চারদিকে পুলিশ মাঝখানে খুন

১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জন্মেছিলেন অভিজিৎ রায়। ৪৩ বছর পূর্ণ করার দিনে এসে সেই জন্মদিনেই পৈশাচিক হামলায় প্রাণ হারালেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের এই নাগরিক। গত বৃহস্পতিবার একুশের বইমেলা থেকে ফেরার পথে খুন হওয়া এই লেখক ও ব্লগারের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে গতকাল শুক্রবার। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। আলোচিত এই হত্যার তদন্তে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা টিম মাঠে নেমেছে। গত রাত পর্যন্ত তদন্তসংশ্লিষ্টরা হত্যাকারীদের ব্যাপারে কিছু ধারণা সংগ্রহ করতে পারলেও কারা কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আলামত পর্যালোচনায় ঘটনার সঙ্গে উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। এ সময় ঘটনাস্থলের চারদিকে পুলিশের অনেক টিম অবস্থান করলেও কেউ খুনিদের গতিবিধি আঁচ করতে পারেনি। বইমেলা-ফেরত মানুষের ঢল তখনো অব্যাহত ছিল টিএসসি থেকে শাহবাগ অবধি। তার মাঝেই এ খুন বিস্মিত ও হতবাক করছে সবাইকে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এই বিশেষ নিরাপত্তাবলয়ের অর্থ কী!
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার আলামতের পাশাপাশি বইমেলায় স্থাপিত বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অভিজিতের আশপাশে কারা অবস্থান করছিল, কেউ তাঁকে অনুসরণ করছিল কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে লেখক, প্রকাশকসহ অভিজিতের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো থেকেও খুনিদের ব্যাপারে ধারণা লাভের চেষ্টা চলছে। তবে খুনিরা যে চৌকস ও অভিজ্ঞ তা পারিপাশ্বর্কিতা বিশ্লেষণেই বোঝা যাচ্ছে বলে মত দেন কর্মকর্তারা।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী বন্যার ওপর হামলা চালিয়েছে। সাধারণত জঙ্গিরাই এভাবে নির্দয়ভাবে মানুষ হত্যা করে। এর আগেও তারা ঠিক একইভাবে ঢাবি শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার রাজীব হায়দারসহ আরো অনেককে হত্যা করে।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ দলে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, 'আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব না পেলেও আমরা কাজ শুরু করেছি। অনেক বিষয়েই খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শুধু একদিকে নজর দিলে হবে না। হত্যাকারী শনাক্তে সম্ভাব্য সব মোটিভ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।'
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এস এম শিবলী নোমান জানান, আনসার বাংলা টিম-৭ নামের যে সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করে টুইটারে পোস্ট লিখেছে, সেটি কতটা সঠিক তা যাচাই করা হচ্ছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দুটি চাপাতি ও কাঁধে ঝোলানো একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি চাপাতির হাতল কাগজে মোড়ানো ছিল বলে আলামত মিলছে। সব আলামত সিআইডির মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম নামের এক ফুল বিক্রেতার বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডে দুজন সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে একজনের গায়ে ছিল সাদা শার্ট, অন্যজন পরে ছিল কোট। ওই দুজনের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মতো। তারা এক থেকে দুই মিনিট সময় নিয়েছে। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কাছেই দাঁড়ানো সেলিম চিৎকার করে উঠলে হামলাকারীরা তাড়া করে। প্রাণভয়ে সেলিম সেখান থেকে দৌড়ে সরে যায়। হামলায় দুজনের অংশ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও সেখানে আশপাশে তাদের আরো লোক ছিল বলে ওসি সিরাজুল ইসলামের ধারণা।
চারদিকে পুলিশ, মাঝে খুন : বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পরপরই একুশে বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন সড়কে হামলার শিকার হন মুক্ত-মনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আনুমানিক ১০ হাত জায়গা ফিতা ও বাঁশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে সিআইডির টিম। চলছে আলামত সংগ্রহ ও পর্যালোচনা। মাঝখানের জয়গাটা তখনো জমাট রক্তে লাল। এর ওপর শোকার্ত সব শ্রেণির মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধা। ঠিক এই জায়গায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার অভিজিৎকে।
