প্রতিমা তৈরী করেই স্বাবলম্বী আশিষ

উপযোগিতা থাকার পরেও চাকুরী না জুটলেও হতাশ হবার কিছু নেই। হয়তো কিছুদিন সময় লাগে, কষ্ট ভোগ করতে হয়। নিজের বুদ্ধি ও যোগ্যতা দিয়েই বেকারত্ব ঘুচানো যায়। কথাগুলো বললেন স্নাতক শ্রেীণ পাস করে চাকুরি না পেয়ে প্রতিমা  তৈরীর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া আশিষ কুমার সিনহা। 
আশিষের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নে চৌকা মনাকষা গ্রামে। আশিষের পিতা শশাংক শেখর সিনহা পেশায়  একজন দর্জি।
আশিষ কুমার সিনহা বলেন, ‘গরীব পিতার আয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব ছিল না। তাই ছোট থেকে পিতার কাছে প্রতিমা তৈরীর প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে সব ধরণের প্রতিমা তৈরী করতে শিখে ফেলি। জীবনের প্রথম ১৯৯৯ সালে বিনোদপুর ইউনিয়নের আইড়ামারী গ্রামের একটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরী করে ২ হাজার ৩ শ টাকা উপার্জন করি’। তিনি জানান, ওই বছরই সাড়া সৃষ্টি হয় এবং ৭ হাজার টাকা উপার্জন হয়।
তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসারে পিতা লেখাপড়ার খরচ ও ৬ জন সদস্য বিশিষ্ট সংসার চালাতে অক্ষম হওয়ায় আমাকে হাল ধরতে হয় সংসারের। তাই কিছু দিন আমার লেখাপড়া বন্ধ থাকে। ২০০৩ সালে আনক কারিগরি কলেজে ভর্তি হয়ে ২০০৫ সালে  এইচএসসি পাশ করি। তারপর আবার কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ রেখে ২০১০ সালে বিনোদপুর স্নাতক মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১২সালে স্নাতক পাশ করি’।
আশিষ জানান, প্রতিমা তৈরীর মাধ্যমে উপার্জিত টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। সেই সঙ্গে লেখাপড়া। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে আমার পিতা ভীষন অসুস্থ হওয়ায় একদিকে অসুস্থ পিতার চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে সংসার চালানোর কারনে আর উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাইনি’।
এ সময় বিভিন্ন স্থানে সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করে লিখিত পরীক্ষায় টিকেও একসংগে ১০/১২লাখ সংগ্রহ করতে না পারায় চাকুরী হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজকেই পেশা হিসাবে গ্রহন করেছি।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাড়িতে থেকেই কালি, লক্ষী, স্বরসতী, কার্তিক, গণেশ, শিব, রাধা কৃষ্ণসহ বিভিন্ন পূজা প্রতিমা তৈরী করে বিভিন্ন মন্দির কমিটির কাছে বিক্রি করি। এ থেকে মোটামুটি ভালই উপর্যন হয়। প্রতিমা শিল্পী আশিষের সঙ্গে এখন কাজ করে আরো ৩/৪ জন। জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ প্রতিমা শিল্পীর পুরস্কাও জুটেছে আশিষের ঘরে। প্রতিমা তৈরীর ব্যবসাটি মৌসুমী হলেও কাজ চলে চার মাস ধরে। আর তা থেকে যা আয় হয় সেটাও কম নয়। বাকী সময় আশিষ ব্যস্ত থাকে ব্যানার সাইনবোর্ড লিখার কাজের মধ্যে। চাকরী না পাওয়া হতাশা গ্রাস না করা আশিষ এখন স্ববলম্বী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ০৩-১০-১৬

,