কণিকা হত্যাকান্ডে দোষ স্বীকার করে ঘাতকের জবানবন্দি ❀ ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থী ও জনতা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর কলেজ মোড়ে স্কুল ছাত্রী কণিকা রানী ঘোষ হত্যাকান্ডে নিজেকে দোষী স্বীকার করে শনিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে বখাটে আব্দুল মালেক। এদিকে, মালেকের হাসুয়ার কোপে কণিকা রাণী ঘোষ নিহত ও তিন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ ও হামালাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাযহারুল ইসলাম জানান, কণিকা রানী ঘোষ হত্যাকান্ডের ঘটনায় শুক্রবার রাতে কণিকার মা অঞ্জলি রানী ঘোষ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল মালেককে শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জুডিশিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল অধিকারীর আদালতে তোলা হয়। তিনি বলেন, ‘ আদালতে অভিযুক্ত আব্দুল মালেক ১৬৪ ধারায় নিজেকে দোষী স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছে’।
ঘাতক আব্দুল মালেককে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, কণিকা হত্যাকান্ড ও তিন শিক্ষার্থী বখাটে আব্দুল মালেকের হাসুয়ার আঘাতে হাওয়ার ঘটনায় ঘটনাস্থল মহিপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।   
সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর সড়কের মহিপুর বাজারে প্রতিবাদ জানাতে সমবেত হয় এলাকার শত শত সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থী। সকাল ১০ টা থেকে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত মহিপুর অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দেড় ঘন্টা ধরে চলা সমাবেশ ও মানববন্ধনে ওই এলাকার ১৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন।
এসময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরাফুল হক আজিজি, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নু, বেহুলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান  শিক্ষক শফিকুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, মাদকাসক্ত বখাটে মালেকের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সেই মালেকের হাসুয়ার কোপে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থী কণিকা রানী ঘোষকে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরো তিন মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা হমলাকারী আব্দুল মালেকের ফাঁসির দাবি করেন। সমাবেশে বক্তারা মাদকের সহজ লভ্যতার প্রভাবেই এ ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে এলাকাকে মাদকমুক্ত করার মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীসহ সবাইকে নিরাপদে জীবন-যাপনের সুযোগ কওে দেয়ার দাবি জানান।
এছাড়াও একই দাবিতে শনিবার সকাল ৮ টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। এই সময় বক্তব্য দেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক মোফাখখারুল ইসলাম।
অন্যদিক, শুক্রবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহত কণিকা রানী ঘোষের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত ১০টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা তর্তিপুর শ্মশান ঘাটে কণিকার সৎকার সম্পন্ন করা হয়।
উল্লেখ্য, শুকবার সকাল ৯টার দিকে গোবরাতলার মহিপুর কলেজ মোড়ে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে মহিপুর এসএম দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী কণিকা রানী ঘোষ, তারিন আফরোজ, তানজিমা আক্তার ও মরিময় খাতুনকে এলোপাতাড়িভাবে হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে দিয়ার ধাইনগর গ্রামের আব্দুল লতিফের বখাটে ছেলে আব্দুল মালেক। এ ঘটনায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় কণিকা। আহত তারিন ও তানজিমা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং মরিয়ম ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৮-০৫-১৬