স্বর্ণ কন্যা রোকেয়ার পরিবারে চলছে আনন্দের বন্যা

সবার একটা স্বপ্ন থাকে, তবে সে স্বপ্ন অনেক সময়ই অপূর্ণ থেকে যায় নানা কারনে। তবে যারা সংগ্রামী, শতকষ্টের মাঝে থেকেই নিজের স্বপ্নকে জয় করেন ঠিকই, তেমনি একজন স্বপ্নজয়ীর নাম স্বর্ন কন্যা রোকেয়া খাতুন। নিজের ইচ্ছাশক্তিই তাকে পৌছে দিয়েছে স্বপ্নের চুড়ায়। দেশের ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম উজ্বল করা রোকেয়ার ঘরে আরো একটু আনন্দের উপলক্ষ্য ঘটেছে কদিনে। বয়সের ভারে কøান্ত রোকেয়ার রিক্সাচালক বাবাকে আর রিক্সা চালাতে হবে না, তিনি এখন নিজ বাড়িতেই একটি গো-খাদ্যের দোকান চালু করবেন। আর তার এই দোকান চালুর জন্য একটি দোকান ঘর নির্মান ও পুজি হিসাবে প্রায় ১ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক।
স্বপ্নজয়ী রোকেয়ার জন্ম শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বাগদুর্গাপুর  নিরালা গুচ্ছগ্রামে। বাবা মনতাজ আলী পেশায় রিক্সাচালক । রোকেয়ার পড়ালেখা প্রায় শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়েই গিয়েছিলো, রিক্সা চালক বাবার সামান্য উপার্জনে যেখানে সংসার চালানো দায়, সেখানে মেয়ের আবদার পূরণ কষ্টসাধ্যের ব্যাপার। কিন্তু শতকষ্টের মাঝেও রোকেয়া এগিয়ে গেছে তার স্বপ্ন পূরনে। রোকেয়া জানায়, অর্থের অভাবে একপর্যায়ে তার লেখাপড়ার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, এসময় বিদ্যালয়ের শিকগন তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁদের সহযোগিতা না পেলে বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে পারতো না রোকেয়া।  এসএসসি পাশের পর ২০১৪ সালে রোকেয়া ভর্তি হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জুডো কারাতে একাডেমীতে। জুডো কারাতের প্রশিক বাবলুজ্জামানের কাছে হাতে খড়ি। এরপর উচ্চতর প্রশিনের জন্য ঢাকায় যায় রোকেয়া। মার্সাল আর্টের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জিতেছেন স্বর্ণ পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার। এ পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে ২০ টি খেলায় অংশ গ্রহন করে, ১১টি স্বর্ণ পদক জিতেছেন।
গত ২রা সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোভিয়েত ইউনিয়নের কিজিকিস্থানে মাস রেসলিং ওয়াল্ড কাপ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে ২৮টি দেশের প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দলের একমাত্র সদস্য রোকেয়ায় ব্রঞ্চ পদক পায়। তবে তার কিজিকিস্থানে যাওয়ার পথটিও সহজ ছিলো না, সেই সময় তার যাত্রার ব্যায়ভার বহনে এগিয়ে আসেন চাঁপাইনবাবঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম। তিনি সেই সময় ৬০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এদিকে রোকেয়ার ব্রোঞ্জ পদক লাভের খবর দৈনিক ভোরের পাতা, ভোরের কাগজ ও সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর তা নজরে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ডঃ চিত্র লেখা নাজনীনের। তিনি জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন।

রোকেয়ার পারিবারের অর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে রোকেয়ার বাবার বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য একটি দোকান ঘর নির্মান ও কিছু পুজি দেওয়ার কথা চিন্তা করেন। জেলা প্রশাসকের নিকট বিষয়টি জানতে পেরে এরফান গ্র“পের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এরফান আলী ৫০ হাজার টাকা, শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কারিবুল হক রাজিন ৩০ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসকের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়া দোকান ঘর তৈরি করার জন্য ২ বান্ডিল ঢেউটিন সহ অন্যান্য আসবাবপত্রেরও ব্যবস্থা করা হয়।
রোকেয়ার বাবা রিক্সাচালক মনতাজ আলী জানান, ৬০ বছর বয়সে রিক্সা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। আমার এ কষ্ট লাগবে মাননীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় যে অবদান রাখলেন তা আমার কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। রোকেয়াও তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এ প্রবাদটি আজ সত্য হল।
এব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ডঃ চিত্র লেখা নাজনীন জানান, রোকেয়ার মত প্রতিভাবান মেয়েকে সাহায্য করতে পেরে আমি নিজেও স্বস্তিবোধ করছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক জানান, রোকেয়া দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হলেও তিনি দেশে এবং বিদেশে পদক প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে উজ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ মোঃ সাজেদুল হক সাজু/ ১৫-১০-১৮