আমার সাংবাদিকতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া .............জহুরুল ইসলাম
আমি জহুরুল ইসলাম। নামটি দেখে মনে করার কোন কারন নেই যে আমি বাংলাদেশের এক সময়ের শ্রেষ্ট ধনী সেই জহুরুল ইসলাম। সবাই সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার জহুরুল ইসলাম বলে জানে। চারি পাশে চলাচল করতে গিয়ে কখন যে ২৫ শে পা দিয়েছি জানতে পারিনি।
আমার জীবনের ২৫টি বছর কিভাবে কেটে গেল আজ তা বলতে চাই। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট। ইচ্ছে তাড়া করে ফিরে বড় কিছু হওয়ার। কিন্ত বাধা হয় অর্থ। দারিদ্রতার কারনে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠানে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান থেকে হাটিহাটি পা পা করে গ্রাজোয়েসন শেষ করি। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোও আমার কাছে প্রিয় ছিল। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমার মনের মধ্যে একটি বড় ধরনের ইচ্ছা বা আকংখা ছিল। কোনদিন কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবো না? সময় নিজের মতো চলে যায়। সে সুযোগ হয়ে উঠেনি কোন দিন। আমি কোন দিন হাল ছাড়ি নাই। একদিন না একদিন বড় প্রতিষ্ঠানে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আল্লাহ আমাকে পড়াশোনার করার সুযোগ করে দিবেন। বড় ভাইদের মুখে শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে ছাত্র জীবনের অর্ধেক বাকি থাকে। সে সত্য কথা। শৈশবের কিছু বলতে হয় আমাকে আজ। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত অতি কষ্টে করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। সেই সময় বাবা-মার কাছে টাকা না থাকায় মাত্র দুইটি প্যান্ট দিয়ে ৫টি বছর পার করি। ৫টি বছরের মধ্যে যে কদিন স্কুল ছুটি পেলেছি কাজ করার মাধ্যমে সময় পার করতাম। প্রথম কাজ করা শুরু করি পাটের জমিতে পাট কাটার মাধ্যমে। যা প্রতিদিন সেখান থেকে পেতাম মাত্র দশ টাকা। আমি কখনো কখনো রাজমিস্ত্রির কাজও করেছি। টাকার জন্য। এই করতে করতে এসএসসি পাশ করলাম ২০০৬ সালে। এসএসসি পরীক্ষার পর অনেক সময় ফাকা থাকে সে সময় বসে না থেকে বিয়ে বাড়িতে ভিডিও চালার কাজে নেমে পরলাম। সেখান থেকে মনে ইচ্ছা হলে সাংাবাদিক হবার। সে জগতে সাথে কম্পিউটারের সম্পর্কে আছে ব্যাস একটি কম্পিউটারে দোকানে কাজ শুরু করলাম। এর মধ্যে আমি এইচএসসি পাশ করলাম ২০০৮ সালে। কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতে করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কমিউনিটি রেডিও রেডিও মহানন্দা চালু হল এবং বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো কিছু অদজ্ঞ সাংবাদিক নিবে। তাদের যোগযোগ করলাম এবং অল্প অল্প লেখা শুরু হয়ে গেল আমার। রেডিওতে কাজ করতেই একটি এনজিও (সিএমইএস)’র মাধ্যমে ইউনিসেফের সহযোগীতায় ও দৃক/পাঠশালার শিক্ষক দ্বারা ৬ মাস ব্যাপী ফটোগ্রাফির উপর একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফি যেন আরো সাংবাদিকতায় কাছে টানা আরম্ভ করলো। গ্রাজোয়েসনে করার জন্য স্থানীয় ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ি। পড়াশোনা চলতে আছে। শুরু করলাম ছবি তোলা ও লেখালেখির কাজটিও। ঢাকার এক বড় ভাই যার নাম আমিনুজ্জামান আমিন ভাই হঠাৎ ফোন দিবে বলে তুমি না আমাকে বলেছিলে তুমি সাংবাদিকতা করতে চাও করবা কি? আমি সামনে-পেছন না ভেবেই একবাক্যে বলে ফেললাম আমি করবো। তিনি বলেন আমি ফোন দিলে তুমি ঢাকা চলে আসবে। বেশ কিছুদিন পর ফোন দিয়ে বলে