চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-নির্বাচন> ঘরের লোকই ক্ষমাসীন দলের প্রার্থীদের দুঃশ্চিন্তার কারণ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের উপ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের প্রচারণা জমে উঠেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাইরে মূলত আওয়ামী লীগের দু’ বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় এখন পর্যন্ত সামনে এসেছে। স্বল্প মেয়াদের সংসদ সদস্য হওয়ার এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও উত্তাপ আছে ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগের ঘরের মধ্যে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের ঘরের লোকই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে মূলত প্রতিদ্বন্দিতা করছেন জেলা যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে মূল লড়াই করছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এ আসনে প্রার্থী রয়েছেন গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যও। 



বিএনপি দলীয় দু’ সংসদ সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ হারুন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ দু’টি সংসদীয় আসন শূন্য হয়। এরপরই শুরু হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মাত্র দু’ জন প্রার্থী হওয়ার আবেদন করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী হতে চান দেড় ডজন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি জামায়াত বিহীন এই উপ নির্বাচনে প্রার্থী হন ৯ জন। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে আওয়ামীলীগের আব্দুল ওদুদ  (নৌকা), স্বতন্ত্র  জেলা যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি সামিউল হক লিটন (আপেল) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফের) কামরুজ্জামান খান (টেলিভিশন) রয়েছেন। চাঁপইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট) আসনে আওয়ামীলীগের জিয়াউর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (লাঙল), জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফের) নবীউল ইসলাম নবী (টেলিভিশন)।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দু’ আসনের উপ নির্বাচনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বদ্বিতায় থাকলেও মূল লড়াই হচ্ছে দুটি আসনে মোট ৪ জনের মধ্যে। এই চার জনই আওয়ামী লীগ ঘরোনার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করা জেলা যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি সামিউল হক লিটন। মাঠ ঘুরে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটনকে ‘রসদ’ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের ওদুদ বিরোধী একটি অংশ। এর বাইরে আওয়ামী লীগ বিরোধীরাও রয়েছেন লিটনের সঙ্গে। 



এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‘আড়ালে’ প্রতিদ্বন্দিতা করছেন দু’ আওয়ামী লীগ নেতা। এরা হচ্ছেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এবং গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চু। তবে, নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে মূল লড়াইয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার।
নির্বাচনকে ঘিরে ‘ঘরের লোকই’ দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগও নড়েচড়ে বসেছে। নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন এবং পরে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দির নেতৃত্বে একটি টিম চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের নেতৃত্বে পৃথক টিম চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে গেছেন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে সাংগঠনিক কর্মসুচি করেছেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের স্ব স্ব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করে দলীয় প্রার্থী জন নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আওয়ামীলীগের হয়ে যারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করছেন আর যারা তাদেরকে (বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে) সাহায্য করছেন উভয়ের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থ্যা নেওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএস কামাল হোসেন সংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে বলেন ‘দলের সকল নেতা-কর্মীদের নৌকার পে কাজ করতে হবে।দলের পদ পদবি নিয়ে কেউ নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
অন্যদিকে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে দিনরাত প্রচারণা অংশ নিয়ে ভোটারদের নানান প্রতিশ্রুতি প্রদান করছেন। গণ সংযোগের পাশাপাশি পথসভাও করছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩ আসনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘ আমি সাধারণ মানুষের পাশেই সব সময়ই ছিলাম, গত নির্বাচনে পরাজিত হবার পরও মানুষের পাশেই আছি। গত চার বছরে যে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড হাওয়ার কথা থাকলেও নানা করণে থমকে আছে, সেসব কাজ তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার চেষ্টা করবো’। তিনি বলেন, ‘এক বছর সময় কম হলেও তিনি যেহেতু এর আগে সংসদ সদস্য ছিলাম, সেহেতু আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে থমকে থাকা উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করবো’।
অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামীলীহের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন বলেন, ‘ জনগনের সাড়া ও চাপের কারণেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হতে পারলে মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করবো, সেই সাথে সরকারি যে সুযোগ সুবিধা আসবে তা সবার জন্য সমানভাবে বন্টন করবো, কোন ধরনের স্বজনপ্রীতি থাকবে না আমার কাজে’।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জিয়াউর রহমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে এ আসনে থাকা আওয়ামীলীগের দুই বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ও খুরশিদ আলম বাচ্চু সেবা করার সুযোগ চেয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এদিকে, নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জাসদ মনোনয়ন জমা দেয়ার পর তা বাতিল হলে জাসদ নৌকা প্রতিককে সমর্থন দিয়েছে। জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ জাসদ যেহেতু ১৪ দলীয় জোটের অংশ তাই, আমাদের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষেই কাজ করবে’।
উল্লেখ্য, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপ নির্বাচনে ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ করা হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন। ১৮০টি ভোট কেন্দ্রের ১২৩০টি ভোট ক আছে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন। এই আসনে ১৭২টি ভোট কেন্দ্রের ভোট ক আছে ১২৪০টি।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