কৃষক প্রশিক্ষণে তথ্য > হাইড্রোজ মেশানো সাদা গুড় মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক

আখের ফলন বৃদ্ধি ও হাইড্রোজমুক্ত গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যে ২দিনব্যাপী কৃষক প্রশিক্ষন সোমবার শেষ হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর ঢাকা ক্রফট উইং এর আয়োজনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হলরুমে এই প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষনে রিসোর্স পারসন হিসেবে প্রশিক্ষন প্রদান করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর ক্রপস উইং প্রিন্সিপ্যাল পেইষ্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট শরিফুল ইসলাম ও একই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষন কর্মকর্তা সামস্-ই-তাবরীজ, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ও শস্য সংরক্ষন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হুদা। বক্তব্য রাখেন কৃষক এরশাদ আলী, মাহবুব আলম, পরিবত চিশতী।
প্রশিক্ষনে জেলার ৩০ জন আখচাষী অংশ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষনে জানানো হয়, নন মিলজোনে হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় উৎপাদন করা হয়, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাইড্রোজ মিশ্রিত গুড় খেয়ে মরনব্যাধী ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশিক্ষনে হাইড্রোজমুক্ত গুড় উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রশিক্ষনে আখের আবাদ পরিস্থিতি, আখ আবাদের গুরুত্ব ও করণীয়, আখের জাত সমূহ ও তাদের বৈশিষ্ট, জাত ও বীজ নির্বাচন, বীজখন্ড তৈরী ও চারা রোপন, জমি নির্বাচন, জমি চাষ, নালা তৈরী, নালায় সার প্রয়োগ ও আখের চারা রোপন, আখের অন্তরকালীন পরিচর্যা, আগাছা দমন, মাটি আলগাকরণ, গোড়ায় মাটি দেয়া, আখের ঝাড় বাঁধা, আখের সাথে সাথী ফসলের চাষ, উপযুক্ত সাথী ফসল নির্বাচন, জোড়াসারি পদ্ধতিতে সাথী ফসলের চাষ, একাধিক সাথী ফসলের চাষ, সারের মাত্রা, আখের উপরী সার প্রয়োগ, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, আখের ক্ষতিকর পোকা মাকড় পরিচিতি, আক্রমনের লক্ষন প্রতিকার ও দমন ব্যবস্থা, আখের রোগ পরিচিতি, আক্রমনের লক্ষন, দমন ব্যবস্থা, আখের রোগ দমনে আখের বীজ শোধনের গুরুত্ব ও উপায়, আখ কাটা, মুড়ি আখ ব্যবস্থাপনা, মুড়ি আখে সারের মাত্রা, মুড়ি আখের সাথে সাথী ফসল চাষ, আখচাষে আধুনিক যন্ত্রপাতির পরিচিতি ও রস আহরণ বৃদ্ধির জন্য শক্তিচালিত আখ মাড়াইকলের ব্যবহার, গুড় উৎপাদন, ক্ষতিকর হাইড্রোজমুক্ত গুড় উৎপাদনের উপায়, দানাদার গুড় উৎপাদন ও গুড় সরক্ষন পদ্ধতি এবং সুগার বিট চাষ পদ্ধতি ও সুগারবিট থেকে গড় উৎপাদন বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে বাস্তব ধারণা প্রদান করা হয়। কৃষকরা জানায়, সাধারণভাবে গুড় উৎপাদন করে গুড়ের দাম কম পাওয়ার কারণে কৃষকরা হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় উৎপাদন করে। যদি হাইড্রোজ দিয়ে পরিস্কার (সাদা রং) করে গুড় উৎপাদন করে যে গুড়ের দাম পাওয়া যায় মন প্রতি ১ হাজার ৫’শ টাকা, সেখানে সাধারণভাবে গুড় তৈরী করে দাম পাওয়া যায় ১২’শ থেকে ১৩’শ টাকা। তাই জেনে শুনে ১ মন গুড়ে ২ থেকে ৩’শ টাকা কম দাম কৃষকরা মেনে নিতে না পেরেই হাইড্রোজ দিয়ে পরিস্কার গুড় তৈরী করে থাকে। ক্রেতাদের মন কাড়ার জন্যই পরিস্কার করে গুড় তৈরী করতে বাধ্য হয় কৃষকরা। যদি সাধারণ ক্রেতারা সাধারণ গুড় কেনার প্রতি সচেতন হয় তাহলেই হয়তো কৃষকরা হাইড্রোজ বা কোন কেমিক্যাল না মিশিয়ে গুড় তৈরী করতে আগ্রহী হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর ক্রপস উইং প্রিন্সিপ্যাল পেইষ্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট শরিফুল ইসলাম বলেন, সাদা রঙ দেখে যে গুড় সাধারণ ক্রেতারা কিনে থাকেন, সে গুড় আসলে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই সাদা গুড় না ক্রয় করে সাধারণভাবে উৎপাদিত গুড় ক্রয়ের জন্য আহবান জানান তিনি। হাইড্রোজ মিশ্রিত গুড় পরিহার করারও আহবান জানান তিনি। তিনি আরও জানান, হাইড্রোজ ব্যবহার হয় বিভিন্ন চামড়া পরিস্কার করার কাজে। এই হাইড্রোজ বিষাক্ত হওয়ায় তা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রশিক্ষনে সকল আখ চাষীদের একত্র হয়ে হাইড্রোজ না মিশিয়ে গুড় তৈরী করে তা বাজারজাত করার জন্যও বিশেষভাবে অনুরোধ জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৭-১১-২০১৪