আগামী ৩ তারিখ ঢাকা চলে আসো। সেদিনের তারিখটি ছিল ৩ মার্চ ২০১২ সালে। সেইদিনে প্রথম ঢাকা যাওয়া আমার। একটি মজার বিষয় সেখানে গিয়ে দেখি যে প্রতিষ্ঠান থেকে ফটোগ্রাফির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলাম সে প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ। প্রতিষ্ঠানটির নাম উৎরশঘঊডঝ। ওহঃবৎহধঃরড়হধষ একটি প্রতিষ্ঠান। ৩ মার্চ ২০১২ সালে উৎরশঘঊডঝ’র ওহ পযধৎমব আমিনুজ্জামান আমিন ভাই’র হাত ধরে ভালভাবে সাংবাদিকতা শুরু করি। পর্যায়ক্রমে ২০১২-২০১৬ সাল মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে করার করার সুযোগ পাই যেমন এসিয়ান টিভি’র জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক চাঁপাইচিত্র পত্রিকার চীফ ফটোগ্রাফার, অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকা ফযধশধঃরসবং২৪.পড়স ্ ভড়পঁংনধহমষধ.পড়স.নফ-এ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি। ভড়পঁংনধহমষধ.পড়স.নফ মাধ্যমে বাংলাদেশের বেশকিছু সুনামধন্ন জাতীয় পত্রিকায় আমার ছবি ছাপা হয়েছে। উৎরশঘঊডঝ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জার্মানির একটি অনলাইন ভিত্তিক টিভি ডয়চে ভেলে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আমার। এই প্রতিষ্ঠানটি আমাকে সম্মান, মর্যদা, ভালবাসা এবং অর্থ পাইয়ে দিয়েছে। আর অনেক সিনিয়র ভাইদের ভালবাসা আর আদর পেয়ে আজ এ পর্যন্ত এসে পৌছেছি। ২০১১ সালে গ্রাজোয়েসন শেষ করে এমএ রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। সাংবাদিকতা ও পড়াশোনা চলছে। কিন্তু সেই বড় স্বপ্নটা মাথার মধ্যে রয়ে যায়। সাংবাদিকতা করতে করতে হঠাৎ একদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র আনোয়ার হোসেন চৌধুরী (সিনিয়র বড় ভাই) আমাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবেন। আমি এক বাক্যে বললাম আমি যাবো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনলে দুর্বল হয়ে পাড়ি। ১৮ জানুয়ারী ২০১৫ইং তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বিভাগের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আসেন। সেখানে যাবার সুযোগ পাই ঐ ভাই’র মাধ্যমে। আর সেখানে গিয়ে দেখি শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে আন্তরিকতা। সে থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা শুরু করলাম ভালভাবে আল্লাহ আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিনের জন্য হলেও পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিও। তার বেশ কিছুদিন পর শুনলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইএমএসএস কোর্স চালু করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি এমএ মাহবুব ঐ কোর্সে ভর্তি হন। সে কিন্তু আমাকে বার বার ভর্তি হবার কথা বলতো। আগের সেই কথাটি আবারো মনে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবারে জন্ম আর দারিদ্রতা যেন দরজায় ঠকা মারছে। একদিন এমএ মাহবুর আমাকে তার বিভাগে নিয়ে যায় ভর্তির বিষয়ে জানার জন্য। জানতে পারলাম ৪ সেমিস্টারের এই কোর্সে ভর্তি হতে লাগবে মোট এক লক্ষ টাকা। আবারো অর্থ যেন পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। একদিকে বড় প্রতিষ্ঠান অন্যদিকে মনের ইচ্ছা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্যারদের ব্যবহার আমি মুখদ্ধ হয়ে গেলাম। এক পর্যায়ে ঐ বিভাগের চেয়ারম্যাার ডা: প্রদীপ কুমার পান্ডে স্যার এর কাছে নিয়ে যায় এবং তার অতি কাছাকাছি