নাটোরে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় যাত্রীবাহী দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ৩৪ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের রেজুর মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুই বাসের মধ্যে একটি কেয়া পরিবহনের, সেটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল। আরেকটি লোকাল বাস। অথৈ পরিবহনের এই লোকাল বাসটি নাটোর থেকে গুরুদাসপুর যাচ্ছিল। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ২২ জন মারা যায়। এদের মধ্যে দুই বাসের চালকও রয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, বেপরোয়া গতির কারণেই বাস দুটি সংঘর্ষের কবলে পড়ে।
কেয়া পরিবহনে কমপক্ষে ৩৬ জন যাত্রী ছিল। আর অথৈ পরিবহনের বাসটিতে বসা ও দাঁড়িয়ে থাকা মিলিয়ে ছিল অন্তত ৪৬ জন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই অথৈ পরিবহনের যাত্রী। তারা একটি জোড়া খুনের মামলার আসামি ও তাদের সঙ্গী-সাথি। ডা. ইয়ারুল ও আমিরুল ইসলাম খুনের মামলায় নাটোর কোর্টে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল তারা। এদের মধ্যে গুরুদাসপুরের সিধুলী গ্রামেরই ১৩ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে ছয় সহোদরও আছে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুই শিশু ও এক নারীও রয়েছে। অথৈ পরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগই সিধুলী গ্রামের।
আহতদের বনপাড়া আমেনা হাসপাতাল, পাটোয়ারী হাসপাতাল, জয়নব হাসপাতাল, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল, গুরুদাসপুর হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নাটোর ফায়ার সার্ভিস, বড়াইগ্রাম থানা ও বনপাড়া হাইওয়ে থানার পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বড়াইগ্রাম মোড়ের আগে রেজুর মোড়ে পৌঁছালে কেয়া পরিবহনের বাসটি একটি ট্রাককে ওভারটেক করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বিপরীত দিক থেকে আসা গুরুদাসপুরগামী অথৈ পরিবহনের বাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুটি গাড়িই প্রচণ্ড গতিতে ছুটছিল। দুর্ঘটনার বাস দুটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং মহাসড়কের দুই পাশের গর্তে ছিটকে পড়ে। যাত্রীরা রাস্তায় ছিটকে পড়ে।
কেয়া পরিবহন বাসের পেছনে প্রাইভেট কারে ছিলেন বড়াইগ্রামের ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম নয়ন। তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় বিকট শব্দ হয়। অতৈ পরিবহনের বাসটি দুমড়েমুচড়ে মহাসড়কের পাশে গর্তে গিয়ে পড়ে। কেয়া পরিবহনের বাসটির সামনের অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটিও মহাসড়কের আরেক পাশে ছিটকে পড়ে। ঘটনার সময় রাস্তায় ও আশপাশে হতাহতরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনার শব্দে শত শত এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারাই প্রথম উদ্ধারকাজ শুরু করে। এরপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন নাটোর, লালপুর ও দয়ারামপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সঙ্গে ছিল বড়াইগ্রাম থানা ও বনপাড়া হাইওয়ে থানার পুলিশ। এলাকাবাসীর সহায়তায় তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই গাড়ির চালকসহ ২২ জনের লাশ উদ্ধার করে ট্রাকে করে বনপাড়া হাইওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। স্বজনরা শনাক্ত করার পর বেশির ভাগ মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই নাটোর জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান, পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক ও বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একরামুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের ওপর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলার প্রতিবাদে গতকাল নাটোর সদরসহ ছয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দুর্ঘটনার পর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে তাঁরা আহতদের চিকিৎসা শুরু করেন।