পুলিশ আসামী মামলার পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রত্যাখান

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানায় পুলিশি হেফাজতে থাকা রিমান্ডের আসামি ‘ভুয়া ডাক্তার’ মাহফুজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় ওসিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলায় পুলিশের দেয়া চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে আদালত। চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মামলার বাদীর দেয়া নারাজি আবেদন গ্রহণ করে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুস সালাম এই নির্দেশ প্রদান করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার জননী ক্লিনিকে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার জগদিসপুর গ্রামের মাহফুজুর রহমান ভুয়া চিকিৎসক সেজে নিজেকে ‘ডাক্তার মাসুদ রানা’ পরিচয় দিয়ে নাচোলের এক স্কুল শিক্ষার্থী নাহিদা খাতুনের অপারেশন করে। মাহফুজের চিকিৎসায় ওই শিক্ষার্থী গত ১৯ জুলাই মারা যায়। এঘটনায় নাহিদার পিতা নাচোল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরের দিন ওই মামলায় নাচোল থানা পুলিশ মাহফুজুরকে গ্রেফতার করে। হত্যা মামলার আসামী হিসেবে পুলিশ হেফাজতে ‘রিমান্ডে’ থাকা অবস্থায় গত ২৬ জুলাই থানা হাজতে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশের দাবী, ২৬ জুলাই দুপুর সোয়া একটার দিকে থানার পুরুষ হাজত খানার টয়লেটে নিজের প্যান্ট ছিড়ে দরজার ফাঁকা বিমে ঝুলে আত্মহত্যা করে আসামি মাহফুজুর। পরে টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে নিহত মাহফুজের স্বজনদের দাবী চাহিদামত ঘুষের টাকা না দেয়ার কারণেই পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছে মাহফুজুর। এই ঘটনায় নাচোল থানার তৎকালীন ওসি আনোয়ার হোসেন, এসআই আব্দুল বারিক, এসআই আহসান হাবিব, এসআই জহুরুল, এএসআই মোঃ সামসুল, ডিউটিরত কনস্টেবল চাঁনজারুল, রিমান্ডে নেয়া মামলার বাদী নাসির উদ্দিন এবং তার ভগ্নিপতি জাফর ইকবালসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে গত ৬ আগষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ‘২০১৩ সালের হেফাজত মৃত্যু (নিবারণ) আইন’-এ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই শাহিনুর আলম মৃধা।
গত ৫ অক্টোবর আদালতে এ মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তৎকালিন তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত শাখার ওসি রেজাউল হাসান। চুড়ান্ত প্রতিবেদনে ‘থানা হাজতে আসামি মাহফুজের মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা’ উল্লেখ করে মামলার আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু পুলিশের এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখান করে সোমবার আদালতে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী শাহিনুর আলম মৃধা।
বাদির নারাজি আবেদনের শুনানীকালে বাদী পক্ষের আইনজীবী আকরামুল ইসলাম পুলিশের দেয়া চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ১২টি বিষয়ে আপত্তি আদালতের নজরে এনে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন। পুলিশের দেয়া চুড়ান্ত প্রতিবেদনকে ‘খেয়াল খুশি মত দেয়া’ উল্লেখ করে বলা হয়, পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত পুলিশ করায় তারা ন্যায় বিচার পায়নি। তাছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল হাসান মামলার বিষয়ে বাদী ও স্বাক্ষীদের কোন বক্তব্য নেননি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আব্দুস সালাম নারাজি আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ৩০-১০-১৭

,