৫দিন নিখোঁজ থাকার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফাহিম ধরা পড়ল হামলাকারী হিসেবে

মাদারীপুর কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যার উদ্দ্যেশে হামলার ঘটনায় আটক চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার দ্বারিয়াপুর গ্রামের গোলাম ফারুকের ছেলে ফাইজুল্লাহ ফাহিমের জন্মও ঢাকায়। বেড়ে উঠাটাও ঢাকাতেই। ঢাকার বাড়ি থেকে গেল ৫ দিন আগে ‘নিখোঁজ’ ফাহিম ধরা পড়ল কলেজ শিক্ষকের হামলাকারী হিসেবে। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ঢাকায় ফাহিমের পিতা গোলাম ফারুক ঢাকায় বসবাস করে আসছেন।মাঝে মধ্যে পৈত্রিক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দ্বারিয়াপুরে আসলে তিনি তার চাচা এমদাদুল হকের বাড়িতে উঠতেন। ফাহিম বাড়ি আসলে নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন। শান্ত প্রকৃতির ছেলে ফাহিমকে অনেকটাই ইসলামিকমনা মনে হতো প্রতিবেশিদের।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার পর দ্বারিয়াপুর এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, ফাহিমের পৈত্রিক নিবাস দ্বারিয়াপুর হলেও তার ও তার পিতার এলাকার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিলনা। তার পিতা গোলাম ফারুক দু’ দশকেরও বেশি সময় আগে কক্সবাজারের মেয়েকে বিয়ে করার পর থেকে ঢাকায় বসবাস করেন। গোলাম ফারুকদের ৬ ভাইয়ের মধ্যে একভাই মারা গেছেন। শুধু একটা ভাই এমদাদুল হক পৈত্রিক বাড়িতে থাকেন। অন্যরা কেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকেননা। ঈদের সময় বা আত্মীয় স্বজন মারা গেলে মাঝে মধ্যে তারা দ্বারিয়াপুরে আসতেন।
দ্বারিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী বলেন, ‘ছেলেটার (ফাহিমের) পিতা বিয়ে করার পর থেকেই ঢাকায় থাকেন। কালেভদ্রে বাড়ি আসতেন। ছেলেটি জন্মেছে ঢাকায়। গোলাম ফারুক স্ত্রী একছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। গেল ৫/৬ বছরে ছেলেটিকে এলাকায় দেখেছি বলে মনে হয়না। এলাকার মানুষও তাকে সেভাবে চিনেননা’। তিনি বলেন, ‘ ফাহিমের পিতা-চাচারা কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমনটা জানা নেই। প্রকাশ্য কোন রাজনীতির সঙ্গে দেখা যায়নি’।
ফাহিমের পৈত্রিক নিবাসের কাছাকাছি বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দু’তিন বছর পর ফাহিম বাড়ি আসলেও এলাকায় তেমন বেশি দিন থাকতেননা। শান্ত প্রকৃতির ফাহিম চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়িতে থাকার সময় নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন।
ফহিমের চাচি সুলেরা বেগম বলেন, ‘ ওরাতো তেমন বাড়ি আসতোনা। দু’/তিন বছর পর জমি জমা বা অন্যান্য প্রয়োজনে বাড়ি আসতো। আমাদের বাড়িতেই থাকতো। কিন্তু কোন খারাপ কিছু বুঝতে পারতামনা। নামাজের সময় এলেই সে মসজিদে চলে যেতে’। তিনি বলেন, ‘ বাড়িতে কালরাতে ( বুধবার রাতে) পুলিশ আসার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি। ওই রাতেই ফাহিমের পিতাকে ফোনে ঘটনা জানালে সে চমকে উঠে। এবং জানায় যে, ফাহিম ৫ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। থানায় জিডিও করা হয়েছে। বাড়ি থেকে হারিয়ে থাকা ছেলে ধরা পড়ল অপরাধী হিসেবে’। অবশ্য তিনি মন্তব্য করেন, ভাল ছেলে বন্ধুদের সঙ্গ পেয়ে বিপথগামী হতেও পারে।  
প্রতিবেশি তারেক রহমান বলেন, ‘ দু’একাটা ঈদের সময় ছেলেটিকে দেখেছি। তাও আবার ছোট অবস্থায়। এখন দেখলে হয়তো চিনতেই পারবোনা। এই পরিবারের ছেলে বা এই ছেলে যে এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে ভাবতেই পারা যায়না। আমরা কল্পনাও করিনি’।
এদিকে, ঘটনার পর ফাহিমের চাচা এমদাদুল হককে পুলিশ থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার বশির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলনা। এখন পর্যন্ত এঘটনায় স্থানীয় অন্য কারো জড়িত থাকার বিষয়টি পাওয়া যায়নি। তবে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে’।
উল্লেখ্য, মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও পুরোহিত রিপন চক্রবর্তী কলেজের বাসায় বুধবার তিন যুবক তাঁকে কুপিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষকের চিৎকারে কলেজগেট এলাকার লোকজন দ্রুত এগিয়ে এসে ফয়জুল্লাহ ফাহিমকে আটক করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৬-০৬-১৬