মৌসুমের শুরুতে আশা জাগলেও প্রতিকুল আবহাওয়ায় শিবগঞ্জে আম ফলনে বিপর্যয়ের শংকা

আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় কাল বৈশাখি ঝড়, শিলা বৃষ্টি ও সর্বশেষ আম ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনের কারণে কাঙ্খিত আম উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় আছেন আম ব্যবসায়ীরা। গত কয়েকদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা যায় আম ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনে আমের নিচের দিক ফেটে পঁচে গিয়েছে। শিবগঞ্জ কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের তথমতে শিবগঞ্জে  এবছর ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। আম গাছ আছে ৮লাখের উদ্ধে।  এবছর শতকারা ৮০ ভাগের বেশি গাছে মুকুল এসেছিল। এরমধ্যে আশ্বিনা ৮৭ ভাগ, ফজলী ৮৬ ভাগ, ল্যাংড়া ৯০ ভাগ, গোপাল ভোগ  ৮৯ ভাগ, খিরসাপাত ৮৭ ভাগ, বোম্বায় ৯০ ভাগ  লক্ষন ভোগ ৮৭ ভাগ আমরোপালী ৮৭ ভাগ মল্লীকা ৮৮ ভাগ ও বিভিন্ন জাতের গুটি আমের গাছে ৮৮ ভাগ মুকুল এসেছিল।
আমের গাছ মুকুলিত হওয়ার হিসাবে এবছর ভালো আম উৎপাদিত হবে এমনটি আশা করেছিলেন আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা।  শিবগঞ্জ উপজেলার হরিনগর গ্রামের আম ব্যবসায়ি ভঞ্জন কুমার দাস বলেন, এবার আম গছে প্রচুর পরিমান মুকুল এসেছিল এবং গুটিও ছিল প্রচুর। কিন্তু কয়েক দফায় কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আম ঝরে পড়েছে। সে সাথে এখন ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনও দেখা দিয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার আম বাগান মালিক সহকারী অধ্যাপক আজমুল হোসেন ও প্রভাষক ফারুক আজম জানান ঝড় শিলা বৃষ্টির পূর্বে এ বছর আমের গুঠি আসার পরপরই উকুইনা নামক একপ্রকার ক্ষুদ্র পোকার আক্রমনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে। এ জাতীয় পোকা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া  দেখতে না পাওয়ায় ব্যবসায়ীবা আম বাগান মালিকরা সহজে বুঝতে পারেনি।  এ ছাড়া অন্যান্য আম ছিদ্রকারী  পোকায় আক্রন্ত হয়ে আম পচে গিয়ে ঝরে পড়ছে ।  সহকারী অধ্যাপক আজমুল আরো জানান, তার ১০ বিঘা আম বাগান থেকে গত বছর যে পরিমান আম পেয়েছিলেন এবছর হয়ত তার অর্ধেকও পেতে পারেন। শিবগঞ্জ পৌরসভার মরদানা গ্রামের আম ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন জানান তারা ৩ জন মিলে ৩০ লাখ টাকার  বেশ কিছু আমবাগান কিনেছেন এ বছর। কিন্তু গত ২ মাসে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ৬ বার ঝড় হয়েছে, এতে অনেক আম ঝড়ে পড়ায় তাদের লাভ তো দূরে থাক এখন পূজি উঠানোয় কষ্ট হয়ে যাবে।
একই উপজেলার ছত্রাজিতপুর এলাকার আম ব্যবসায়ী কালু জানান, তিনি তিন বছরের জন্য বাগান কিনেছেন, এবছর তেমন লাভ হবে না জানিয়ে তিনি বলেন তবে যে টাকা উঠে সেটায় এগিয়ে থাকবে।  তিনি আরো জানান সহ ৭/৮জন মিলে প্রায় একে কাটি টাকায় কয়েকটি আম বাগান কয়েক বছরেরা জন্য ক্রয় করে এ বছর কোন আম ফল পাবো না একমাত্র ঝড়ের কারণে। মনাকষার আম ব্যবসায়ী রাকিব জানান  এ বছরে ঘন ঘান ঝড় হওয়ায় বিশেষ বিশেষ এলাকা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আম ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন জানান, তার আম বাগানেও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে।
আম ব্যবসায়ী, আম বাগানের মালিক  ও  আম আড়তদার প্রভাষক তরিকুল জানান কয়েক বছরের তুলনায় আমরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তিনি আরো জানান এবছরে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি বিশেষ বিশেষ এলাকায় হওয়ায় ঐ এলাকাগুলি বেশী ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। তিনি সহ আরো কয়েকজন জানান আমব্যবসায়ী ঝড়, শিলা বৃষ্টি  ও পোকায় যতই আক্রমন করুক না কেন যদি  গত বছরের ন্যায় ফরমালিন পরীক্ষার নামে প্রশাসনিক হয়রানী  এবং ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের ও বড় বড় মোকামওয়ালাদের হয়রানী  না  তাহলে যে আম আছে তা থেকে  ক্ষতি না হয়ে বরং কিছুটা হলেও  লাভবান হবো।
তবে এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল ফারুক জানান ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আমের কোন ক্ষতি হয়নি। পোকার আক্রমন থেকে আমকে রক্ষা করতে মুকুল হওয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের অফিসাররা কাজ করায় তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। তিনি অ ারো জানান এ বছর ১ লাখ ২৫ হাজার মেঃটন আম উৎপাদন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে এবং তা পূরণ হবে ইনশাল্লাহ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের  উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সরফ উদ্দিন জানান, এখন যে আমগুলো পচে গেছে সেগুলো অন্তত ২০ দিন আগেই পোকায় আক্রমন করেছে, সে গুলো এখন গাছ থেকে ছিঁড়ে ফেলতে হবে, যাতে অন্য আমগুলো আক্রান্ত না হয়। তিনি বলেন, এবছর আবহাওয়ার কারণে এই ছিদ্রকারী পোকার আক্রমন একটু বেশিই হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক, শিববগঞ্জ/ ২৩-০৫-১৫

,