নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন -----------------আজমাল হোসেন মামুন
নারীর মর্যাদা, নারীর অধিকার বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, “Empowering Women, Empowering Humanity: অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন।
বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ১৮৫৭ সালে ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা মানবেতর পরিবেশ, অসম মজুরি ও দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করলে পুলিশি নির্যাতন শুরু হয়। গ্রেফতার করা হয় বহু নারী শ্রমিককে। নারীকণ্ঠ হয়ে ওঠেছিল সেদিন উত্তপ্ত। সে সময় আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ১৫০০০ নারী মিছিলের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায়ের ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছিল। পরে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন' গঠন করে এবং অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনে অভিনেত্রী ক্লারা জেটকিন ১৯১০ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালনের প্রথম ঘোষণা দেন। তাদের দাবি ছিল কাজের সময় কমানো, ন্যায্য মজুরি প্রদান এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ। ১৯১১ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মান নারীদিবসটি পালন করে। ১৯১৪ সাল থেকে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন হতে থাকে। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে বিভিন্ন দেশকে পালন করার জন্যে আহবান জানায় । সেই বছর থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হচ্ছে। (সূত্র: ঊইকিপিডিয়া)
পৃথিবীর আদিকাল থেকেই নারীরা সবদিক থেকে অবহেলার শিকার। আদিম যুগে শিকার করার সময় নারীদের অপহরণ করা হতো যৌনতৃপ্তি উপভোগ করার জন্য। আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া ছিল এক লোক লজ্জার ব্যাপার। ফলে লজ্জা থেকে রেহাই পেতে জীবন্ত কবর দিতে কুণ্ঠাবোধ করত না। ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত রাসুলুলাহ (সা.) সর্ব প্রথম নারীদের মর্যাদা দিয়েছেন। দিয়েছেন নারীদের অধিকার। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরানুল কারীমে ইরশাদ করেছেন, 'পুরুষদের স্ত্রীদের প্রতি যেরূপ অধিকার রয়েছে, তেমনি স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর।' (সুরা বাক্বারাহ আয়াত : ২২৮)। এক সময় আসবাবপত্র বা চতুষ্পদ জীবজন্তুর মতো নারীদের বিক্রি করা হতো। এমনকি ইউরোপের যে দেশসমূহকে আমরা সভ্য দেশ হিসেবে গণ্য করি, সে দেশসমূহেও নারীর মানব-সত্তাকে স্বীকার করত না। ধর্ম-কর্ম কিছুতেই কোনো অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না নারীদের। ইসলাম প্রথম দিয়েছে নারীদের অধিকার। আধুনিক যুগে নারীর অধিকার ও মর্যাদার ব্যাপারে বিশ্ববাসী সোচ্চার কণ্ঠ উচ্চারণ করলেও নারীরা সম-অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীদের জীবন বৈষম্যের শেকলে বাঁধা বললে ভুল হবে না। প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে নির্যাতিত নারীদের লোমহর্ষক ঘটনা যা পড়লেই মানুষের কোমল হৃদয় স্পর্শ করে। বিশেষ করে, তৃণমূল গ্রামীণ নারীরা বেশি বৈষম্যের শিকার। কারণ, তাদের ব্যাপারে সরকারি- বেসরকারিভাবে যে উদ্যোগ নেওয়া হয় তা অপ্রতুল। আমরা লক্ষ্য করি, অনেকেই নারীদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তারা নারীদের উন্নয়নে কাজ করে থাকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। এমনকি এক সংগঠনকে অন্য সংগঠন মোটেই সহ্য করতে পারে না। নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার দাবি আদায়ে একীভূত নয়। এটাই নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিরাট বাধা বা অন্তরায়। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে নারীরা অনেক এগিয়েছে। ফলে নারীদের বিভিন্নভাবে ক্ষমতায়ন ঘটলেও রাজনীতিতে নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এটাও নারীদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্য। 'সর্ব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, পিছিয়ে রাজনীতিতে (দৈনিক প্রথম আলো, ৪ নভেম্বর, ২০০৭)। মহান জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধি করে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার নারী জাতির প্রতি মর্যাদা প্রদান করেছে যা নারীদের অধিকার আদায়ে মাইলফলক হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। কিন্তু সময় এসেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। এটি সময়ের দাবি। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর উচ্চ পর্যায়ে নীতিনির্ধারণী কাঠামোতে নারীর উপস্থিতি মাত্র ৫ শতাংশ।