বসার সুযোগ আর এক সাথে চা খাওয়াটা আমার অত্যন্ত ভাললাগে। চায়ের ফাকে সে অতি সুন্দর মানুষটি বলে ফেলল আপনি ভর্তি হয়ে যায়। বাকিটা উপর অলার ইচ্ছা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি চলে আসলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আমাকে যে কোনভাবেই এই কোর্সে ভর্তি হতে হবে। টাকা জমানোর চেষ্টা শুরু করলাম। কিন্তু উৎরশঘঊডঝ-এ কাজ করা শর্তেও ঐ সময়ে টাকা না পেয়ে আমার কাছে সাড়ে সাত হাজার টাকা আর আমার একবন্ধু কাছে সাড়ে সাত হাজার টাকা ধর করে উদ্ভোধনী ক্লাসের এক সপ্তাহ পরে ভর্তি হয় প্রথম সেমিস্টার অর্ধেক টাকা অথাৎ পনের হাজার জমা দিয়ে। সবকিছুর মুলে হচ্ছে সাংবাদিকতা। অবশেষে জীবনের ইচ্ছাটা পুরোন হচ্ছে হাটিহাটি পা পা করে। এদিকে রাজশাহী কলেজে চলছে মাস্টার্ট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ইএমএসএস কোর্সে মাস্টার্ট। আর উৎরশঘঊডঝ-এ যে সম্মানি দিয়ে থাকে সেখান থেকে চলছে আমার এই দুই প্রতিষ্ঠানের খরচ। আমাকে এই প্রতিষ্ঠান অনেক কিছু পাইয়ে দিয়েছে। আর জীবনের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসে আনন্দে চোখে পানি চলে আসল। আমি আনন্দে আটখানা। শেষ বয়সে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু আমার। আবার ঐ ব্যক্তির নাম (আমিনুজ্জামান আমিন) স্মরণ না করে পারলামা না, যার হাত ধরে সাংবাদিক জগতে আসা এবং এ পর্যন্ত পৌছে যাওয়া।
অবশেষে বড় ভাইদের সে কথাটি আমিও বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বারের জন্য হলেও পড়ালেখার সুযোগ করে নিবেন। আপনার সুযোগ না হলে আপনার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনার করার সুযোগ দিবেন। সেখানে শিক্ষার ভান্ডার রয়েছে। আর আমার জন্য সকলেই দোয়া করবেন যাতে আমি আরো উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করতে পারি।
জহুরুল ইসলাম (জহির)
ইএমএসএস চতুর্থ ব্যাচ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
আমার জীবনের ২৫টি বছর কিভাবে কেটে গেল আজ তা বলতে চাই। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট। ইচ্ছে তাড়া করে ফিরে বড় কিছু হওয়ার। কিন্ত বাধা হয় অর্থ। দারিদ্রতার কারনে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠানে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান থেকে হাটিহাটি পা পা করে গ্রাজোয়েসন শেষ করি। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোও আমার কাছে প্রিয় ছিল। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমার মনের মধ্যে একটি বড় ধরনের ইচ্ছা বা আকংখা ছিল। কোনদিন কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবো না? সময় নিজের মতো চলে যায়। সে সুযোগ হয়ে উঠেনি কোন দিন। আমি কোন দিন হাল ছাড়ি নাই। একদিন না একদিন বড় প্রতিষ্ঠানে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আল্লাহ আমাকে পড়াশোনার করার সুযোগ করে দিবেন। বড় ভাইদের মুখে শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে ছাত্র জীবনের অর্ধেক বাকি থাকে। সে সত্য কথা। শৈশবের কিছু বলতে হয় আমাকে আজ। