১২ ঘন্টার ব্যাবধানে শিবগঞ্জ আওয়ামী লীগের দু’ কমিটি অনুমোদন অতঃপর স্থগিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অর্ন্তগত শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটি অনুমোদন নিয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ১২ ঘন্টার মধ্যে পৃথক পৃথক দু’ কমিটি অনুমোদন দেয়ার পর রাতেই তা স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানান বির্তক।
১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বিশাল উপজেলা শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৪ বছর আগে। ওই সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে এ্যাড আতাউর রহমান শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর্জা শাহদাত হোসেন খুররমকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। এর আগেও এ্যাড. আতাউর রহমান শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও ৩ বছরের পুর্ণাঙ্গ কমিটি আটকে আছে ৪ বছর ধরে। সম্মেলনের পর পুর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের চেষ্টা করা হলেও দলীয় আভ্যন্তরিণ কোন্দলের কারণে তা অনুমোদন হয়নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় বেশ কয়েক দফা আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত আকারে তা বাস্তবাযন হয়নি। ওই সূত্র জানায়, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্ব নানা মেরুকরণের পর শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দীন মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পুর্ণাঙ্গ কার্য নির্বাহী কমিটি অনুমোদন দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দীন আহম্মেদ শিমুলের উপস্থিতে ৪ বছর আগে সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ্যাড. আতাউর রহমানকে রেখে এই কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে বিগত কয়েক বছর ধরে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সংগঠনকে সুসংহত করা এবং প্রভাব বিস্তার করা সৈয়দ নূরুল ইসলাম পক্ষ ‘হোচট’ খান। অনুমোদন পাওয়া কমিটিতে নূরুল পক্ষের অনেক প্রভাবশালী নেতাই বাদ পড়েন। কমিটি অনুমোদনের পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সৈয়দ নূরুল ইসলাম পক্ষের শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের একনেতা এবং জেলা যুবলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের দু’ নেতা শুরু করেন তৎপরতা। তৎপরতার অংশ হিসেবে প্রথম কমিটি অনুমোদনের ১২ ঘন্টার মধ্যে রাত ১১ দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দীন মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ অনুমোদন দেন আরেকটি কমিটি। পরের কমিটিতে গোলাম রাব্বানীকে সভাপতি ও এ্যাড. আতাউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক রেখে প্রায় ২৫/২৬টি পদে পরিবর্তন এনে অনুমোদন নেয়া হয়। ওই সূত্র জানায়, প্রথম অনুমোদন নেয়া কমিটিতে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বাদ রাখা হলেও পরের অনুমোদন নেয়া কমিটিতে বাদ রাখা হয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কারিবুল হক রাজিনকে।
পাল্টাপাল্টি কমিটি অনুমোদনের নাটকীয় ঘটনাকে ঘিরে বির্তক চরমে উঠলে ১১ মে’র তারিখেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যৌথ স্বাক্ষরে এক পত্রের মাধ্যমে অনুমোদন করা দু’ কমিটিকেই স্থগিত করেন।
যৌথ স্বাক্ষরের ওই পত্রে বলা হয়, ‘ গত ১১/০৫/২০১৯ ইং তারিখে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যে ২টি কমিটি অনুমোদন করা হয়েছিল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কমিটি ২টি স্থগিত করা হলো’।
এব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দীন মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ অনুমোদনের জন্য শিবগঞ্জ উপজেলা কমিটি আমার কাছে উপস্থাপন করা হলে অসুস্থ্যতার কারণে তা নিবিড়ভাবে পর্যব্ক্ষেণ না করেই অনুমোদন করে ফেলি। পরে জানতে পারি যে, গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগি নেতাদের কমিটিতে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রেক্ষিতে পাল্টা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এখন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দু’ কমিটিই স্থগিত করা হয়েছে। শীগ্রই সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১২-০৫-১৯

,