র‌্যাবের জালে ধরা পড়ল এনএসআই-এ চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণাকারী সুমন ও রিমন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কালীতল এক নম্বর গলির একটি মেসে অভিযান চালিয়ে এনএসআই-এ চাকরি দেয়ার নাম করে প্রতারণা করা চক্রের দু’ হোতাকে আটক করেছে র‌্যাব। আটক দু’জন নিজেদের এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। মঙ্গলবার রাতে এনএসআই-এর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব চাঁঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আটককৃতরা হচ্ছে শিবগঞ্জ উপজেলার চক হরিপুর  গ্রামের বাবলু হোসেনের ছেলে একরামুল হক সুমন ওরফে এম সুমন আলী এবং একই উপজেলার চকনাধরা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে রেজাউল করিম রিমন। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তুল, ল্যাপটপ, বিভিন্ন সিমকার্ড, এনএসআই মহাপরিচালক, এনএসআই এ∙িকিউটিভ অফিসার, বিআরটিএ অফিসের সীল, এনএসআই নিয়োগের ভুয়া নিয়োগপত্রসহ আরও কিছু বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীল ও ভুয়া কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
বুধবার বিকেলে গণমাধ্যমকে র‌্যাব ৫-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মোহাম্মদ সাঈদ আব্দুল্লাহ আল-মুরাদ জানান
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সময় একরামুল হক সুমনের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানাধীন বারঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রীতম গোস্বামীর ছেলে পিনাক গোস্বামীর পরিচয় হয় এবং তাদের মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান হয়। এরপর উভয়ের মধ্যে মোবাইলে আলাপচারিতা হত। প্রায় দেড় বছর পর সুমন পিনাককে ফোন দিয়ে বলে ‘দীর্ঘদিন বাহিরে থেকে বর্তমানে এলাকায় এসেছি। তোমার সঙ্গে দেখা করবো’। প্রেক্ষিতে দু’জনের দেখা হলে সুমন জানায় সে বর্তমানে এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স) এ চাকুরী করে এবং নিজেকে একজন এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার হিসাবে পরিচয় দেয়।
কিভাবে চাকুরী পেল পিনাক’র এমন জিজ্ঞাসায় সুমন জানায় ০৫ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকুরি পেয়েছে সে। ওই সময় পিনাককে  জানায় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিবে। এজন্য তাকে রক্ত পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র প্রস্তুত করার পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক কাগজপত্র সুমনের কাছে জমা দেয়। পরবর্তীতে চাকুরী প্রত্যাশী পিনাক সুমনের চাহিদামতে তার চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর-২৪০১৫১২৭০২ এ গত ০৪/১২/১৬ ইং তারিখে ৩০,০০০/-ত্রিশ হাজার টাকা, ৩১/০৭/১৭ ইং তারিখে ২৫,০০০/-পঁচিশ হাজার টাকা এবং তার কিছুদিন পরে শহরের বাতেন খাঁর মোড়ে রাত্রী আনুমানিক ২০:৩০ ঘটিকায় হাতেহাতে ৪৫,০০০/-পয়তাল্লিশ হাজার টাকা প্রদান করে। এ প্রক্রিয়ায় একটি পরীক্ষার ভুয়া প্রবেশ পত্র দিয়ে সর্বমোট ১ লাখ ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিষয়টি নিয়ে পিনাকের সন্দেহ হলে সে সুমনের ভাড়াবাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ১নং গলি কালিতলাস্থ মোসলেমা খাতুন এর বাড়ীর নীচতলায় গিয়ে টাকা ফেরত চায়। এসময়  সুমনের সহযোগী রিমন উপস্থিত ছিল। সুমন টাকা ফেরত দিয়ে টালবাহানা করলে পিনাক র‌্যাব ক্যাম্পে অভিযোগ করে। পিনাকের দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব একরামুল @ সুমনের ফেসবুক পেইজে প্রবেশ করে এবং সেখানে একরামুলের স্ট্যাটাসে ফিল্ড অফিসার এনএসআই ও ফিল্ড অফিসার ডিজিএফআই দেখতে পায়। র‌্যাব কর্তৃক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডিজিএফআই এবং এনএসআই অফিসে তাদের দুজনের সম্পর্কে তথ্য যাচাই করে জানতে পারে উপরোক্ত নামের কোন ডিজিএফআই বা এনএসআই সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে নেই।
তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে তাদের দু’জনকে আটক করা হয়।

র‌্যাব জানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন ও র‌্যাবের অফিসারদের সামনে ধৃত আসামীদ্বয় দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ভূয়া এনএসআই ও ডিজিএফআই অফিসার সেঁজে মানুষের নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে।
আটক দু’জনকে মামলাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৬-০৫-১৮