মায়ের মত ফুলচানও মারা গেল ট্রেনে কাটা পড়ে


মায়ের মত ফুলচানও মারা গেল ট্রেনে কাটা পড়ে। সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন ফুলচান। ফুলচানের মা জোলেশান বেগম ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে গরু আনতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান।
ফুলচানের চাচাতো ভাই কেতাবুল জানান, ফুলচানের মা জোলেশান বেগম ১৯৯৩ সালের দিকে গরু আনতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। তারপর ফুলচানরা অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। ফুলচানের দুই ছেলে এক মেয়ে। ফুলচান মাছ ধরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেই সংসার চালাতেন।
রেল লাইনের পাশের গ্রাম আলীনগর গিয়ে দেখা যায় এলাকায় শোক ও স্বজনদের কান্নায় ভারী পরিবেশ।
ট্রেনে কাটা আরেক জন শেহের আলী। একই এলাকার নিহত ফুলচানের ভাতিজা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্ধ্যায় ডিম বিক্রি করতেন। শেহের আলীরও তিন সন্তান। এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে মেহেদী হাসান এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, ছোট ছেলে জায়েদ হাসান এবার এসএসসি পাস করেছে।
জাহেদ হাসান বলেন, ‘আব্বা বাসস্ট্যান্ডে ডিম বিক্রি করেই আমাদের সংসার চালাত। মাঝেমধ্যে রাতে মাছ ধরতে যেত। গতকাল মাছ ধরতে গিয়েছিলো। সকালে শুনি ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা মারা গেছে।
প্রতিবেশী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুটা ছেলেকে পড়ালেখা করানো আর সংসার খরচ চালিয়ে বাড়িটা করতে পারেনি শেহের আলী। কোনো রকমে থাকত। ওই ছিল পরিবারটার একমাত্র উপার্জনম, এখন পরিবারটা অথৈ সাগরে পড়ে গেল। ছেলে দুটাও আয়-উপার্জন করা শিখেনি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল্লাহ জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ঈশ^রদির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ৬ ডাউন রাজশাহী মেইল কমিউটার ট্রেনটি হাজির মোড় এলাকায় অনির্ধারিত রেলক্রস করার সময় একটি ভটভটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ভটভটিতে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আলীনগর মহল্লার মৃত রইস উদ্দীনের ছেলে সেহের আলী (৪৫), আব্দুল গনির ছেলে ফুলচান আলী (৫০) ও ঝিলিম ইউনিয়নের কেন্দুল গ্রামের মানিক চানের ছেলে ভটভটি নাইমুল হক (৩৫) মারা যান।
এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান বলেন, ‘দুর্ঘটনা যে স্থানে ঘটেছে সেখানে অবশ্যই রেলের গেট থাকা দরকার ছিল। আমি বিষয়টি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে জানিয়েছি, যেন হাজির মোড়ে রেলের গেট দেয়া হয়।
অন্যদিকে, আলীনগরের মাছ ব্যবসায়ী সেহের আলী ও ফুলচানকে বিকেল সাড়ে ৪ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের খালঘাট গোরস্থানে নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। অন্যজন নাইমুলকে আমনুরার একটি গোরস্থানে দাফন করা হয়।  
চাঁপাইনবাবগঞ্জ–রাজশাহী রেলপথে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন পার হতেই আলিনগর উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় প্রথম রেলক্রসিং। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ পথ দিয়ে ট্রাক-বাসসহ অন্য যানবাহন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে।
এই ক্রসিং পার হয়ে কিছু দূরেই হাজির মোড় ও বিদিপুর মোড়। এই সড়ক দিয়ে আশপাশের জনপদে যাওয়ার পাকা সড়ক। হাজির মোড় ও বিদিপুর মোড় এলাকায় রেলক্রসিংয়ে রেলের গেট ও গেটম্যান দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৪ জানুয়ারি, ২০২২