চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের বিস্তৃণ এলাকাজুড়ে চলছে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গন। ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নেয় শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়ন থেকে সদরের নারায়ণপুর ইউনিয়নের দীর্ঘ প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। পদ্মার পেটে মানুষের ভিটামাটি ও হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি করেন পদ্মার তীরবর্তী মানুষ।
সরজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়; নদী ভাঙন আগে হলেও বেশ কযেকদিন ধরে আগ্রাসী পদ্মার ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ফলে গ্রাস করেছে ঐতিহ্যবাহী পাকা নারায়নপুর হাই স্কুলসহ প্রায় আড়াই’শ বসত বাড়ি ও হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। এখনও হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাবমেরিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বাড়ি ঘর, হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, সরকারি ও বেসরকারি বহু স্থাপনা।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই ইউনিয়নে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার পদ্মা পাড়ের মানুষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছে; ভারতের গঙ্গা পদ্মা হয়ে ঢুকেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে। জেলার তিনটি নদীতে জুলাই-এর শেষে পানি বৃদ্ধি শুরু হলেও পদ্মায় ব্যাপক হারে পানি বাড়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। আর ভাঙ্গনের শুরুটাও তখনই। পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও কমার ‘লীলাখেলায়’ ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নেয়, শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়ন থেকে সদরের নারায়ণপুর ইউনিয়নের দীর্ঘ প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।
শিবগঞ্জের মনোহরপুর কূপপাড়া থেকে পন্ডিতপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫শ মিটার এলাকায় দেখা দেয় ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের শুরুতে জিও ব্যাগ না ফেললেও সেখানকার বাসিন্দারা নিরাপদে সরে যাওয়ার পর মনোহরপুরের পন্ডিতপাড়া এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয় হয়েছে বলে জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে নদীর পানি কমার সাথে সাথে পদ্মা ও মহানন্দার মহোনায় হঠাৎ করেই সদরের দেবিনগর এলাকার হড়মায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়ন থেকে সদরের নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভাঙন রোধে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু করেছে পাউবো।
পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা সাদ্দাম আলী বলেন; ‘প্রতি বছরেই হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর, ভিটামাটি, আবাদি জমি পদ্মা গিলে খাচ্ছে। নদীর ভাঙন এতোটাই তীব্র যে নারায়নপুর মানচিত্রে থাকবে কিনা তাও জানিনা। দিনদিন নারায়রপুর সংকুচিত হচ্ছে। ভাঙনে প্রতিবছরই পদ্মার তীরবর্তী মানুষ বাড়িঘর সরিয়ে এপার থেকে ওপারে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে নারায়নপুরের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদী ভাঙনরোধে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের দাবি জানান পদ্মা পাড়ের এ বাসিন্দা।’
নারায়নপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন; ‘প্রতি বছরই সদরের নারায়নপুর ও শিবগঞ্জের পাঁকায় ভাঙন দেখা দেয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভাঙনের তীব্রতা বেশি। এ দুই ইউনিয়নে হুমকিতে রয়েছে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাদি জমি, মানুষের ঘরবাড়ি।’
তিনি আরও বলেন; ‘দ্রুত ভাঙন রোধ না করা গেলে সরকারের প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে পল্লী বিদ্যুতের সাবমেরিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বহু স্থাপনা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন; ‘দশ রশিয়া থেকে বত্রিশ রশিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ভাঙনটা খুব তীব্র। ভাঙনরোধে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে চর পাঁকার পয়েন্ট থেকে ৩৩০ টি জিও টিউব ও ১ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২