হটাৎ বন্যায় পানি ঢুকেছে শতাধিক বাড়িতে তলিয়েছে ফসলের মাঠ

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ব্যাপক নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। পদ্মা ও মহানন্দায় হঠাৎ পানি দ্রুত বেগে বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নে ইতিমধ্যেই বন্যা দেখা দিয়েছে। ফসলের মাঠে থাকা পাকা আধাপাকাও  ফসল   তলিয়ে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়ন ঘুরে জানা যায়, দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে অনেক এলাকার মানুষই পানি বন্দি হয়েছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উচু রাস্তায় বা শহরে কোন স্বজনের বাড়িতে, কেউ খোলা আকাশের নিচেও দিন কাটাচ্ছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, দূর্লভপুর, পাকা, উজিরপুর ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়য়ে ঢুকেছে বন্যার পানি। দূর্লভপুর ইউনিয়নের আইয়ুল বিশ্বাসের গ্রামের সাদিকুল ইসলামের  সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন, পদ্মার ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তুলে বসবাস করছিলাম।  কয়দিন থেকে পানি বাড়ছিলো, বাধ দিয়ে কোন রকমে বাড়িতেই থাকছিলাম, কিন্তু গতকাল আর রুখতে পারিনি, বাড়ির ভিতরে পানি ডুকে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তার উপরে পরিবার নিয়ে আছি’’।
দেখা যায়, বাড়িতে মাচার উপরে ভাত রান্না করছেন সাদিকুলের স্ত্রী হানিফা আখতার মিরা। আর তার এক পাশেই মাচার উপর  বাধা আছে ছাগলগুলো।
সাদিকুল ইসলাম জানালেন, সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা তারা বা অন্য যারা এই গ্রামের বানভাসী আছেন কেউ পাননি।
দুর্লভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব রাজু জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দ্রুত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দূর্লভপক্ষ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গাইপাড়া, মনোহরপুর, ঘুঘুডাঙ্গা, ডাকাতপাড়া,হাসানপুর, খাগচাপাড়া, সোনাপুর, ৯নং ওয়ার্ডের নামোজগনাথপুর, দোভাগী, আইয়ুব বিশ্বাসের গাঁ সহ প্রায় ১০টি গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে গেছে।  এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিশেষ করে মাঠে থাকা অর্থকারী ফসল হলুদ পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত  কোন ত্রানের ব্যবস্থা হয়নি। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।
পাকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, পাকা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় পানির নীচে তলিয়ে গেছে। নিশিপাড়া,বিশ্বাস পাড়া, হলদিবনা, দশরশিয়া, বিশরশিয়া,লক্ষীপুর,চরলক্ষীপুর,ভাটাপাড়া,ডাইড়াপাড়াসহ প্রায় ২০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে, অন্তত ২০ হাজার মানুষ কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে। উচু নিরাপদ স্থান না পাওয়ায় অনেকেই বাঁশের মাচা তৈরী করে পানির উপরেই থাকছে।
মনাকষা ইউনিয়নের রাঘববাটি, হঠাৎপাড়া. তারাপুর,  ঠুঠাপাড়া, মুনসীপাড়া, সিংনগর, চরসিংনগর, ভবানীপুর, শ্যামপুর, চরহাঙ্গামীসহ প্রায় ১০টি গ্রামের প্রায় ১৫হাজারের মত মানুষ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মনাকষার খড়িয়াল গ্রামের  কৃষক নাজিম উদ্দিন জানান, আমার ৪ বিঘা হলুদ ও ২০ বিঘা বরই বাগান পানির নীচে তলিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, এক বিঘ হলুদের আবাদ করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা ছিল  খরচ বাদে ২৫হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করতে পারবো। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সবটুকুই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পার  চৌকার এনামূল হক ২বিঘা, মোবিন উদ্দীন ৩ বিঘা, রকিব আলী ২বিঘা, বাক্কার আলীর ৫বিঘা হলুদ বন্যার পানির নীচে তলিয়ে গেছে  বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার আমিনুজ্জামান জানান, এ মৌসুমে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৪২৫হেক্টর জমিতে হলুদের ও ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। অনেক জমিতেই প্রায় ধান কাটা হয়েগেছে, তবে বন্যা আরো বাড়লে হলুদের জমিতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাহিদুল আলম জানান,‘‘এখনই আমরা বন্যা বলছি না, তবে  গত ২৪ঘন্টায় পদ্মা ১৫ সেন্টিমিটারের বেশি করে পানি বাড়ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে, আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার  অধিকাংশ এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করছি।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ২৫-০৮-১৬

,