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত অতি কষ্টে করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। সেই সময় বাবা-মার কাছে টাকা না থাকায় মাত্র দুইটি প্যান্ট দিয়ে ৫টি বছর পার করি। ৫টি বছরের মধ্যে যে কদিন স্কুল ছুটি পেলেছি কাজ করার মাধ্যমে সময় পার করতাম। প্রথম কাজ করা শুরু করি পাটের জমিতে পাট কাটার মাধ্যমে। যা প্রতিদিন সেখান থেকে পেতাম মাত্র দশ টাকা। আমি কখনো কখনো রাজমিস্ত্রির কাজও করেছি। টাকার জন্য। এই করতে করতে এসএসসি পাশ করলাম ২০০৬ সালে। এসএসসি পরীক্ষার পর অনেক সময় ফাকা থাকে সে সময় বসে না থেকে বিয়ে বাড়িতে ভিডিও চালার কাজে নেমে পরলাম। সেখান থেকে মনে ইচ্ছা হলে সাংাবাদিক হবার। সে জগতে সাথে কম্পিউটারের সম্পর্কে আছে ব্যাস একটি কম্পিউটারে দোকানে কাজ শুরু করলাম। এর মধ্যে আমি এইচএসসি পাশ করলাম ২০০৮ সালে। কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতে করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কমিউনিটি রেডিও রেডিও মহানন্দা চালু হল এবং বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো কিছু অদজ্ঞ সাংবাদিক নিবে। তাদের যোগযোগ করলাম এবং অল্প অল্প লেখা শুরু হয়ে গেল আমার। রেডিওতে কাজ করতেই একটি এনজিও (সিএমইএস)’র মাধ্যমে ইউনিসেফের সহযোগীতায় ও দৃক/পাঠশালার শিক্ষক দ্বারা ৬ মাস ব্যাপী ফটোগ্রাফির উপর একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফি যেন আরো সাংবাদিকতায় কাছে টানা আরম্ভ করলো। গ্রাজোয়েসনে করার জন্য স্থানীয় ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ি। পড়াশোনা চলতে আছে। শুরু করলাম ছবি তোলা ও লেখালেখির কাজটিও। ঢাকার এক বড় ভাই যার নাম আমিনুজ্জামান আমিন ভাই হঠাৎ ফোন দিবে বলে তুমি না আমাকে বলেছিলে তুমি সাংবাদিকতা করতে চাও করবা কি? আমি সামনে-পেছন না ভেবেই একবাক্যে বলে ফেললাম আমি করবো। তিনি বলেন আমি ফোন দিলে তুমি ঢাকা চলে আসবে। বেশ কিছুদিন পর ফোন দিয়ে বলে আগামী ৩ তারিখ ঢাকা চলে আসো। সেদিনের তারিখটি ছিল ৩ মার্চ ২০১২ সালে। সেইদিনে প্রথম ঢাকা যাওয়া আমার। একটি মজার বিষয় সেখানে গিয়ে দেখি যে প্রতিষ্ঠান থেকে ফটোগ্রাফির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলাম সে প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ। প্রতিষ্ঠানটির নাম উৎরশঘঊডঝ। ওহঃবৎহধঃরড়হধষ একটি প্রতিষ্ঠান। ৩ মার্চ ২০১২ সালে উৎরশঘঊডঝ’র ওহ পযধৎমব আমিনুজ্জামান আমিন ভাই’র হাত ধরে ভালভাবে সাংবাদিকতা শুরু করি। পর্যায়ক্রমে ২০১২-২০১৬ সাল মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে করার করার সুযোগ পাই যেমন এসিয়ান টিভি’র জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক চাঁপাইচিত্র পত্রিকার চীফ ফটোগ্রাফার, অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকা ফযধশধঃরসবং২৪.পড়স ্ ভড়পঁংনধহমষধ.পড়স.নফ-এ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি। ভড়পঁংনধহমষধ.পড়স.নফ মাধ্যমে বাংলাদেশের বেশকিছু সুনামধন্ন জাতীয় পত্রিকায় আমার ছবি ছাপা হয়েছে। উৎরশঘঊডঝ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জার্মানির একটি অনলাইন ভিত্তিক টিভি ডয়চে ভেলে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আমার। এই প্রতিষ্ঠানটি আমাকে সম্মান, মর্যদা, ভালবাসা এবং অর্থ পাইয়ে দিয়েছে। আর অনেক সিনিয়র ভাইদের ভালবাসা আর আদর পেয়ে আজ এ পর্যন্ত এসে পৌছেছি। ২০১১ সালে গ্রাজোয়েসন শেষ করে এমএ রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। সাংবাদিকতা ও পড়াশোনা চলছে। কিন্তু সেই বড় স্বপ্নটা মাথার মধ্যে রয়ে যায়। সাংবাদিকতা করতে করতে হঠাৎ একদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র আনোয়ার হোসেন চৌধুরী (সিনিয়র বড় ভাই) আমাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবেন। আমি এক বাক্যে বললাম আমি যাবো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনলে দুর্বল