ধাইনগর হত্যাকান্ড> এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ> পুলিশী ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার একপ্রানেত্মর ইউনিয়ন ধাইনগর। মহানন্দা তীরবর্তী এই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ধাইনগর-পিঠালিতলা সড়ক। মর্দনা বিল ও বিসত্মৃর্ণ আবাদি জমির মধ্য দিয়ে সরম্ন, আঁকাবাঁকা, জরার্জিণ এই সড়কটি বহু বছর থেকেই ডাকাতদের অভয়ারণ্য। সন্ধ্যা নামলেই এই সড়কে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায় সাধারণের যাতায়াত। গেল দেড় দশকে শত শত মানুষ এই সড়কে ডাকাতির শিকার হয়েছে। এমনকি সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। বুধবার রাতে একটি মটর সাইকেল ডাকাতি করে নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় গণপিটুনিতে ২ ডাকাত নিহত হবার ঘটনার পেছনের ঘটনা বলতে গিয়ে এমন কথা বলেছেন ধাইনগর ও মর্দনা এলাকার সাধারণ মানুষ।
পুলিশ ও স'ানীয়রা জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিবগঞ্জের বিরহামপুর গ্রামের ঔষধ ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বাবু তার মটর সাইকেল নিয়ে শিবগঞ্জ যাচ্ছিলেন। বাবু দবিরের মোড়ে কাছে এসে পৌছলে ওৎ পেতে থাকা দু’ ডাকাত ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পিঠে কোপ মারে এতে সে রাসত্মার ধারে পড়ে যায়। ডাকাতরা তার মটর সাইকেল নিয়ে ধাইনগরের দিকে পালিয়ে যায়। এ সময় মর্দনা এলাকা থেকে কৃষি বিভাগের বস্নক সুপারভাইজার আমিনুল ইসলাম শিবগঞ্জ যাওয়ার পথে বাবুকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসে। বস্নক সুপারভাইজার আমিনুল তাৎড়্গণিক ডাকাতির বিষয়টি ধাইনগরের আবু বাক্কারকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেয়। স'ানীয়রা জানায়, এরই মধ্যে ডাকাতরা ধাইনগরের নাককাটিতলা ঘাটে পৌছে যায়। ধাইনগরের ওবাইদুল হক বলেন, ‘ ডাকাতরা ঘাটে এসে এক নৌকার মাঝিকে ওপারে পৌছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকে’। তিনি বলেন, ‘নদী পার হতে ডাকাতরা মাঝি ৩ শ টাকা দিতে চায় এবং ঝটপট করতে থাকে। মটর সাইকেল নিয়ে আসা মানুষ অথচ তাদের পায়ে কোন সেন্ডেল ছিলনা। এতে মাঝিসহ লোকজনের সন্দেহ হয়। তারা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে একজন নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে। এলাকার শত শত মানুষ ছুটে এসে তাদের ধরে গণ পিটুনি দিয়ে ইউনিয়ন কাউন্সিলে ফেলে রাখে’।
এদিকে, খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস'লে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে শিবগঞ্জ স্বাস'্য কমপেস্নক্সে নিয়ে আসার পথে তারা মারা যায়।
শিবগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক সুদীপ্ত রেজা জানান, ঘটনার একদিন পর নিহত দু’ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়ার মোহাম্মদ লিটনের ছেলে আমানত (২৫) ও শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক লাভাঙ্গার ইউসুফ আলীর ছেলে শামীম (৩৫)। অপর জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিহতদের ময়না তদনত্ম করা হয়েছে’।
এদিকে, গণপিটুনিতে দু’ ডাকাত নিহত হওয়ার বিষয়টিকে এলাকাবাসী তাদের দীর্ঘ দিনে পুঞ্জিভুত ড়্গোভের বহিপ্রকাশ হিসেবে উলেস্নখ করছেন। ধাইনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তাবারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘গেল ৮/১০ ধরে ডাকাতির মাত্রা ভয়াবহ বেড়েছে। গুড়ার বসত্মা বহন কারী সামান্য ভুটভুটি চালকেও আহত করে তার জিনিষপত্র কেড়ে নিয়েছে। দিনে দুপুরে ধাইনগরের এক ছেলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়েছে। এছেলেটি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে’। তিনি বলেন, ‘ মা-বোনরাও রেহায় পাচ্ছেনা তাদের হাত থেকে। সপ্তাহখানেক আগে সন্ধ্যার সময় একটি পিকনিক পার্টিকে রাসত্মায় আটকে মেয়ে মানুষদের শারীরিকভাবে নির্যাতনও করে। এ সব কারণে এলাকার মানুষ একে বারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল’।
মর্দনা গ্রামের শামসুল হক বলেন, ‘ আগে সাধারণত সন্ধ্যার পরে ডাকাতরা হামলে পড়তো সাধারণ মানুষজনের উপর। কিন' ইদানিং এর মাত্রা বেড়েছে। সন্ধ্যার আগেও ডাকাতি করছে। রাসত্মায় মানুষজনের সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে’।
সরজমিনকালে এলাকার মানুষ অভিযোগ করেন, ধাইনগর-মর্দনা-পিঠালিতলা সড়ককে সন্ধ্যার সময় পুলিশী টহল থাকতো। কিন' ইদানিং সেই পুলিশী টহল উঠে গেছে। রাসত্মায় কোনই পুলিশ দেখতে পাওয়া যায়না। তারা অভিযোগ করে বলেন, রানীহাটি, লাভাঙ্গা, বারোঘরিয়া, মর্দনা ধাইনগর এলাকা নিয়ে ডাকাতদের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা পুলিশের যোগসাজসেই একেরপর এক ডাকাতি করে যাচ্ছে’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধাইনগরের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ‘বারবার ডাকাতি ছিনতায়ের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে বলা হলেও তারা এলাকাবাসীকেই ‘সচেতন’ হবার পরামর্শ দিয়েছেন কোন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি’। 
এব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি লাইনটি কেটে দেন। 

, ,