বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্য সহায়তা


‘পরথম আলোর ইসকুলের মতন হামারঘে কেহু খেয়াল রাখে না। কেহু সাহায্য করেনা। এ করোনা ভাইরাসের লাইগ্যা যখুন ইসকুল-কলেজ বন্ধ হয়্যা গ্যাল, হামারঘে মরদদের কাজ-কাম বন্ধ হয়্যা গ্যাল, তখন খুব কষ্টে পড়্যাছিনু। কিন্তু এই পরথম আলোর ইসকুল ওইসময় হামরাকে দুবার খাওয়ার দিয়াছে। আইজ আবার দিল। এখনতো লকডাউনও চলছে। কাজ-কাম নাই। এসব চাইল, পোলাও চাইল, ডাইল, ত্যাল, চিনি, সেমাই পাইনু। এ্যাতে যে কী আনন্দ লাগছে, বুইল্যা বুঝাইতে পারুম না। আবার ভাইরাসের লাইগ্যা মাস্কও পাইনু। পতিবার এসব খাওয়ার দিবার সময় মাস্ক দেয় এ ইসকুল। এ্যাতে কইর‌্যা খাবারও পাইনু আবার ভাইরাস থাইক্যা সাবধানে থাকতে মাস্কও পাইনু। পরথম আলোর লাইগ্যা অনেক ভালোবাসা দিনু।’ খাদ্য সহায়তা পেয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার এসএসসি পরীক্ষার্থী ললিতা টুডুর মা ময়না মুরমু।  
রোববার বেলা ১১টার দিকে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় সামাজিক দূরত্ব মেনে বিদ্যালয়ের মাঠে তিন দফায় এই ্উপহারসামগ্রী দেয়া হয়।
উপহারসমাগ্রী হিসেবে  ৩১৮ জন শিক্ষার্থীকে চার কেজি ভাতের চাল, এক কেজি করে আতপ চাল, চিনি, ডাল, লবন, এক লিটার সয়াবিন তেল, ২০০ গ্রাম লাচ্চা সেমাই, ৫০ গ্রাম গুড়া দুধ, ৩৫ গ্রাম গরম মশলা, একটি মাখার সাবান, এক প্যাকেট ডিটারজেন্ট পাউডার ও একটি করে মাস্ক দেয়া হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারি ও বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাসকে ঈদ উপহার হিসেবে পোশাক দেয়া হয়।
গ্রাম্য মোড়ল কার্তিক কোল টুডুর সভাপতিত্বে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, জাতীয় পর্যায়ে কৃষি পদকপ্রাপ্ত ফলচাষি মতিউর রহমান, ঘুরে ঘুরে বিদ্যাদানকারী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরিকুল ইসলাম, সমাজসেবী আমিনুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, গ্রাম্য মোড়ল লগেন সরেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন, বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সাদা মনের মানুষ কানাই চন্দ্র দাস, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। এতে সহযোগিতা করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ মাহমুদ, সাহিত্য সম্পাদক শিরিনা খাতুন, মানবসম্পদ সম্পাদক সোনিয়া খাতুন প্রমূখ।
খাদ্যসামগ্রী উপহার পেয়ে চতুর্থ শ্রেণির  শিক্ষার্থী সারমিন খাতুনের মা সুমেরা বেগম বলেন, হামরা পদ্মা নদীতে সব হারাইয়্যা এ বনের কাছে আশ্রয় লিয়্যাছি। আমার পাঁচ মাইয়ার মইধ্যে দুটার বিহ্যা দিয়াছি। বাকি তিনট্যা এ ইসকুলে পড়ে। সংসারে একমাত্র ওর বাবা খাইট্যা টাকা আনে। কুনুমতে সংসার চলছিল। কিন্তু এ ভাইর‌্যাস সব শ্যাষ কইর‌্যা দিয়াছে। এখন ঠিকমতন কাম পাওয়া যায় না। কী কষ্টে যে দিন কাটে হামারঘে! কিন্তু এ ইসকুল হামরাকে খুব ভালোবাসে। এবার দিয়্যা তিনবার খাওয়ার সামগ্রী দিল। ঈদমুখে এসব খাওয়ার পাইয়্যা কী যে আনন্দ লাগছে তা বইল্যা বুঝাইতে পারবনা। পরথম আলো ও ইসকুলকে অনেক ধন্যবাদ।
উপস্থিত গ্রাম্য মোড়ল ও অভিভাবকরা জানান, প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালাটি শুধু বিপদের সময় 
শিক্ষার্থীদের খাবারই দেয় না। এরআগে বিদ্যালয়ের সুন্দর পোশাকও দিয়েছে। করোনাকালে শিা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিকরা শিার্থীদের পড়ালেখা চালু রাখতে নানামুখী কাজ করে আসছে। লকডাউনের মধ্যেও শিকরা শিার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সপ্তাহে একদিন করে পাঠদান করে আসছে। এতে  শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা কিছুটা হলেও সচল থাকছে। এজন্য আলোর পাঠশালার কাছে  শিক্ষার্থী-অভিভাবক সকলেই ঋণী। এ বিদ্যালয়, প্রথম আলো ট্রাস্ট ও সামিট গ্রুপের প্রতি অনেক ভালোবাসা জানান তাঁরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৯ মে ২০২১