ইউপি নির্বাচন > দলত্যাগের প্রতিশোধ নিতে মাঠে নেই বিএনপি

আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চারটিতেই মাঠে নেই বিএনপি। সাংগঠনিক দূর্বতলতার পাশাপাশি দল ত্যাগ করে নৌকার প্রার্থী হওয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতেই প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এক্ষেত্রে বিএনপি’র সমর্থন যাচ্ছে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগে, জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্রের আড়ালে থাকা জামায়াত প্রার্থীর দিকে। বিএনপি এটিকে ‘কৌশলগত’ উল্লেখ করলেও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই চার ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারেনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে মেয়াদোর্ত্তিণ না হওয়া কারণে এ পর্যায়ে ১৩ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মনোনয়ন চুড়ান্তের সময় ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে বারঘরিয়া, মহারাজপুর ও নারায়ণপুর ইউনিয়ন বাদে ১০ টি ইউনিয়নে প্রার্থী মনোনায়ন দেয়া। পরে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সুন্দরপুর ইউনিয়নের প্রার্থী।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রার্থী থাকা ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ঝিলিম, দেবীনগর ও বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন এই তিনটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীরা শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। বাকী ৬টিতে প্রার্থীদের অবস্থান অনেকটাই নাজুক। ওই সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল ও নেতৃত্বের উপর নানামুখি মামলার কারণে মাঠ গোছাতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় অর্ধডজন বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুল ওদুদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে চলে আসেন। এলাকায় শীর্ষনেতাদের অনুপস্থিতির পাশাপাশি অন্যান্য নেতাদের দলত্যাগের কারণে বেকায়দায় পড়েন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
তৃতীয় দফায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ১৩ ইউনিয়নে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা হলে স্থানীয় বিএনপি কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেন। প্রথম দফায় তারা তিনটি ইউনিয়নের প্রার্থী ঘোষণা বাদ রাখে। পরে যোগ হয় আরো একটি।
দলীয় সূত্র জানায়, চরাঞ্চলের নারায়ণপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এ্যাড. আলমগীর কবীর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার পর এবার নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হয়েছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি’র শক্তিশালী প্রার্থী থাকার পরেও দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দলের মূল¯্রােতের সমর্থন যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল উদ্দীন হোদার প্রতি। এখনে বিএনপি নেতা শরিয়তুল্লাহ লাহু স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন নির্বাচনী তৎপরতায় তার সরব উপস্থিতি নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের রাজনৈতিকভাবে বহুল আলোচিত ইউনিয়ন মহারাজপুর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি ও জেলা আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ হারুনের বাড়ি এই ইউনিয়নে। এই মহারাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি সদর উপজেলা যুবদলের সভাপতি ছিলেন। মহারাজপুরে এজাবুল হক বুলি’র শক্ত অবস্থানের বিপরীতে আরেক শক্ত প্রার্থ রয়েছে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. নজরুল ইসলাম সোনা। মহারাজপুরে বিএনপি প্রার্থী সমর্থন ঠেলে দিয়েছেন সোনা’র দিকে। তবে, এখানে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জোনাব আলী।
মহারাজপুরের পাশ্ববর্তী বারঘরিয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক পাওয়া হারুনুর রশিদও এক সময় বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বারঘরিয়ায় গত নির্বাচনে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত নাইমুল হকও কয়েক বছর আগে আওযামী লীগে চলে আসেন। বারঘরিয়ায় বিএনপি নেতাদের দলত্যাগে বেকায়দায় পরা বিএনপি এবার এই ইউনিয়নে প্রার্থী দেননি। তারা সমর্থন জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা জামায়াত নেতা আবুল খায়েরকে। এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না থাকায় বিএনপি’র সমর্থন পাচ্ছেন, সুন্দরপুর ইউনিয়নের জামায়াতের প্রার্থী ইফতেখার শাহীন। এই সুন্দরপুর ইউনিয়নে গত নির্বাচনে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নিবাচিত চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি আওয়ামী লীগে যোগদিলে নেতৃত্বের সংকটে পড়ে বিএনপি।
চার ইউনিয়নে বিএনপি’র ছাড় দেয়া এবং অন্যান্য ইউনিয়নে ‘শক্তিশালী’ প্রার্থী দিতে না পারায় সংগঠনের দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতাকে দায়ি করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। মহারাজপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি নেতা জোনাব আলী আক্ষেপ করে বলেন,‘ ভাল নেতৃত্বের দাম নেই। সবক্ষেত্রেই ব্যক্তি রাজনীতি হচ্ছে। আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম দল বাদ দিয়ে ব্যক্তির দিকেই সমর্থন যাবে। সেই কারণে দলীয় মনোনয়নই চাইনি। স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি’।
বিএনপি নেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বণিক সমিতি’র সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে অসংখ্য ত্যাগি নেতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও দলের এই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং সব ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারেনি’।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মতি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ আমরা কৌশলগত কারণে চার ইউনিয়নে প্রার্থী দেয়নি। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন, সমর্থন পাওয়াদের তালিকায় একজন বিদ্যোহী আওয়ামী লীগ, একজন জাতীয় পাটি ও দু’জন জামায়াত নেতা রয়েছেন’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২১-০৪-১৬