রোযা- ছাওম- সংযম- বিরতথাকা

ফকির উয়ায়ছী
রোযা শব্দটি ফারসী ভাষা, এর আরবী শব্দটি হচ্ছে ছাওম। ছাওম শব্দটির বাংলা অর্থ সংযম বিরত থাকা। প্রকাশ্যে সুবহে ছাদেক হইতে রাত্রি পর্যন্ত পান, আহার ও স্ত্রী সহবাস হইতে বিরত থাকাই রোযা। আল্লাহর কোরআন মতে আরবী রমযান মাসের পূর্ণ মাস রোযা করার জন্য আল্লাহ কঠিন আদেশ দিয়েছেন। রমজান মাসেই সেই মহাপবিত্র ও সম্মানী কিতাব লাইলাতুল কদর এর ঘোর অন্ধকার রাত্রিতে আল্লাহ নাজিল করেছেন। রমযান মাসের চেয়ে উত্তম মাস দিন আর কোন মাস হতে পারে না।
রোযার উদ্দেশ কি হওয়া উচিত:
সর্বপ্রকার অবৈধ কাজ ও চিন্তা হইতে নিজেকে বিরত রাখার নামই রোযা, সংযম বা বিরত থাকা। শুধু রমযান মাসেই এসব থেকে বিরত থাকবেন বাকী এগার মাস আপনি এই সব থেকে বিরত থাকবেন না সেটা প্রকৃত রোযা নয় বরং উপোশ বা না খেয়ে থাকা। অনাহারী মানুষ যেমন খাদ্য অভাবে না খেয়ে থাকে শুধু তাদের উপোশ কালীন সময় টুকুরই মত। এই রমযান মাস আমাদের শিক্ষাটা পরিপূর্ণ করে বাকী এগার মাস অবৈধ চিন্তা চেতনা মূক্ত যারা থাকতে পারেন তারাই প্রকৃত রোযাদার।
সাড়াদিন অনাহারী থেকে সন্ধাবেলা রাজ্যের খাওয়া নিয়ে বসে ইফতার করার নাম রোযা নয়। রাছুল সা. হাদিসে বলেছেন ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদনুযায়ী কাজ করা ত্যাগ করে নাই, আল্লাহ্র নিকট তাঁহার আহার ও পান ত্যাগ করার কোনও দরকার নাই।’ এই হাদিসটিতে বুঝা যায় মিথ্যা এবং তদনুযায়ী কাজ অন্যায়ের মুল। এই কুস্বভাব সাথে লইয়া অনাহরে থাকা আল্লাহ কোন ক্রমেই পছন্দ করতে পারেন না।
রোযা মনকে পবিত্র করে সে সাথে দেহকে অপবিত্রতা থেকে বাচায়। প্রত্যেকটি সম্পদের যাকাত দিতে হয়। আল্লাহ কতৃকদান করা এই দেহটির যাকাত হচ্ছে রোযা। যেহেতু যাকাত শব্দের অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা। অন্যায়, অবৈধ কাজ এবং চিন্তা চেতনা মুক্ত থাকিতে পারিলেই দেহ মন পবিত্র থাকে এবং সেমতে দেহের যাকাত হয়। বুজুর্গগনদের মুখে শুনা রাছুল সা. বলেছেন ‘কিছু রোযাদার আছে যাদের রোযা হয় নাই পিপাসা ব্যতীত এবং কিছু দন্ডায়মান (দাড়ায়ইয়া নামাজ আদায়কারী) আছে তাহাদের দাঁড়ান কোন কাজে আসে নাই নিদ্রাহীনতা ব্যতীত।
রোযা করে রোযার উদ্দেশ্যই যদি অর্জিত না হয়, রাত জাগিয়া দাঁড়াইয়া নামাজ আদায় করিয়া নামাজের উদ্দেশ্য অর্জিত না হয় তবে কষ্ট করে সাড়াদিন অনাহারী থেকে এবং দাঁড়াইয়া কষ্ট করে নামাজ পড়া তো বৃথা। শুধু এক মাসের এক মাসের উপবাস এবং স্ত্রী সহবাস হইতে বিরত থাকলেই হবে না। সাড়া জীবনের জন্য কুচিন্তা এবং কুকর্ম হইতে নিজকে বিরত রাখতে হবে। পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রন করে অবৈধ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারলে রোযার স্বার্থকতা আসবে। যেমন চুক্ষ দ্বারা অবৈধ কিছু দেখবোনা। কান দ্বারা অবৈধ কিছু শুনবো না। নাক দ্বারা অবৈধ ঘ্রান গ্রহন করবো না। জিবহা দ্বারা অবৈধ স্বাধ গ্রহন করবোনা এবং অবৈধ কথা বলবো না। হাত দ্বারা অবৈধ জিনিষ ধরবোনা এবং অবৈধ চিন্তা চেতনা করবোনা। তাহলেই রোযার পরিপূর্ণতা আসবে।
আমাদের তরিকতের আদি বুজুর্গ আব্দুর রহিম শাহ সাহেব তার কিতাবে লিখেছেন
রোজাদার হয় মেরা নফছ আম্বারার।
বদ ফেল যত কিছু খোরাক যাহার।।
ইফতারের কাল বটে আখেরী সময়।
এ ছুরাতে হয় রোযা রমযান আদায়।।
নিজকে কলুষমুক্ত না করতে পারলে রোযা হবে না। রোযাই যদি নাই হয় তবে রমযান মাসের মহা পবিত্র কদরের রাত্রির মর্যাদা উপলব্ধি করা যাবে না। উপলব্ধি করতে পারবে না কোরআন নায়িল। ফিরেশতা সমূহ ও পবিত্র রুহের অবতরন এবং সাড়া রাত্রি মানুষের জন্য শান্তি বর্ষন। হতভাগ্য সে যে এ রাত্রি আশীর্বাদ ও মর্যাদা বুঝলো না। এসব বিষয় অনুমান করে বুঝার উপায় নাই। কারণ অনুমান সত্যের ধারে কাছেও যায় না।–(আ.কু-১০:৩৬)। তাই রাছুল সা. বলেছেন ‘জাহেলের ইবাদতের চেয়ে জ্ঞানীর ঘুম ভাল।’
আমাদের অন্য এক বুজুর্গ শাহ কছিমদ্দিন তাঁর কিতাবে লিখেছেন
অভাবে স্বভাব নষ্ট প্রকাশ জাহানে।
জ্ঞানহীন থাকা ভবে অভাবের মানে।
জ্ঞানহীন অভাবি অজ্ঞানের মত অবৈধ কাজ করে যারা রোযা করে তাদের অন্তরে আনন্দের চেয়ে কষ্টটাই বেশী মনে হবে। তাই আহবান জানাই রোজা রাখবেন এবং পূর্ণ ফল ভোগ করার জন্য অন্তরের কুস্বভাবগুলি পরিত্যাগ করবেন। এই রমজান মাসে কন্ট্রোল করে বাকী ১১ মাস ধরে রাখতে চেষ্টা করবেন।