হাসপাতাল ‘ কুড়িয়ে ’ মাত্র তিনজন চিকিৎসক !

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া ডায়রিয়ার কারণে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ছাড়িয়ে বারান্দা এমনকি কোরিডোরে রোগিরা যন্ত্রণায় ছটপট করলেও চিকিৎসদের পাওয়া যাচ্ছেনা। শনিবার সকালে গোটা হাসপাতাল কুড়িয়ে দেখা মিলেছে মাত্র তিনজন চিকিৎসকের। ডায়রিয়ার প্রকোপকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসকদের বাড়তি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিলেও সে নির্দেশ মানছেননা চিকিৎসকরা। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ জানিয়েছে রোগির স্বজনসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ লাইনের দুষিত পানি থেকে চলতি সপ্তাহে পৌর এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়। প্রথমে পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিলেও পরে তা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য এলাকায়। প্রতিদিন প্রায় ১ শ জন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। শনিবার রাত ১২টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬০ জন রোগি। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, পৌরসভার পানি সরবরাহ লাইনে কলিফরম ব্যাক্টেরিয়া সংক্রামণ হওয়ায় সেই দুষিত পানি থেকে উদ্বেগজনকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ে পৌর এলাকায়। পৌরসভার পানি পরীক্ষা করেও এমন রিপোর্ট পাওয়া গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গেল ১১ দিনে সদর হাসপাতালে ৭ শতাধিক ডায়রিয়া রোগি ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে একদিনেই ১ শ ৩৯ জন রোগি ভর্তির রেকর্ড রয়েছে এবং চলতি ডায়রিয়ায় এক বৃদ্ধ নিহতও হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় উদ্বেগজনকহারে ডায়রিয়া রোগ বিস্তার লাভ করায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়কের কার্যালয় হাসপতালে ‘রোগি ভর্তির সংখ্যা অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের জন্য চিকিৎসকদের কার্য তালিকা তৈরী করেন এবং দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। ওই সূত্র জানায়, হাসপাতালের চিকিৎসক সানাউল হক, নুরুল ইসলাম দেওয়ান, মোহাম্মদ রুহুল আমীন, নাদিম সরকার, ফরহাদ হোসেন, সামসুল আলমকে সপ্তাহের ৬ দিন সকাল এবং বিকেল বেলা পৃথক পৃথকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। সুত্র জানায়, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার এই মুর্হুতেও তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন না।
সিভিল সার্জন কাম তত্ববধায়কের দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী শনিবার সকালে ডিউটি ছিল ডা. সানাউল হকের। কিন্তু তিনিও ছিলেন না হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ১ শ বেড ও ১ শ রোগির খাবর চালু থাকলেরও চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫০ বেডের হিসেবে ২১ টি। এ পদের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন ১৬জন।
চলতি ডায়রিয়ার প্রকোপের কারণে শনিবার সকালে নতুন পুরাতন রোগি মিলিয়ে প্রায় ১ শ রোগি হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ছাড়িয়ে বারান্দা এমনকি মুল ফটকের কোরিডোরেও যায়গা নিয়ে যন্ত্রণায় ছটপট করলেও চিকিৎসকদের দেখা পায়নি রোগিরা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত পিতাকে নিয়ে বারান্দায় পড়ে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আরামবাগের রয়েল অভিযোগ করে বলেন, ‘ হটাৎ বমি আর পায়খানায় আব্বার অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু কোনই ডাক্তার পায়নি। নার্সরাই স্যালাইন লেখে দিয়েছে এবং স্যালাইন লাগিয়ে দিয়েছে। এতো বেশী রোগি নার্সরাও ঠিকমত রোগিদের কাছে আসতে পারছেনা’। হাসপাতাল জুড়ে ডায়রিয়া রোগিদের ছড়াছড়ির মুর্হুতেও গোটা হাসপাতাল ঘুরে মাত্র তিনজন চিকিৎসককে দেখা গেছে। এরা হচ্ছেন, আবাসিক চিকিৎসক সফিকুল ইসলাম, ডা. আবুল কাশেম ও ডা. নুরুন্নাহার নাসু। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকম’র পক্ষ থেকে আরএমও’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাত্র তিনজন চিকিৎসক থাকার কথা স্বীকার করেন।
এদিকে, সকাল সাড়ে ৮টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আবাসিক চিকিৎসকের কাছে রোগিদের যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং সিভিল সার্জনের কাছে গিয়েও এঘটনার প্রতিবাদ জানান।
নাগরিক কমিটি জানিয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ডা. আবুল কাশেম এরপর ডা. নুরুন্নাহার নাসু এবং ১০টার দিকে আরএমও হাসপাতালে আসেন এসময়ে ইনডোর আউটডোড়ে কোনই ডাক্তার ছিল না। নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আমার সিভিল সার্জনের কাছে দাবি জানিয়েছি’।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সিভিল সার্জন ডা. আলাউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ পৌরসভার নাগরিকবৃন্দ এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগটি খতিয়ে দেখে শীগ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১১-০৪-১৫

,