কানসাটে জিয়া পরিষদের ‘হাতধরে’ বিএনপিতে সক্রিয় হয় মোজা ও শিশির

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান এম নিহত হওয়ার সময় থেকে ‘নিখোজ’ থাকার পর কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের হাতে ককটেলসহ আটক মোজাম্মেল হক মোজা ও আবু তাহের শিশির কানসাটে জিয়া পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিএনপিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। তারা জিয়া পরিষদে যুক্ত হয়েছিলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল হক হায়দারীর হাতধরে। শিবগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া নিশ্চিত করেছেন মোজা ও শিশিরের জিয়া পরিষদের সদ্যস্যের বিষয়টি।
‘মতিউর রহমান এম-এর সঙ্গে মোজাম্মেল হক মোজা ও আবু তাহের শিশিরকে র‌্যাবের একটি দল ধরে নিয়ে যায়’ মোজা ও শিশিরের পরিবার এবং স্থানীয় বিএনপি নেতাদের এমন দাবি থাকলেও ঘটনার দু’সপ্তাহের মাথায় তারা কুষ্টিয়া জেলায় র‌্যাবের হাতেই ককটেলসহ আবারও আটক হয় কিভাবে এমন প্রশ্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে। এনিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জনিউজ ডটকমের অন্সুন্ধানে মোজা ও শিশিরের বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার কাহিনী এবং পাওয়া গেছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য।
দেশের অন্যতম বৃহৎ উপজেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট দেশজুড়ে আলোচিত এলাকা। বহু আলোচিত এই কানসাট বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত বহু আগে থেকে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, বিএনপি’র ‘উর্বর’ এলাকা এই কানসাটে গত কয়েক বছর ধরে নতুন নেতা হিসেবে আর্বিভুত হন গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল হক হায়দারী। স্বচ্ছল পরিবার আর প্রবাসী ভাইদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন শহিদুল। নির্বাচিত হন বিএনপি’র যুব সংগঠন যুবদলের শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকও। স্থানীয় সূত্র জানায়, শহিদুল হক হায়দারী প্রথমে কানসাট এলাকায় গড়ে তুলেন ‘জিয়া পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। তাতেই যুক্ত কানসাট, শ্যামপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু যুবক। ওই সূত্র জানায়, এই বহু যুবকের তালিকায় ছিলেন এলাকায় দু’সপ্তাহ ‘নিখোজ’ থাকার পর কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া আবু তাহের শিশির ও মোজাম্মেল হক মোজা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক ব্যবসায়ী  চাঁপাইনবাবগঞ্জনিউজ ডটকমকে বলেন, ‘ শিশিরের বাড়ি শ্যামপুরের বাজিতপুর গ্রামে আর মোজার বাড়ি কানসাটে কলাবাড়িতে। এদের বিচরণ ছিল কানসাট কেন্দ্রীক। উঠতি বয়সের ছেলে হলে যা হয় এমনি এমনি তারা জিয়া পরিষদে জড়িয়ে যায়’। তিনি বলেন, ‘ শিশির এলাকায় ক্রিকেট খেলতো। একটা সাধারণ ছেলে আগে কখনও রাজনীতি টাজনীতির সঙ্গে ছিলনা। কিন্তু কিভাবে যে জড়িয়ে গেল। আমরা বুঝতেই পারিনি’।
মোজা ও শিশিরের পরিবার এবং বিএনপি’র দাবি অনুযায়ী তারা যদি ১৫ জানুয়ারি র‌্যাবের হাতে আটক হয় তাহলে আবারও তারা র‌্যাবের হাতে আটক হলো কিভাবে, এমন প্রশ্ন করা হলে এলাকার মানুষ বলেন ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও গোলক ধাঁধাঁয় রয়েছি’।
আবু তাহের শিশিরের পিতা মজিবুর রহমান মিষ্টার ও মোজাম্মেল হক মোজার পিতা মহাসিন আলীর অভিযোগ, মতিউর রহমান এমকে আটকের দিন বিকেল পৌনে চারটার দিকে বাজিতপুর গ্রামের একটি বেগুনের খেত থেকে এম-এর সঙ্গে আবু তাহের ও মোজাম্মেলকেও আটক করে র‌্যাব। পথে হযরত আলী ও শ্যামল নামের আরো দুজন মিলিয়ে পাঁচজনকে আটক করে র‌্যাব। তারা বলেন, মতিউর রহমান এম নিহতের পরের দিন র‌্যাব শ্যামল ও হয়রতকে শিবগঞ্জ থানায় সোপার্দ করলেও ‘নিখোজ’ ছিল মোজা ও শিশির। তারা বলেন, ‘সেই থেকে আমরা দুশ্চিন্তা ও আত্মংকের মধ্যে রয়েছি’।
এদিকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান এম নিহত হওয়ার ঘটনার সময় স্থানীয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল মতিউর রহমানসহ তিনজনকে আটকের কথা। ওই ঘটনাকে নিয়ে বিবিসি-বাংলাসহ দেশের গণমাধ্যমগুলো যেমন, প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, নয়াদিগন্ত, মানবজমিন, করতোয়া ও অন্যান্য পত্রিকায় র‌্যাবের বরাত দিয়ে তিনজন আটকের কথা বলা হয়েছিল। বেশ কিছু গণ মাধ্যমে শিবগঞ্জ থানার ওসি’র বরাত দিয়ে দু’জনকে থানায় সোপার্দের কথাও বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে র‌্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর কামরুজ্জামান পাভেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবারও জানান, ওই দিন মতিউরের সঙ্গে হযরত ও শ্যামলকে আটক করা হয়েছিল।
তবে, শিবগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া বিষয়টিকে র‌্যাবের নাটক উল্লেখ করে বলেন, ‘ ‘এটি র‌্যাবের বানোয়াট গল্প। ১৫ জানুয়ারি অভিযানের সময় এই দুজনসহ পাঁচজনকে আটক করে র‌্যাব। ঘটনাটি তাঁদের পরিবারের লোকজনসহ অনেকেই দেখেছেন’। তিনি বলেন,‘ আটক পাঁচজনের মধ্যে মধ্যে মতিউর রহমান নামে ছাত্রদলের স্থানীয় এক নেতা র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন এবং দুজনকে শিবগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়। আর আবু তাহের ও মোজাম্মেলের খোঁজ এত দিন পাওয়া যায়নি।’ এ দুজন বিএনপির সমর্থক ও স্থানীয় জিয়া পরিষদের সদস্য বলে দাবি করেন শাহজাহান মিঞা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ৩১-০১-১৫

,