায় পানির নীচে। এতে কৃষকদের হাজার হাজার টাকা লোকসান হয়। বিলের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে পূর্নভবা নদী। বিলের অতিরিক্ত পানি নদীতে পড়ার কোন ব্যবস্থা নেই। বিলের দক্ষিণ-পশ্চিম দিয়ে আরো কয়েকটি ছোট ছোট স্থানে উঁচু করে বাঁধ দিয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী মাছ চাষ করায় বিলের উদ্বৃত্ত পানি নদীতে গিয়ে পড়তে পারছে না। এ কারণে বর্ষায় দ্রুত বিল ডুবে গিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে পানি জমে ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই বর্ষা মৌসুমে বিলের উদ্বৃত্ত পানি যদি পূর্নভবা নদীতে পতিত করার ব্যবস্থা করা যায় তবে এখানকার চাষীদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
নওগাঁ জেলার ঐতিহ্য এই জবই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনি এখানে আসতে পারেন পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। উত্তরের সীমান্ত জেলা শহর নওগাঁ থেকে নজিপুর-সাপাহার-পোড়া মধইল গামী বাসে চড়ে আপনি সহজেই এখানে আসতে পারেন। জেলা শহর হতে দুরত্ব ৬০ কিঃমিঃ। ব্যক্তিগত যান হলে তো কথাই নেই। দূর হতে আসতে চাইলে রাত্রী যাপনের জন্য নওগাঁ জেলা সদরে রয়েছে মোটামুটি মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল। বিল পাড়ের মানুষের প্রিয় খাবার পাঁতিহাস বা রাজ হাঁসের মাংস আপনি এখানে উপভোগ করতে পারেন। যা এলাকার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরায় পাবেন। তবে বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে এই বিল পাড়ে এসে মোটেও ভূল করবেন না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ আতাউর রহমান,পত্নীতলা, নওগাঁ/ ৩০-০৬-১৫