শিশুর যত্ন, রোগীর সেবা, ঘরের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পালনসহ গৃহস্থালির সকল কাজ নারীকেই করতে হয়। কিন্তু নারীর এই অবদান মূল্যায়ন করা হয় না বললেই চলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ নারী এবং ১.৩ শতাংশ মাত্র পুরুষ সরাসরি গৃহস্থালির কাজে জড়িত। এতে নারীর গৃহস্থালি কাজের বার্ষিক অর্থমূল্য সর্বোচ্চ ৯১ মিলিয়ন ডলার।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়কে বিশ্লেষণ করলে সহজেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বর্তমানে নারীদের শ্রমকে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। নারীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত বৈষম্য। এসব বৈষম্য দূর করার জন্যে বর্তমান সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যা প্রসাংশার দাবিদার। । নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাল্য বিবাহ সবচেয়ে বিরাট বাধা । বাল্য বিবাহের কারণে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ছে। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হয়ে নানা রোগ-ব্যধীতে ভুগছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে আগের তুলনায় বাল্যবিবাহ কমে যাচ্ছে। ইভটিজিংয়ের হার বেড়েছে। প্রশাসন ইভটিজারদের ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করে শাস্তিও দিচ্ছে। তারপরও ইভটিজিং সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইভটিজারদের কারণে অনেক কিশোরী শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে। যৌতুক প্রথা আগের চেয়ে কমলেও তৃণমূল পর্যায়ে যৌতুক প্রথা রয়ে গেছে। যৌতুকের কারণে অসংখ্য নারীর ঘর ভাঙছে। অনেক স্থানে আবার শিক্ষিত নারীরা যৌতুকলোভী স্বামীকে বিয়ের আসরে তালাক দিয়ে যৌতুকের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করছে। পরকীয়ার বলির শিকার হচ্ছে অনেক নারী। এ ছাড়াও তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে এক শ্রেণীর তরুণ-কিশোরী এবং তরুণীদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেট এবং মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমান সরকার এ নিয়ে একটি তথ্য-প্রযুক্তি আইন পাস করেছে। আইনে কঠিন শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
নারীদের জন্য শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক, সামাজিক সুযোগ-সুবিধাসহ সর্বক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার দিতে হবে। কারণ, দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা হচ্ছে নারী। নারী যদি নারী হিসেবে মর্যাদা ও সমঅধিকার পান, তবে বৈষম্যের শেকল ভেঙে বের হতে পারবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘটবে নারীর ক্ষমতায়ন । এই জন্য প্রয়োজন সকল মানবাধিকার ও নারী সংগঠনসমূহের সম্মিলিত উদ্যোগ। পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। আসুন আমরা এবারের প্রতিপাদ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসি। নারীকে নারীর মর্যাদা প্রদান করে দেশকে সমৃদ্ধশীল ও শান্তিময় দেশ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাই। মনে রাখতে হবে নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন ।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ১৮৫৭ সালে ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা মানবেতর পরিবেশ, অসম মজুরি ও দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করলে পুলিশি নির্যাতন শুরু হয়। গ্রেফতার করা হয় বহু নারী শ্রমিককে। নারীকণ্ঠ হয়ে ওঠেছিল সেদিন উত্তপ্ত। সে সময় আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ১৫০০০ নারী মিছিলের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায়ের ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছিল। পরে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন' গঠন করে এবং অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনে অভিনেত্রী ক্লারা জেটকিন ১৯১০ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালনের প্রথম ঘোষণা দেন। তাদের দাবি ছিল কাজের সময় কমানো, ন্যায্য মজুরি প্রদান এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ। ১৯১১ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মান নারীদিবসটি পালন করে। ১৯১৪ সাল থেকে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন হতে থাকে। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে বিভিন্ন দেশকে পালন করার জন্যে আহবান জানায় । সেই বছর থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হচ্ছে। (সূত্র: ঊইকিপিডিয়া)
পৃথিবীর আদিকাল থেকেই নারীরা সবদিক থেকে অবহেলার শিকার। আদিম যুগে শিকার করার সময় নারীদের অপহরণ করা হতো যৌনতৃপ্তি উপভোগ করার জন্য। আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া ছিল এক লোক লজ্জার ব্যাপার। ফলে লজ্জা থেকে রেহাই পেতে জীবন্ত কবর দিতে কুণ্ঠাবোধ করত না। ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত রাসুলুলাহ (সা.) সর্ব প্রথম নারীদের মর্যাদা দিয়েছেন। দিয়েছেন নারীদের অধিকার। