‘বেঁচে থাকার জন্য সহায়তা চাইছি, কোটিপতি হবার জন্য নয়’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মেডিক্যাল মোড়। তখন বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়নি। মেডিক্যাল মোড়ের একপাশে শ’খানেক মানুষের জটলা। দূর থেকে মনে হচ্ছে একটা বস্তুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন সব মানুষ। কোন রকমে ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল একটা রিক্সা-ভ্যানে শুয়ে আছেন একটা মানুষ। তাকে ঘিরেই শত উৎসুক চোখ। কৌতুহলী ওই সব মানুষের কাছে ভ্যানে শুয়ে থাকা মানুষটি ঠিক যেন ‘ম্যাজিসিয়ান’। মানুষের ভাবনার সেই ‘ম্যাজিসিয়ান’ মানুষটি ভ্যানে শুয়েই সবার দিকে চোখ ফিরাচ্ছেন। নানান মানুষ নানান প্রশ্ন করছেন, সেই সঙ্গে মন্তব্যও। মানুষের ভিড় আর প্রশ্নবানগুলো তার কাছে যেন লজ্জারও। ওই সময় ক’জনের সামান্য ‘অর্থ সহযোগিতা’ (ভিক্ষার টাকা) পাওয়া মানুষের ভাবনার সেই ‘ম্যাজিসিয়ান’ ভ্যান চালককে তাগাদা দিলেন তাড়াতাড়ি ওই স্থান ত্যাগের। যেমন তাগাদা, তেমন কাজ। ভ্যান চালক মানুষের ভিড় ঠেলে তাকে নিয়ে উঠলেন মুল সড়কে।
সড়ক পথেই ‘ম্যাজিসিয়ান’ এর পরিচয় জানা সেইসঙ্গে আলাপচারিতায় বেরিয়ে আসে দুঃখগাঁথা।
মানুষের ভাবনার ‘ম্যাজিসিয়ান’ হচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধি বাইরুল ইসলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বড়গাছী গ্রামের দরিদ্র শ্রমিক মোহাম্মদ রবু’র ছেলে সে। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি বাইরুল ুদ্রাকৃতির মানুষ। এখন তার বয়স ৩০ বছর। বয়স বাড়লেও শরীর বাড়েনি। অন্যদের চেয়ে আলাদা। হাত পা দিয়ে অন্যদের মত কাজ করার শক্তি নেই তার। হাত ও পাগুলো খুব ছোট ছোট। তবে, কথা বলতে পারেন সাবলিলভাবেই।
বেদনাকাতর হয়ে বললেন, ‘র্দীঘ ৩০ বছর ধরে বাবা-মার বোঝা হয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। অন্যের উপর ভরসা করে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। প্রসাব পায়খানার জন্য বাবা- মার সহযোগিতা নিতে হয়। এ জীবনটা বড়ই যন্ত্রণার’।
জানা গেল বড়গাছির ভ্যান চালক রবু’র ২ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে বাইরুল সবার বড়। বাবা ভ্যান চালিয়ে আবার কখনও অন্যের কামলা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বাইরুলের পিতা রবু বলেন, ‘আমার অন্যান্য সন্তানরা স্বাভাবিক হলেও বাইরুল জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি। ৪ মেয়ের ২টির বিয়ে দিয়েছি। অন্য ২টি স্কুলে পড়ে। ছেলে ২টি ছোটটি পড়ে মাদ্রাসায়। ভ্যান চালিয়ে আর কামলা খেটে কোন রকমে সংসার চালাই। কষ্টের সংসারে সহায়তা বলতে বাইরুলের নামে সরকারের বরাদ্দ প্রতিবন্ধি ভাতা’।
তিনি জানান, ভাতা হিসেবে প্রতিমাসে পাওয়া যায় ৬ শ টাকা করে। তা দেয়া হয় তিন মাস পরপর। এর বাইরে সমাজের আর কোন সহযোগিতা নেই তার সন্তানের জন্য।
তিনি বলেন, ‘ভিক্ষাবৃত্তি খারাপ। ভিক্ষা করে টাকা এনে দেয়। আবার কোন কোন সময় তার ভ্যানের সঙ্গে আমিই থাকি। খুব খারাপ লাগে। কিন্তু উপায়তো নেই’।
ভ্যানে এলাকা ঘুরে ঘুরে জীবনের জন্য ভিাবৃত্তি করতে হওয়া বাইরুল বললেন, সারাদিনের ভিার আয় দিয়ে আমার ও পরিবারের দিন চলে। আল্লাহই প্রতিবন্ধি করেছে এখন তার উপরই ভরসা’।
প্রতিবন্ধি জীবনে বাইরুল আরো অনেক বছর বেঁচে থাকতে চান। তিনি বললেন, ‘ সমাজে কত মানুষ কত সুযোগ পাচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়েই বেঁচে থাকার জন্য সহায়তা চাইছি, কোটি পতি হওয়ার জন্য নয়।আর ১০ জনের মত না হোক, যেন সে খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকতে পারি’।
এ ব্যাপারে জামবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুসফিকুল ইসলাম তারার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি বাইরুলকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। তাকে স্বাবলম্বী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৮-০১-১৮

,