সোনামসজিদ স্থল বন্দরের ভাগবাটোয়ারা আর আধিপত্যের দ্বন্দ্বেই খুন হয়েছে যুবলীগ নেতা মনিরুল

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর সোনামসজিদ স্থল বন্দরে ক্ষমতা আধিপত্য বিস্তার ও আর্থিক দ্বন্দ্বের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সোনামসজিদ স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ও শাহবাজাপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম। মনিরুলের সঙ্গে থাকা তিন সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের পর পুলিশের হাতে আটক হয়ে হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ ও অন্যান্য সূত্র একথা নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শিবগঞ্জের শাহবাজপুর ইউনিয়নের শিয়ালমারা গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩৫) শুক্রবার সোনামসজিদ সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর এসেছিলেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। সন্ধ্যায় কারযোগে শিবগঞ্জ ফেরার পথে পরিকল্পিতভাবে শিবগঞ্জ ষ্টেডিয়ামের কাছে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ সূত্র জানায়, মনিরুলকে বহনকারী কারটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে পরিকল্পিতভাবে অপেক্ষাকৃত নির্জন সড়ক ষ্টেডিয়াম সড়কে চলে আসে। ষ্টেডিয়াম সড়কের নির্জন যায়গায় মনিরুলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করার পর হত্যাকারীরা পালিয়ে আশ্রয় নেয় কানসাট ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীর বাড়িতে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে এবং এমপি’র বাড়ি থেকে আটক করে সোনামসজিদ সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আখেরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তোহরুল ইসলাম টুটুল ও সিনিয়র সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম মুন্সিকে। পুলিশ জানায়, প্রাইভেট কারে আটককৃতরা মনিরুলের সঙ্গে ছিল। পুলিশ ওই সময় রক্তমাখা প্রাইভেট কার এবং কারের ভেতর থেকে একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি ও চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করে। তবে, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রটি উদ্ধার হয়নি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন,‘ আটককৃতরাই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকারও করেছে’। তিনি জানান, তিনটি সূত্র ধরে হত্যাকান্ডের রহস্য অনুসন্ধানের পুলিশ তদন্ত করছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, স্থল বন্দরের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও আর্থিক বিষয়ের কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। সেগুলোও তদন্ত করা হচ্ছে’।
পুলিশ নিহত মনিরুলের লাশ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এদিকে বন্দর সূত্র জানিয়েছে, সোনামসজিদ স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যাবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সময়ই মনিরুল ইসলাম যুবলীগের রাজনীতির নেতৃত্বের যায়গায় চলে আসেন। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের গ্রামের এলাকা শাহবাজপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই সূত্র জানায়, ব্যক্তি জীবনে মনিরুল ছিল খুবই ষ্পষ্টবাদি। তিনি বন্দর এলাকায় গড়ে তোলেন বেশ প্রভাবও। সিএন্ডএফ ব্যবসার সূত্র ধরে খুব অল্প সময়ে প্রচুর টাকার মালিক হন।
ওই সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সোনামসজিদ স্থল বন্দরের চাঁদার টাকা নিয়ে মনোমালিন্য চলে আসছিল এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে টাকার হিসেবে নিকেশ মনিরুলের কাছে থাকালেও হিসেবের বাইরে প্রচুর টাকা থেকে যায় এ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে।
অন্যদিকে, মনিরুলের হত্যাকান্ডের ঘটনায় সোনামসজিদ স্থল বন্দরে শনিবার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্দরের শ্রমিকসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করে এবং বন্ধ করে দেয় আমদানী রপ্তনী কার্যক্রম। এই অচলাবস্থার কারণে ভারতের মহদিপুর স্থল বন্দরে আটক পড়েছে প্রায় ৮ শ পণ্যবাহি ট্রাক। বিক্ষোভের কারণে ট্রাক গুলো সোনামসজিদে ঢুকতে পারছেনা। সূত্র জানায়, সোনামসজিদ বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা ট্রাকগুলোর মধ্যে ১ শ টি রয়েছে ফলসহ পচনশীল দ্রব্যের।