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরানুল কারীমে ইরশাদ করেছেন, 'পুরুষদের স্ত্রীদের প্রতি যেরূপ অধিকার রয়েছে, তেমনি স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর।' (সুরা বাক্বারাহ আয়াত : ২২৮)। এক সময় আসবাবপত্র বা চতুষ্পদ জীবজন্তুর মতো নারীদের বিক্রি করা হতো। এমনকি ইউরোপের যে দেশসমূহকে আমরা সভ্য দেশ হিসেবে গণ্য করি, সে দেশসমূহেও নারীর মানব-সত্তাকে স্বীকার করত না। ধর্ম-কর্ম কিছুতেই কোনো অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না নারীদের। ইসলাম প্রথম দিয়েছে নারীদের অধিকার। আধুনিক যুগে নারীর অধিকার ও মর্যাদার ব্যাপারে বিশ্ববাসী সোচ্চার কণ্ঠ উচ্চারণ করলেও নারীরা সম-অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীদের জীবন বৈষম্যের শেকলে বাঁধা বললে ভুল হবে না। প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে নির্যাতিত নারীদের লোমহর্ষক ঘটনা যা পড়লেই মানুষের কোমল হৃদয় স্পর্শ করে। বিশেষ করে, তৃণমূল গ্রামীণ নারীরা বেশি বৈষম্যের শিকার। কারণ, তাদের ব্যাপারে সরকারি- বেসরকারিভাবে যে উদ্যোগ নেওয়া হয় তা অপ্রতুল। আমরা লক্ষ্য করি, অনেকেই নারীদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তারা নারীদের উন্নয়নে কাজ করে থাকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। এমনকি এক সংগঠনকে অন্য সংগঠন মোটেই সহ্য করতে পারে না। নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার দাবি আদায়ে একীভূত নয়। এটাই নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিরাট বাধা বা অন্তরায়। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে নারীরা অনেক এগিয়েছে। ফলে নারীদের বিভিন্নভাবে ক্ষমতায়ন ঘটলেও রাজনীতিতে নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এটাও নারীদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্য। 'সর্ব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, পিছিয়ে রাজনীতিতে (দৈনিক প্রথম আলো, ৪ নভেম্বর, ২০০৭)। মহান জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধি করে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার নারী জাতির প্রতি মর্যাদা প্রদান করেছে যা নারীদের অধিকার আদায়ে মাইলফলক হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। কিন্তু সময় এসেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। এটি সময়ের দাবি। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর উচ্চ পর্যায়ে নীতিনির্ধারণী কাঠামোতে নারীর উপস্থিতি মাত্র ৫ শতাংশ।
শিশুর যত্ন, রোগীর সেবা, ঘরের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পালনসহ গৃহস্থালির সকল কাজ নারীকেই করতে হয়। কিন্তু নারীর এই অবদান মূল্যায়ন করা হয় না বললেই চলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ নারী এবং ১.৩ শতাংশ মাত্র পুরুষ সরাসরি গৃহস্থালির কাজে জড়িত। এতে নারীর গৃহস্থালি কাজের বার্ষিক অর্থমূল্য সর্বোচ্চ ৯১ মিলিয়ন ডলার।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়কে বিশ্লেষণ করলে সহজেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বর্তমানে নারীদের শ্রমকে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। নারীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত বৈষম্য। এসব বৈষম্য দূর করার জন্যে বর্তমান সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যা প্রসাংশার দাবিদার। । নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাল্য বিবাহ সবচেয়ে বিরাট বাধা । বাল্য বিবাহের কারণে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ছে। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হয়ে নানা রোগ-ব্যধীতে ভুগছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে আগের তুলনায় বাল্যবিবাহ কমে যাচ্ছে। ইভটিজিংয়ের হার বেড়েছে। প্রশাসন ইভটিজারদের ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করে শাস্তিও দিচ্ছে। তারপরও ইভটিজিং সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইভটিজারদের কারণে অনেক কিশোরী শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে। যৌতুক প্রথা আগের চেয়ে কমলেও তৃণমূল পর্যায়ে যৌতুক প্রথা রয়ে গেছে। যৌতুকের কারণে অসংখ্য নারীর ঘর ভাঙছে। অনেক স্থানে আবার শিক্ষিত নারীরা যৌতুকলোভী স্বামীকে বিয়ের আসরে তালাক দিয়ে যৌতুকের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করছে। পরকীয়ার বলির শিকার হচ্ছে অনেক নারী। এ ছাড়াও তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে এক শ্রেণীর তরুণ-কিশোরী এবং তরুণীদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেট এবং মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমান সরকার এ নিয়ে একটি তথ্য-প্রযুক্তি আইন পাস করেছে। আইনে কঠিন শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
নারীদের জন্য শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক, সামাজিক সুযোগ-সুবিধাসহ সর্বক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার দিতে হবে। কারণ, দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা হচ্ছে নারী। নারী যদি নারী হিসেবে মর্যাদা ও সমঅধিকার পান, তবে বৈষম্যের শেকল ভেঙে বের হতে পারবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘটবে নারীর ক্ষমতায়ন । এই জন্য প্রয়োজন সকল মানবাধিকার ও নারী সংগঠনসমূহের সম্মিলিত উদ্যোগ। পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। আসুন আমরা এবারের প্রতিপাদ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসি। নারীকে নারীর মর্যাদা প্রদান করে দেশকে সমৃদ্ধশীল ও শান্তিময় দেশ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাই। মনে রাখতে হবে নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন ।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।