পত্নীতলায় প্রবীণদের চায়ের দোকানই ভরসা > নেই বিনোদন ব্যবস্থা

একজন মানুষ পরিবার পরিজনের জন্য সারাজীবণ হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে প্রবীণে এসে পরিণত হয়। প্রবীণ হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সে নিজেকে উৎসর্গ করে স্বজনদের জন্য। এই উৎসর্গের বিনিময়ে থাকেনা তাঁর কোন প্রত্যাশা। এরপর সে একসময় নাম লিখায় প্রবীণের খাতায়।

প্রবীণ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন নারী-পুরুষ পরিবার পরিজনের জন্য সীমাহিন ত্যাগ করলেও বৃদ্ধ বয়সে তাকে বরণ করে নিতে হয় অসহায়ত্ব। পরিবার ও সমাজে  বোঝা মনে করে সবসময় তাদের এড়িয়ে চলা হয়। এক সময়ের পরিবারের কর্তাব্যক্তিটি একটি ক্ষমতাহীন অসার বস্তুতে পরিণত হয়। পরিবার  ও পরিবারের বাহিরে তাদের এই অসহায়ত্ব উপলদ্ধি করার কেউ থাকে না। বিশেষ করে অতি দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের প্রবীণদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ঘরে বাইরে সকল শ্রেণীর পরিবারের প্রবীণদের সমস্যা একই হলেও শুধু বিত্তশালী পরিবারের প্রবীণদের ক্ষেত্রে খাওয়া পড়ার তেমন একটা সমস্যা থাকে না। তবে অসহায়ত্ব ও মূল্যহীনতার সমস্যা সকল শ্রেণীর পরিবারেই রয়েছে।

প্রবীণদের অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি একটি অন্যতম সমস্যা হলো বিনোদনের সমস্যা। বড় বড় শহরে পার্ক এর ব্যবস্থা থাকায় সেখানে প্রবীণরা গিয়ে কিছুটা বিনোদন উপভোগ করতে পারে। কিন্তু উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন পার্ক বা বিনোদন স্পটের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলিই প্রবীণদের সময় কাটানোর একমাত্র অবলম্বন হয়ে থাকে। তবে সেখানেও দেখা যায় বিপত্তি। প্রবীণ মানুষ চায়ের দোকানে বেশি সময় ধরে বসে থাকলে অল্প বয়সী বা মধ্যবয়সীরা দোকানে আসতে চায় না বলে চা দোকানিরা আপত্তি করে। স্বভাবতই কয়েকজন বৃদ্ধ মানুষ এক জায়গায় হয়ে সুখ-দুঃখের অংশীদার হবে তৃণমূল পর্যায়ে এমন স্থানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। নওগাঁ জেলার পতœীতলা উপজেলা সদর নজিপুর পৌর এলাকায় বিনোদনের কোন জায়গা নেই। দুইটি খেলার মাঠ থাকলেও সেখানে খেলোয়াড়রা অনূশীলন নীয়ে ব্যস্ত থাকে।

এ বিষয়ে উপজেলা সদরের কয়েকজন প্রবীণদের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, অবসর জীবণে তাদের কষ্টে জীবণ যাপন করতে হচ্ছে। যারা সমবয়সী আছে তাদের সাথে দিনে বা সপ্তাহে মতবিনিময়ের ব্যবস্থা থাকলে খুব ভালো হতো। তাদের সাথে সুখ-দুঃখের কথা বলে মনটা হালকা করা যেতো। পত্নীতলার  অবঃ অধ্যক্ষ  অধ্যাপক ময়েজ উদ্দিন জানান, এটি একটি খুব ভালো উদ্যোগ হবে যদি প্রবীণদের বসার বা সময় কাটানোর জন্য পৌর এলাকায় কোন ব্যবস্থা করা যায়। এতে আমার মতো প্রবীণদের অসহায়ত্ব কিছুটা হলেও কমবে। এ বিষয়ে নজিপুর পৌর সভার মেয়র মো. আনোয়ার হোসেনের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌর এলাকায় প্রবীণদের জন্য একটি স্পেস করা গেলে ভালোই হতো। এর সাথে তিনি আরো যোগ করে বলেন, সর্ববয়সীদের জন্যই পার্ক বা বিনোদন স্পেস দরকার। তবে জায়গার অভাবে সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেউ উদ্যোগি হয়ে জায়গার ব্যবস্থা করলে পৌরসভা হতে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান। প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় কর্মরত বেসরকারি সংগঠন বিএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রউফ জানান, দেশের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী পরিবার ও পরিবারের বাহিরে প্রবীণরা যাতে ভালো থাকতে পারে সে লক্ষ্যে বিএসডিও দাতা সংস্থা হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ এর সহায়তায় নওগাঁ জেলায় প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় সাংস্কৃতিক প্রচারাভিযান প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ আতাউর রহমান, প্রতিবেদক, পত্নীতলা, নওগাঁ/ ২৩-০৩-১৫