আজ ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস ❀ পদ্মা চারিদিকে শুধু ধু ধু বালুচর

ফারাক্কার কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে দিনে দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরের মানুষের জীবন হুমকিতে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে মরুময়তা আর বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায় ঘর বাড়ি ও ফসলী জমি। আর এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও নদী তীরবর্তী মানুষদের রার্থে নদী খননের কথা বলছেন পরিবেশবিদরা।
জানা গেছে, ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে পদ্মা। ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং সেই বছরে ২১ এপ্রিল থেকে ফারাক্কা বাঁধ চালু হয়। এরপর থেকেই বদলে যেতে থাকে এই নদীর গতিপথ। এক সময় সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত এই নদী ক্রমেই ভাঙতে থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি, চরবাগডাঙ্গা, নারায়নপুর, পাঁকা, উজিরপুর ও দেবীনগর ইউনিয়নের অনেক এলাকা। আর ভাঙন কবলিত এসব এলাকা পরিণত হয় ধুধু বালুচরে। নিয়ন্ত্রিত পানি প্রবাহের কারণে একাধিক চ্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়ে পদ্মা। যা এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
চরবাগডাঙ্গার ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বর্ষাকালে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে জেলার বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি ও বসতভিটা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্যা নেচারের সমন্বয়কারী রবিউল হাসান ডলার বলেন, ফারাক্কার বাঁধ এবং উজান থেকে প্রতিবছর পলি আসায় পদ্মা এখন মৃত। এক সময় শুশু ও ঘড়িয়ালসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ছিল। পদ্মার ৪/৫ টি চ্যানেল প্রবাহিত হওয়ায় এখন মূল নদী চেনা দায় হয়ে পড়েছে। পদ্মা শুকিয়ে যাবার কারণে জীববৈচিত্রের উপর যেমন হুমকি, তেমনি পদ্মা নদী তীরবর্তী মানুষ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবেশ ও স্থানীয় লোকজনের উপর মারত্মক প্রভাব পড়বে।তাই নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, পানির স্তর নীচে নেমে গিয়ে পদ্মা ৪/৫ টি চ্যানেলে বিভক্তের কারণে বর্ষাকালে পানির প্রবাহ চ্যানেলগুলোতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আর ভাগ হওয়ার কারণে দু’পারে ভাঙনের কবলে পড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জকে রা করতে হলে পদ্মা নদীতে রা করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী পানির নায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাঙন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রা করা যাবে।
তিনি আরো জানান, বিশ্বে বিভিন্ন নদীর মধ্যে পদ্মা পলিবাহিত হিসেবে ৩য় অবস্থানে এবং এ কারণে ফারাক্কা ব্যারেজের ১৫ কিমি ভাটিতে অর্থাৎ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে ২৫/৩০ মিটার পলির স্তর জমেছে।
লংমার্চে প্রত্য অংশগ্রহণকারী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম রেজা বলেন, ভারতের সাথে বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের অনেক উন্নতি হলেও; অজ্ঞাত কারণে পানির নায্য হিস্যার তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় একতরফা নদীর পানি প্রত্যাহারের দাবিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে তোলার পরার্মশ দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ফারাক্কার অভিমূখে লংমার্চের নেতৃত্ব দেন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক কানসাট রাজবাড়ী মাঠে গিয়ে এ লংমার্চ শেষ হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৬-০৫-১৮