আবহাওয়া বিরূপ না হলে আমের রাজধানীতে ভাল ফলনের স্বপ্ন চাষীদের


গেল বছর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জজুড়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ আমের মুকুল কম আসলেও চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণে আমের মুকুলের দেখা মিলবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ ও আম চাষিরা। তবে গাছে গাছে মুকুল আসলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের ভাল ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন আম চাষি ও বাগান মালিকরা।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ আম গাছে মুকুল এসেছে। যা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শতভাগ গাছ মুকুলিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াগত কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মার্চে প্রথম সপ্তাহেও মুকুলিত হতে দেখা গেছে অতীতে।
বাগান মালিক ও আম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর মুকুল আসার আগে উত্তরে জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক বেশী শীত ছিলো। আর এই শীতের মাঝেই গাছে গাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। আম চাষিদের সাথে শুর মিলেয়ে কৃষি বিভাগ বলেন, মৌসুমের শুরুতে জেলার প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর আম বাগানের ৬০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। যা গত বছর ছিল ৮০ ভাগেরও কম।
এদিকে গোটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান গুলো এখন মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা। আম বাগানজুড়ে এখন চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মুকুল পরিচর্যায়। বর্তমাণে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলেও ভাল ফলনের স্বপ্ন দেখছেন আম চাষিরা।



চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখাগেছে মুকুল আসার পর থেকেই হাজার হাজার চাষী ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাগান পরিচর্যার কাজে। পোকা ও বালাই দমনে গাছে গাছে চাষীরা স্প্রে করার পাশাপাশি গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছেন। আর কিছুদিন পরই গাছে গাছে ঝুলতে দেখা যাবে ল্যাংড়া, খিরসা, রানীভোগ, মোহনভোগ ও ফজলিসহ নানা জাতের সুমিষ্ট আম।
আম চাষী সাদরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী এখন গাছে গাছে স্প্রে করছি আর গাছের গোড়া খুড়ে পানি দিচ্ছি। আগে সার দিয়েছিলাম। গতবার গাছে গাছে মুকুল কম ছিলো। এ বছর কিছু দিন থেকে গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেেেছ। তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরার বরন্দ্র এলাকায় এবার কৃষি বিভাগের উদ্ভাবিত নতুনজাতগুলোতেও ভাল মুকুল এসেছে। সব মিলিয়ে ভাল ফলন পাওয়া যাবে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষী গোলাম মোস্তফা বলেন,‘গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রচলিত পুরাতন আম গাছের চেয়ে নতুন নাবিজাতের গাছে মুকুল বেশি ছিলো। তবে এবছর জেলার পুরাতন আম গাছ বা নতুন আম গাছে সমান ভাবে মুকুল আসছে। এয়াড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলে সম্প্রসারিত নাবিজাতের আম বাগানগুলো মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে বাড়ছে বাগানের পরিমাণও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘সার-কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি সব কিছুরই মূল্য বাড়ছে। যার কারণে চাষিদের পরিচর্যা খরচ বেড়েছে। চাষিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও তারা স্বস্তি পাবে।’
এদিকে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান আম চাষিদের উদ্দেশ্যে বলেন- যেসব গাছে ৪ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি সাইজের মুকুল বেরিয়েছে অথচ ফুল ফুটেনি সেইসব গাছে ১টি কীটনাশকের সঙ্গে ১টি ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পারে। এর পর গুটি যখন মটরদানার সমান হবে তখন আরেকটি স্প্রে করা যাবে। 



চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন-জেলার ৫ উপজেলায় ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম গাছ রয়েছে ২৮ লাখ ১৯ হাজার ১শটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমগাছে মুকুল আসার সময়কাল ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ গাছ মুকুলিত হয়েছে। আশা করছি শতভাগ গাছ মুকুলিত হবে এবং এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও ভালো হবে। গতবার অফ ইয়ার হওয়ায় কিছুটা কম হয়েছিল কিন্তু এবার অনইয়ার হওয়ায় ভালো হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