হয়ে পাড়ি। ১৮ জানুয়ারী ২০১৫ইং তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বিভাগের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আসেন। সেখানে যাবার সুযোগ পাই ঐ ভাই’র মাধ্যমে। আর সেখানে গিয়ে দেখি শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে আন্তরিকতা। সে থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা শুরু করলাম ভালভাবে আল্লাহ আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিনের জন্য হলেও পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিও। তার বেশ কিছুদিন পর শুনলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইএমএসএস কোর্স চালু করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি এমএ মাহবুব ঐ কোর্সে ভর্তি হন। সে কিন্তু আমাকে বার বার ভর্তি হবার কথা বলতো। আগের সেই কথাটি আবারো মনে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবারে জন্ম আর দারিদ্রতা যেন দরজায় ঠকা মারছে। একদিন এমএ মাহবুর আমাকে তার বিভাগে নিয়ে যায় ভর্তির বিষয়ে জানার জন্য। জানতে পারলাম ৪ সেমিস্টারের এই কোর্সে ভর্তি হতে লাগবে মোট এক লক্ষ টাকা। আবারো অর্থ যেন পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। একদিকে বড় প্রতিষ্ঠান অন্যদিকে মনের ইচ্ছা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্যারদের ব্যবহার আমি মুখদ্ধ হয়ে গেলাম। এক পর্যায়ে ঐ বিভাগের চেয়ারম্যাার ডা: প্রদীপ কুমার পান্ডে স্যার এর কাছে নিয়ে যায় এবং তার অতি কাছাকাছি বসার সুযোগ আর এক সাথে চা খাওয়াটা আমার অত্যন্ত ভাললাগে। চায়ের ফাকে সে অতি সুন্দর মানুষটি বলে ফেলল আপনি ভর্তি হয়ে যায়। বাকিটা উপর অলার ইচ্ছা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি চলে আসলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আমাকে যে কোনভাবেই এই কোর্সে ভর্তি হতে হবে। টাকা জমানোর চেষ্টা শুরু করলাম। কিন্তু উৎরশঘঊডঝ-এ কাজ করা শর্তেও ঐ সময়ে টাকা না পেয়ে আমার কাছে সাড়ে সাত হাজার টাকা আর আমার একবন্ধু কাছে সাড়ে সাত হাজার টাকা ধর করে উদ্ভোধনী ক্লাসের এক সপ্তাহ পরে ভর্তি হয় প্রথম সেমিস্টার অর্ধেক টাকা অথাৎ পনের হাজার জমা দিয়ে। সবকিছুর মুলে হচ্ছে সাংবাদিকতা। অবশেষে জীবনের ইচ্ছাটা পুরোন হচ্ছে হাটিহাটি পা পা করে। এদিকে রাজশাহী কলেজে চলছে মাস্টার্ট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ইএমএসএস কোর্সে মাস্টার্ট। আর উৎরশঘঊডঝ-এ যে সম্মানি দিয়ে থাকে সেখান থেকে চলছে আমার এই দুই প্রতিষ্ঠানের খরচ। আমাকে এই প্রতিষ্ঠান অনেক কিছু পাইয়ে দিয়েছে। আর জীবনের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসে আনন্দে চোখে পানি চলে আসল। আমি আনন্দে আটখানা। শেষ বয়সে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু আমার। আবার ঐ ব্যক্তির নাম (আমিনুজ্জামান আমিন) স্মরণ না করে পারলামা না, যার হাত ধরে সাংবাদিক জগতে আসা এবং এ পর্যন্ত পৌছে যাওয়া।
অবশেষে বড় ভাইদের সে কথাটি আমিও বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বারের জন্য হলেও পড়ালেখার সুযোগ করে নিবেন। আপনার সুযোগ না হলে আপনার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনার করার সুযোগ দিবেন। সেখানে শিক্ষার ভান্ডার রয়েছে। আর আমার জন্য সকলেই দোয়া করবেন যাতে আমি আরো উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করতে পারি।
জহুরুল ইসলাম (জহির)
ইএমএসএস চতুর্থ ব্যাচ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।