বৃহস্পতিবার রাতে যখন এখানে হামলার ঘটনা ঘটে, তখন ২০০ গজের নিরাপত্তাবলয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যূনতম ৫০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একুশের বইমেলা উপলক্ষে নেওয়া বিশেষ এ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা টিমের উপস্থিতি সম্পর্কে বলেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ঘটনাস্থলের খুব কাছেই। তিনি বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য রাতে যখন বইমেলার দিকে যাই, তখন টিএসসি মোড়ে ও মেলার গেটে দুটি টিম ছিল। এ ছাড়া জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, দোয়েল চত্বর মোড়েও ছিল চেকিং। বইমেলার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার খুব কাছাকাছি দূরত্বে কমপক্ষে ১০-১২ জন করে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসব চেকপোস্ট ভেদ করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলেই তাদের সারা শরীর তল্লাশি করে পুলিশ। সেখানে অস্ত্র নিয়ে একজন মানুষকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে কিভাবে নিরাপদে পালিয়ে গেল সন্ত্রাসীরা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টিএসসির এ জায়গাটিতে খুন করে পালিয়ে যাওয়া কঠিন বলে অভিমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তবে ঘটনার সময় টিএসসিতে উপস্থিত অনেকেই বলেছে, সেখানে যে হামলা অথবা হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে, তা একটু দূরে থেকেও বোঝা যায়নি। কোলাহলের কারণে আক্রান্তদের আর্তনাদ শোনা যায়নি। আর খুনিরা সব মিলিয়ে দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই স্থানটি ত্যাগ করে বলে সবার ধারণা। ঘটনাস্থলের সামনেই মিলন চত্বর। সেখানে শাহবাগ থানার এসআই ওয়াহিদুজ্জামানসহ আরো অন্তত সাতজন পুলিশ ছিল। গতকাল এসআই ওয়াহিদ বলেন, ঘটনার একটু পর তিনি খুনের বিষয়টি জানতে পারেন। ঘটনাস্থলের পাশের সোহরাওয়ার্দী গেট মুখে রমনা থানার এসআই মজিবুর রহমানসহ আরো কমপক্ষে ১০ জন পুলিশ ছিল বলে তিনি জানান। ঘটনাস্থল থেকে শাহবাগের দিকে আসতে চেকপোস্টে দায়িত্বে ছিলেন শাহবাগ থানার এসআই হাফিজুল ইসলাম। তিনিও দাবি করেন, অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী বন্যাকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার পর তাঁরা তা জানতে পারেন। এর আগে তাঁরা কিছুই টের পাননি।
একই সুতোয় গাঁথা : সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার লেখক অভিজিতের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে লেখক হুমায়ুন আজাদ হত্যার ঘটনা। ব্লগার রাজীব হায়দার খুনসহ অন্য আরো কয়েকটি জঙ্গি হামলার সঙ্গে মিল খুঁজে পেলেও একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার ঘটনার বেশি মিল রয়েছে অভিজিৎ হত্যার। এক দশক আগে প্রায় একই স্থানে, একই সময়ে ধারালো জাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছিল হুমায়ুন আজাদকে। সেদিন ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি, আর অভিজিৎ শিকার হলেন ২৬ ফেব্রুয়ারি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এ ঘটনাগুলোকে পর্যালোচনায় রেখেই তদন্তকাজে এগোচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন নামে পরিচিতি হলেও উগ্র মৌলবাদীদের হামলার ধরন প্রায় অভিন্ন। তারা টার্গেট ব্যক্তিদের গলা থেকে দেহের ঊর্ধ্বভাগ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে একইভাবে চাপাতি দিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকেও রাজধানীর মিরপুরে তাঁর বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডেও জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।
হুমকি ছিল হত্যার : সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখালেখির জন্য অভিজিৎকে আগে থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা। এ কথা জানিয়ে অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, 'আমার ছেলেকে হত্যার জন্য উগ্র জঙ্গিবাদীরাই দায়ী। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত। তবে কে কে হত্যায় অংশ নিয়েছে তা আমি জানি না। পুলিশ তদন্ত করে তা দেখবে।'
অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার না করলেও অনেকে নজরদারিতে আছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উগ্রবাদীদের পক্ষে বিভিন্ন সময় কার্যক্রম পরিচালনাকারী ফারাবী সাইফুর রহমানের নাম আলোচনায় এসেছে এ হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ পর থেকেই। কারণ ফারাবী অন্য ব্লগারদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন অভিজিৎকে হত্যার প্রয়োজনীয়তার কথা। গত ৫ ফেব্রুয়ারিও ফারাবী অন্য একজনের লেখার নিচে মন্তব্য করেন, প্রবাসে থাকা অভিজিৎ দেশে এলে হত্যা করা হবে।
অভিজিৎ আক্রান্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই অনলাইনে ছড়াতে থাকে এ হামলার খবর। এরই মাঝে মধ্যরাতে 'আনসার বাংলা-৭' নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক টুইট করে এ হত্যাকাণ্ডকে 'বিজয়' হিসেবে দাবি করা হয়। রাত ১২টার দিকে বলা হয়, 'আল্লাহু আকবর... বাংলাদেশে আজ একটি বিশাল সাফল্য এসেছে। টার্গেট ইজ ডাউন..."- এ টুইটার অ্যাকাউন্টটি কার এবং প্রকৃতপক্ষেই তারা এ হত্যায় জড়িত কি না তা যাচাই করতে গোয়েন্দাদের একটি ইউনিট কাজ করছে।
গোয়েন্দারা বলছে, অভিজিতের প্রগতিশীল লেখালেখি এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত ছিল। তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায়ও একজন প্রগতিশীল ব্যক্তি। এ ছাড়া হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে- এটা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর কাজ। হত্যাকারীরা ভিকটিমদের গতিবিধি বেশ কিছু দিন ধরে পর্যালোচনা করেছে। ভিকটিমরা কোথায় যায়, কী করে, কখন ফেরে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে হত্যাকারীদের ছক আঁকা ছিল।
মামলা : এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল সকালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়, যাতে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের আসামি করা হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম মামলা দায়েরের কথা জানিয়ে বলেন, 'তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনো মন্তব্য করার মতো অগ্রগতি আসেনি।'
আজ (গত) রাতে মামলার তদন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী পুলিশ কমিশনার শিবলী নোমান।
ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ শুক্রবার দুপুরে অভিজিতের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, অভিজিৎ রায়ের মাথার পেছনের দিকে ডান পাশে তিনটি গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল, যেগুলো করা হয়েছে চাপাতির মতো কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে। একটি আঘাত থেকে আরেকটি আঘাতের দূরত্ব আধা ইঞ্চি, সবই সমান্তরাল। ওই আঘাত এতই মারাত্মক ছিল যে, চামড়া ও হাড় কেটে একবারে মগজে পৌঁছেছে। এ ছাড়া পিঠে ও বাম চোখের ভ্রূর কাছে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মূলত মাথার পেছনে তিনটি আঘাতের প্রচণ্ডতা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষণেই অভিজিতের দ্রুত মৃত্যু ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।
চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ আরো বলেন, এটি খুব দক্ষ হাতের কাজ। কোথায় মারলে মানুষ মারা যায়, সেটা হামলাকারীরা জানে। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও হিংস্র ছিল। তিনটি আঘাত করেছে আধা ইঞ্চি ব্যবধানে, একটি আরেকটির ওপর পড়েনি। পরিকল্পনা, দক্ষতা আর হিংস্রতা ছাড়া এভাবে মানুষ হত্যা সম্ভব নয়।
ময়নাতদন্তের আগে অভিজিতের লাশের সুরতহাল করেন শাহবাগ থানার এসআই সুব্রত গোলদার। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, অভিজিতের মাথার পেছনে আঘাতগুলোর মধ্যে একটি তিন ইঞ্চি ও অন্যটি ছয় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের। দুটোই প্রায় দুই ইঞ্চি গভীর।
মরদেহ দান : লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার। অভিজিতের পিসতুতো ভাই বিষ্ণু রায় শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'মৃত্যুর পর নিজের মৃতদেহ মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার কাজে দান করার ইচ্ছা ছিল অভিজিৎ দার। তাঁর সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
ময়নাতদন্তের পর অভিজিতের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে। রবিবার সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর পর মৃতদেহ আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেলে দান করা হবে বলে স্বজনরা জানান।

রেজোয়ান বিশ্বাস ও রফিকুল ইসলাম, দৈনিক কালেরকণ্ঠ, ২৮-০২-১৫