চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌষের শেষে রাতে হটাৎ শিলাসহ বৃষ্টি
আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বুধবার রাতে পৌষের শীতের মাঝে হটাৎ মুশলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক শিলাও পড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলায় এই বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। শীতের মাঝের বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূলসহ সাধারণ মানুষ।
পৌষের শেষের এই শিলা বৃষ্টির কারণে আমের মুকুল ও ফসল নিয়ে ক্ষতির শংকা চাষিরা করলেও কৃষি বিভাগ বলছে এ বৃষ্টিতে আমের মুকুলের ক্ষতি নয় বরং আরও ভাল করবে।
এদিকে শিলাবৃষ্টির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রাতে আবুল কালাম আজাদ নামে তার নিজের ফেসবুকে ‘প্রচুর শিলাবৃষ্টি হলো। সবচেয়ে ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি। চর পাঁকা, শিবগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ’ লিখে কয়েকটি ছবি আপলোড করে পোস্ট দেন।
আলিম নামে একজন তার ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার রানিহাটি গ্রামের প্রচন্ড শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। আল্লাহ তুমি সবাইকে হেফাজত করো’ লিখে ছবি পোস্ট দেন। ছবিতে অনেক গুলো শিলাবৃষ্টি জমে আছে দেখা যাচ্ছে।
আজ রাতের শিলাবৃষ্টির কথা স্মরণ থাকবে বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিলাবৃষ্টিসহ তার নিজের ছবি ও ভিডিও পোস্ট দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, দিনভর মেঘ রোদের লুকোচুরি খেলার পর সন্ধ্যার দিকে এক পশলা হল্কা বৃষ্টি হয় কয়েকটি এলাকায়। এরপর রাত সাড়ে ৯ টা থেকে ১০ দিকে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে মুশলধারে বৃষ্টি হয়। প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিটের বৃষ্টির সময় ব্যাপক শিলাও পড়ে। কোন কোন এলাকায় ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত শিলার স্তর জমে যায়।
জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানিহাটি, রামচন্দ্রপুর, ছত্রাজিতপুর, মহারাজপুর, বারঘরিয়া, রামজীবনপুর, বাবুপুর, নয়ালাভাঙ্গা, বালিয়াডাঙ্গা, চর পাঁকাসহ বিভিন্নস্থানে শিলা বৃষ্টি হয়েছে। তবে সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি।
রামচন্দ্রপুর হাটের মাসুদ রানা জানান, বিকেল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল। সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু রাত সাড়ে নয়টা বাজলেই শুরু হয় ব্যাপক শিলা বৃষ্টি। চলে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে। এতে আমাদের সরিষা জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রামজীবনপুর গ্রামের বাবু আলী জানান, সন্ধ্যার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। পরে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শুরু হয় শিলা বৃষ্টি। প্রায় ২০ মিনিটের শিলা বৃষ্টিতে বাড়ির আশপাশ ভর্তি হয়ে যায়। শিলা বৃষ্টি এর আগে কখোনো এত বেশি দেখিনি আমি। এলাকাবাসী এই শিলা বৃষ্টিকে অলৈাকিক ঘটনা মনে করছেন।
চাঁপাইনব্গঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, গেল ৪ মাস থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বৃষ্টি হয়নি। এই বৃষ্টির ফলে আমের মুকুল যেগুলো ফুঁটছিলনা। এই বৃষ্টিতে সেগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ ফুঁটতে সহায়ক হবে। তিনি আরো জানান, রাতে সদর উপজেলায় ও শিবগঞ্জের বেশ কিছু স্থানে শিলা বৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামীকাল (আজ) রোদ যদি না ওঠে তাহলে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আমের নয়, কৃষকের ক্ষেতে এখন মুশর, মটর, গম, ভূট্টাসহ বিভিন্ন শাক সবজি রয়েছে। ক্ষতির পরিমান এখন বলা সম্ভব নয়। কাল সকালে মাঠে গিয়ে তদন্ত করে বিস্তারিত বলতে পারবো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৩ জানুয়ারি, ২০২২